পদ্মা সেতুর তিন বছরপূর্তি আজ, টোল আদায় আড়াই হাজার কোটি টাকা

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর তিন বছরপূর্তি আজ। ২০২২ সালের এই দিনে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু। দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হয় এই দিনে।
তিন বছরে পদ্মা সেতুতে পারাপার হয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৯২টি যানবাহন। আর এতে টোল আদায় হয়েছে ২ হাজার ৫০৪ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার ৮০০ টাকা।
পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি এবং শিল্প খাতে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। কৃষিপণ্য দ্রুত বাজারজাত হচ্ছে, শিল্প ও বাণিজ্য বেড়েছে, বিনিয়োগ এসেছে নতুন নতুন অঞ্চলে।
সেতুর ওপরে রয়েছে সড়কপথ, আর নিচে রেললাইন। ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতুর রেলপথ উদ্বোধনের পর ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর চালু হয় সম্পূর্ণ রেল সংযোগ। এখন ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর ও খুলনা পর্যন্ত চলাচল করছে সরাসরি ট্রেন, সময় লাগছে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পাচ্ছেন যুগোপযোগী, উন্নত যোগাযোগ সুবিধা।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলে পৌঁছেছে উচ্চ ক্ষমতার ইন্টারনেট সংযোগ, জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হয়েছে পায়রা ও রামপালের বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এই সেতু।
গ্যাসলাইন স্থাপনও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা ব্যবহারের অপেক্ষায়। এই সংযোগ চালু হলে দক্ষিণবঙ্গের অর্থনীতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
টোল আদায়ের রেকর্ড
তিন বছরে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় ছাড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পারাপার হয়েছে ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ১১২টি যানবাহন।
জাজিরা প্রান্ত দিয়ে পার হয়েছে ৯৮ লাখ ৫৮০টি যান।
মাওয়া থেকে পারাপার হওয়া যানবাহনের তুলনায় জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৮টি বেশি যানবাহন পার হয়েছে।
২০২৫ সালের ৫ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন পারাপার হয়, টোল আদায় হয় ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা—যা পদ্মা সেতুর এক দিনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
২০২২ সালের ২৬ জুন (চালুর প্রথম দিন) সর্বোচ্চ ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পার হয়েছিল। এছাড়া ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল, ঈদুল ফিতরের আগের দিন টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা, যা ছিল তৎকালীন রেকর্ড।
পদ্মা সেতু এখন শুধু একটি অবকাঠামো নয়, এটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য আত্মবিশ্বাস, সম্ভাবনা ও উন্নয়নের প্রতীক। তিন বছরে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে অর্থনীতি থেকে শুরু করে মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে। সরকার এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করছে, এই সেতু সামনে আরও বড় পরিবর্তনের বাহক হবে।
(ঢাকাটাইমস/২৬ জুন/আরজেড)

মন্তব্য করুন