বঙ্গবন্ধু হত্যার পলাতক খুনিদের ফেরানো কত দূর

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
  প্রকাশিত : ১৫ আগস্ট ২০২১, ১১:২৬
অ- অ+

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায় রচিত হয়। এই রক্তক্ষরণ জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে আজও। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারের জন্য জাতিকে অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ ২১ বছর। এরপর আওযামী লীগ সরকার সব বাধা কাটিয়ে এর বিচারকাজ করে এবং মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে কিছু আসামির ফাঁসির সাজা কার‌্যকর করে। কিন্তু এখনো পলাতক আছেন পাঁচজন ফাঁসির আসামি। আর তাতে জাতির পিতা হত্যার বিচারের পূর্ণতা পাওয়ার অপেক্ষা কেবল প্রলম্বিত হচ্ছে। পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার‌্যকর করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আসামিদের পালিয়ে থাকা দেশের কিছু নিয়মের বেড়াজালে আটকা তাদের ফিরিয়ে আনার কাজ। সেসব বাধা কাটানোর চেষ্টা করছে সরকার।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বারবার বলে আসছেন, শিগগিরই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার‌্যকর হবে। দীর্ঘদিনের চেষ্টায়ও কেন তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না?

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করার ব্যাপারে শেখ হাসিনার সরকার বদ্ধপরিকর। শুধু তার সরকার নয়, আওয়ামী লীগ যত দিন বাংলাদেশে থাকবে, বঙ্গবন্ধুর অনুসারীদের একজন বেঁচে থাকলেও হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা হবে। খুনিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

এ চলমান প্রক্রিয়ার ব্যাপারে বিশদ কিছু বলতে গেলে এ প্রক্রিয়ার কিছু ব্যাঘাত হবে বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী। এই ব্যাপারে সরকারের কোনো শিথিলতা নেই। খুনিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিশন গঠনের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আলাপ-আলোচনায় এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, যারা হত্যাকা- ঘটিয়েছিলেন শুধু তারাই এই হত্যাকা-ে জড়িত নয়। এর পেছনে একটা ষড়যন্ত্র আছে এবং সেই ষড়যন্ত্রকারী কারা তাদের অন্ততপক্ষে চিহ্নিত করে দেশের মানুষের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার।’

এই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া কী হবে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত হয় জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে করোনা মহামারি শুরু হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই কমিশনের রূপরেখা, কমিশনের কার্যাবলি, কাদের নিয়ে কমিশন গঠিত হবে, সেসব দেশবাসী জানতে পাবেন।’

বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের একজন মুসলেম উদ্দিন ভারতে পলাতক রয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তাকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্রটি কেমন সহযোগিতা করছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি। এখন পর্যন্ত তার কোনো সত্যতা আমরা পাইনি।’

খুনিদের ফিরিয়ে আনার বিষযে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, পাঁচ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের নানা উদ্যোগ চলমান। প্রথা, আইনি প্রক্রিয়া- সব পথেই চেষ্টা করছে সরকার।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্ববায়ক সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আশাবাদী বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফেরত আনা হবেই। তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি এসব আসামি আমেরিকা ও কানাডায় আছে। কিন্তু ওই সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। আমাদেরও নাই, অন্য দেশেরও নাই। আমাদের দূতাবাস, মিনিস্ট্রি অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স চেষ্টা করছে।

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক এই সভাপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। বাকিদেরও দেশে এনে ফাঁসির সাজা কার‌্যকর করা হবে।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পলাতক ছিলেন সাতজন। এখন পলাতক আছেন পাঁচজন। তাদের মধ্যে এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। অন্য তিনজন খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।

এ ছাড়া পলাতক অবস্থায় ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যান ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আজিজ পাশা।

আর পলাতক আত্মস্বীকৃত খুনি আবদুল মাজেদ ২০১৯ সালে লুকিয়ে দেশে এলে গ্রেপ্তার হওয়ার তার ফাঁসির সাজা কার‌্যকর হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

এর আগে এই মামলায় গ্রেপ্তার থাকা সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে। তাদের মধ্যে বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে ধরে এনে বিচারের মুখামুখি করা হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর অন্য সব খুনির সঙ্গে আবদুল মাজেদ প্রথমে লিবিয়ায় চলে যান। এরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান তাকে সেনেগাল দূতাবাসে চাকরি দেন। ১৯৮০ সালে দেশে ফিরে আসার পর তিনি বিআইডব্লিউটিসিতে যোগ দেন। সে সময় উপসচিব পদমর্যাদায় তিনি চাকরি করেন। পরে তিনি যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে পরিচালক পদে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে খুনিদের বিচার শুরু হয়। সে সময় আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন মাজেদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যার বিচারের পথ খুলে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সংসদে দায়মুক্তি আইন বাতিলের মাধ্যমে। ওই বছরের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জনকে মৃত্যুদ-াদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদ- নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট দ্বিধাবিভক্ত রায় দেন।

২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদ- বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর ১২ আসামির মৃত্যুদ- বহাল রাখেন।

(ঢাকাটাইমস/১৫আগস্ট/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আজ আন্তর্জাতিক নির্যাতন বিরোধী দিবস
সরকারি কর্মচারীদের জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরে হচ্ছে ‘কল্যাণ ডেস্ক’
‘সুইসাইড ডিজিজ’-এ আক্রান্ত সালমান খান
১৬ দিনে ৫১ হাজার ৬১৫ হাজি দেশে ফিরেছেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা