‘দলবাজির শিকার’ ধর্মেন্দ্রর কপালে জোটেনি সেরার পুরস্কার

বিনোদন ডেস্ক
| আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২০, ১৩:২২ | প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০২০, ১২:৩৫

যত বড় অভিনেতাই হোন না কেন, যতই প্রতিভা থাকুক না কেন, বলিউডের নক্ষত্রমণ্ডলীতে শামিল হতে গেলে দলবাজিই যে শেষ কথা, তা আর গোপন নেই। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই বলিউডে এই দলবাজি চলে আসছে। যার থেকে নিস্তার পাননি ধর্মেন্দ্রও।

ফিল্মফেয়ার ম্যাগাজিনের ট্যালেন্ট হান্টে বিজয়ী হওয়ার পর মায়ানগরীর দরজা খুলে যায় ধর্মেন্দ্রর সামনে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিযোগিতার পরই একটি ছবিতে নায়ক হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও সেই ছবির কাজ শুরু হয়নি। পরে ১৯৬০ সালে অর্জুন হিঙ্গোরানির ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন ধর্মেন্দ্র।

বলিউডে প্রথম যদি কেউ ‘গ্রিক গড’-এর তকমা পেয়ে থাকেন, তিনি হলেন ধর্মেন্দ্র। সুদর্শন চেহারার জন্য শুরুর দিকে রোম্যান্টিক ছবিতেই তাকে নিতেন পরিচালকরা। একে একে ‘সুরত অউর সিরত’, ‘বন্দিনী’, ‘অনপঢ়’, ‘পূজা কে ফুল’-এর মতো ছবিতে দেখা যায় তাকে।

কিন্তু শুধুমাত্র রোম্যান্টিক চরিত্রে নিজেকে বেঁধে রাখতে চাননি ধর্মেন্দ্র। যে কারণে ১৯৬৮ সালে স্পাই-থ্রিলার ‘আঁখে’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ছবিটি সুপারহিট হয়। মীনাকুমারী, নূতন, মালা সিংহ, সায়রা বানুর মতো নায়িকাদের সঙ্গে ধর্মেন্দ্রর জুটি পছন্দ করেন দর্শক।

একের পর এক ছবি হিট হতে শুরু করায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ধর্মেন্দ্রকে। কিন্তু সেই সময়ই ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন রাজেশ খান্না। ১৯৬৬ সালে ‘আখরি রাত’ ছবির মাধ্যমে ডেবিউ করেন রাজেশ। তার পরের বছর মুক্তি পায় ‘রাজ’। দুটি ছবিই সফল হয়।

‘আখরি রাত’ সেরা বিদেশি ছবি হিসেবে মনোনীত হয় অস্কারের জন্যও। এরপর ‘ডোলি’, ‘আরাধনা’-র হাত ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান রাজেশ খান্না। শোনা যায়, একের পর এক হিট ছবি উপহার দেয়ায় তার বাড়ির বাইরে লাইন দিতে শুরু করেন পরিচালকরা।

তাতে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজেশ খন্নার প্রভাবও বাড়তে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, সেই সময় সব বড় পরিচালকই তার সঙ্গে কাজ করতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। তাতে নিজের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেন রাজেশ খান্নাও।

শোনা যায়, সেই সময় প্রযোজক-পরিচালক এবং অনুগামী অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে নিজের একটি আলাদা দল তৈরি করেন তিনি, যাতে কোনও ভালো চরিত্র অন্য কারও কাছে না যায়। কোনও ভাবে যদি কোনও ভালো চরিত্র অন্য কারও কাছে চলেও যেত, তাহলে সেই অভিনেতার সম্পর্কে নানা কথা রটিয়ে, কাজ ভাঙিয়ে আনারও অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

রাজেশ খান্নার এই প্রতিপত্তির মধ্যে কোনও রকমে যে দুই অভিনেতা টিকেছিলেন, তার মধ্যে অন্যতম হলেন ধর্মেন্দ্র এবং মনোজকুমার। মনোজকুমার বেছে বেছে কাজ করতেন। অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাতেও হাত পাকাতে শুরু করেন। ধর্মেন্দ্র শুধু অভিনয়েই মন দেন। তবে দলবাজিতে আপত্তি ছিল তার। তাই কারও পদলেহন করার চেয়ে নিজের যোগ্যতায় কাজ পাওয়ায় মন দেন তিনি।

১৯৬৬ থেকে ’৬৯ সাল পর্যন্ত ‘অনুপমা’, ‘আয়ে দিন বাহারকে’, ‘মাঝলি দিদি’, ‘শিকার’, ‘মেরে হমদম মেরে দোস্ত’-এর মতো একঝাঁক ছবিতে অভিনয় করেন ধর্মেন্দ্র। তবে সব ছবিতেই প্রায় একই রকমের চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। তাই ১৯৬৯ সালে ‘সত্যকাম’ ছবিটি যখন তার হাতে এসে পৌঁছায়, আর ঝুঁকি নেননি তিনি। পাছে ছবিটি হাতছাড়া হয়ে যায়, তার জন্য নিজেই প্রযোজনার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।

সমাজতান্ত্রিক এবং স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তাধারার তৎকালীন ভারতীয় সমাজ সেইসময় দ্বিখণ্ডিত। ছবিতে আদর্শবাদী সত্যপ্রিয় আচার্যর চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন ধর্মেন্দ্র। তার ফলও হাতেনাতে পেয়েছিলেন তিনি। ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু ওই একই বছর মুক্তি পায় রাজেশ খান্নার ‘আরাধনা’। তাতে ধর্মেন্দ্রর কৃতিত্ব চাপা পড়ে যায়। শুধু তাই নয়, জাতীয় পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ারের মঞ্চ, দু’জায়গাতেই তাকে অবজ্ঞা করা হয়।

১৯৭৫ সালে ‘শোলে’ মুক্তি পাওয়ার আগে পর্যন্ত ‘জীবন মৃত্যু’, ‘শারাফত’, ‘গুড্ডি’, ‘সীতা অউর গীতা’, ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’, ‘দোস্ত’, ‘চুপকে চুপকে’- একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন ধর্মেন্দ্র। ‘শোলে’ ছবিতে তার অভিনয় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। কিন্তু তত দিনে তার উপর ছায়া ফেলতে শুরু করেছেন অমিতাভ বচ্চন।

১৯৭৩ সালে ‘জঞ্জির’ ছবির মাধ্যমে ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভকে পায় বলিউড। অথচ শুরুতে এই ছবিটি করার কথা ছিল ধর্মেন্দ্রর। কিন্তু চিত্রনাট্যকার সেলিম-জাভেদ জেদ ধরায় শেষ পর্যন্ত অমিতাভকেই ছবিতে নিতে বাধ্য হন প্রযোজক প্রকাশ মেহরা।

শোনা যায়, ‘শোলে’র পর ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের ক্যাম্প গড়ে ফেলেন অমিতাভ। কিন্তু শোলে ছবিতে ‘জয়’-এর চরিত্রের জন্য ধর্মেন্দ্রই যে অমিতাভের নাম সুপারিশ করেছিলেন, সেই সময় তা সামনে আসতে দেননি অমিতাভ। কয়েক বছর আগে অবশ্য সে কথা স্বীকার করে নেন অমিতাভ।

কিন্তু যাকে বন্ধু ভেবেছিলেন, তার কাছ থেকে পাওয়া আঘাত ভোলেননি ধর্মেন্দ্র। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এত বছর পর অমিতাভ মানছেন, আমিই ওর হয়ে সুপরিশ করেছিলাম। লোকে ভাববেন, বাহ্ কী মহান অমিতাভ। কই সেই সময় তো এ নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি!’

‘শোলে’র মতো মেগাহিট ছবি উপহার দেয়া সত্ত্বেও একাধিক ছবিতে দ্বিতীয় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়েছে ধর্মেন্দ্রকে। র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে সর্বদা অমিতাভের পরে রাখা হয়েছে তাকে। ১৯৮৭ সালে ‘হুকুমত’, ‘লোহা,’ ‘আগ হি আগ’, ‘ওয়াতন কে রাখওয়ালে’, ‘খাতরোঁ কে খিলাড়ি’-র মতো সাত-সাতটি হিট ছবি উপহার দেন ধর্মেন্দ্র।

কিন্তু তার সাফল্যকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি ইন্ডাস্ট্রি। দীর্ঘ পাঁচ দশকের কেরিয়ারে একবারও সেরা অভিনেতার পুরস্কার পাননি তিনি। ২০১২ সালে পদ্মভূষণ পাওয়া ছাড়া সে ভাবে স্বীকৃতও পাননি ধর্মেন্দ্র।

ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :