মেরুদণ্ডের কশেরুকা চিকিৎসায় অভাবনীয় সাফল্য

কশেরুকা মানবদেহের মেরুদণ্ডের অংশ বিশেষ। প্রকৃতপক্ষে মেরুদণ্ড অনেকগুলো কশেরুকার উপর্যুপরি বিন্যাস। কশেরুকা অস্থি এবং হায়ালিন তরুণাস্থির সমন্বয়ে গঠিত জটিল কাঠামো যা প্রজাতিভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। একে অনিয়ত অস্থি এর তালিকায় রাখা হয়। মানবদেহের মেরুদণ্ডে সর্বমোট ৩৩ টি কশেরুকা থাকে। কশেরুকার মধ্যস্থিত ফুটা দিযে মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু শরীরে প্রবেশ করে।
মানবদেহে কশেরুকার কাজ হলো জীবদেহকে ভারসাম্য প্রদান। শরীর বাঁকানো এবং চলনে সাহায্য করা। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এবার অভাবনীয় সাফল্য এসেছে যে, কশেরুকা কেটে ফেলতে হবে না। বড় আকারের কোনও যন্ত্র প্রতিস্থাপনও করতে হবে না। বড় সূচও লাগবে না। রোগী বুঝতেই পারবেন না, এমন উপায়ে এ বার স্পাইনাল কর্ড বা সুষুম্নাকাণ্ডের তীব্র যন্ত্রণা দূর করা করা সম্ভব হবে।
সুষুম্না প্রতিস্থাপনের এই বিকল্প পথের হদিশ দিলেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদরা। তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ।
কোনও ওষুধেই কমানো যায় না সুষুম্নাকাণ্ডের তীব্র যন্ত্রণা। এটা শুরু হলে মেরুদণ্ডের ভিতরের উপর থেকে নীচের অংশটুকু পর্যন্ত তীব্র যন্ত্রণার ‘স্রোত’ সব সময়ে বয়ে চলে।
উল্লেখ্য, সুষুম্নাকাণ্ড বা মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড একটি দীর্ঘ, সরু, নলাকার স্নায়ুগুচ্ছ। এটি মস্তিষ্কে অবস্থিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি সম্প্রসারণ এবং মেরুদণ্ডের ভেতরে অবস্থিত ও সুরক্ষিত। সুষুম্নাকাণ্ডের মূল কাজ মস্তিষ্ক ও প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে স্নায়ুবিক ইনপুটের সঞ্চারণ করা।
এ ক্ষেত্রে সুষুম্নাকাণ্ডের প্রতিস্থাপন ছাড়া এখন আর কোনও পথ খোলা নেই চিকিৎসকদের সামনে। এই পদ্ধতির নাম ‘স্পাইনাল কর্ড স্টিম্যুলেটর’। শরীরের ভিতরে স্নায়ুকোষগুলোকে ঢেকে রাখে যে সূক্ষ্ণ তন্তুর আবরণ, চালু স্পাইনাল কর্ড স্টিম্যুলেটর পদ্ধতিতে তার উপরে শক্ত করে চেপে ধরা হয় দুইটি ইলেকট্রোড। তার ফলে, বিদ্যুৎপ্রবাহ শরীরে গিয়ে যন্ত্রণার অনুভূতিকে আর মস্তিষ্কে পৌঁছতে দেয় না। কয়েক মিলিমিটার চওড়া সেই ইলেকট্রোড দুইটির মানবশরীরে অনুপ্রবেশ ঘটানোর জন্য মেরুদণ্ডের উপরে থাকা কশেরুকার একটি অংশ কেটে ফেলতে হয় চিকিৎসকদের। অস্ত্রোপচারের সময়। কাজটা মোটেও সহজ নয়।
আর একটি পদ্ধতি রয়েছে। তাতে ইলেকট্রোডগুলোকে আরও ছোট আকারে নেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলোর শরীরে অনুপ্রবেশ ঘটানোর জন্য ব্যবহার করা হয় বিশাল মোটা সূচ। যদিও এই পদ্ধতির কার্যকারিতা কম বলেই দেখা গিয়েছে।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে চালু পদ্ধতিগুলির অসুবিধার কোনওটিই নেই, জানিয়েছেন গবেষকরা। কশেরুকা কেটে ইলেকট্রোডের অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে না মানবদেহে। কোনও সূচেরও প্রয়োজন পড়বে না। ব্যবহার করা হবে পানি আর অন্য একটি তরল পদার্থ। তাদের চাপেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে অনায়াসেই। অনেক মানুষ মেরুদণ্ডে কশেরুকায় আঘাতের কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে। মেরুদণ্ডে কশেরুকায় আঘাত পেলে তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
(ঢাকাটাইমস/১জুলাই/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন