মাথার উকুন দূর করার ঘরোয়া উপায়

উকুন এক ধরনের পরজীবী পোকা, যা বাড়িতে একবার প্রবেশ করলে সবার মাথায় ছড়িয়ে যাওয়া একদম অবধারিত। উকুনের সমস্যা একবার শুরু হলে একেবারেই পিছু ছাড়তে চায় না। উকুন নাশক শ্যাম্পু ব্যবহারে উকুনের সমস্যা কমে ঠিকই, কিন্তু এতে থাকা ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে অনেকেরই চুল পড়ে অর্ধেক হয়ে যায়। চুলের গোড়া ভেজা থাকলে, চুল ময়লা থাকলে উকুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ছোটরা তো বটেই, বড়রাও উকুনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
উকুন আক্রান্ত হওয়াকে ইংরেজিতে পেডিকুলোসিস বলা হয়। থির্যাপটেরা বর্গভুক্ত রক্তচোষা উকুনের আক্রমণকে পেডিকুলোসিস বলা হয়। মানুষসহ গরম রক্তবিশিষ্ট যে কোনো স্তন্যপায়ী এবং পাখি উকুনে আক্রান্ত হয়।
মাথায় উকুন আসার পর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ডিম পাড়ে। এর পর ১০ দিন সময় লাগে উকুন বড় হতে। একসঙ্গে ডিম থেকে উকুন হওয়ার কারণে অনেক দ্রুত চুলে উকুন ছড়িয়ে পড়ে। উকুনের ডিমকে নিট বলা হয়; যা থেকে একটি নিম্ফ বা বাচ্চা জন্মে, পরে সেটা পূর্ণ বয়স্ক উকুনে পরিণত হয়।
উকুন প্রতি রাতে এক বা একাধিক বার খাদ্য গ্রহণ করে। সূঁচের মত মুখ উপাঙ্গ ব্যবহার করে তারা মানুষের মাথার চামড়া ছিদ্র করে রক্ত খেয়ে থাকে। সেসময় তাদের লালা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে; এতে চুলকানি সৃষ্টি হয়। উকুন মানুষের চামড়ায় গর্ত তৈরি করতে পারে না।
উকুন তাড়াতে অনেকেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে ওষুধ ব্যবহার করতে চান না। কিন্তু কিছু ঘরোয়া সমাধানেই এই উকুনের থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। জেনে নিন কীভাবে।
পেট্রোলিয়াম জেলি
পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটু চিটচিটে ভাব আনতে পারে আপনার চুলে। বেশ কয়েকবার শ্যাম্পু করারও প্রয়োজন পড়বে। তবে উকুন দূর করতে খুবই কার্যকরী এটি।
নারকেল তেল
নারকেল তেল ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী, একথা মোটামুটি সবারই জানা। ২০১০ সালে ব্রাজিলে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, এটি প্রাকৃতিকভাবে উকুন দূর করতেও খুবই কার্যকরী। এর সঙ্গে খানিকটা টি ট্রি অয়েল কিংবা লবঙ্গের তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে একেবারে খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করতে হবে। গবেষকদের দাবি, ব্যবহারের ৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮০ শতাংশ উকুন মারা যাবে।
নিম তেল
উকুনের থেকে মুক্তি পাওয়ার খুব সহজ রাস্তা এটি। শ্যাম্পুর মধ্যে কয়েক ফোঁটা নিম তেল মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পুর সময়ে তালুতে হাল্কা করে রগড়ে নিন এই মিশ্রণ। স্নানের পরে ঘন চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে নিলেই চলে যাবে উকুন এবং তার ডিম।
বেকিং সোডা
এক ভাগ বেকিং সোডার সঙ্গে তিন ভাগ কন্ডিশনার মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মিনিট ১৫ মাথায় মাখিয়ে রাখুন। তার পরে ঘন চিরুনি দিয়ে চুল টেনে নিলেই উকুন এবং তার ডিম চলে যাবে মাথা থেকে।
লেবুর রস
লেবু প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক, যা উকুন দূর করবে। লেবুর রস বের করে তা সরাসরি মাথায় লাগান। এটি এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। এর পর চিরুনির সাহায্যে উকুন দূর করুন। এ পদ্ধতিটি সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন।
ভিনেগার
সম পরিমাণ ভিনিগার আর পানি মিশিয়ে মাথায় মাখান। এবার তোয়ালে দিয়ে মাথা আধ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। এর পরে ঘন চিরুনি মাথায় চালিয়ে নিলেই বেরিয়ে আসবে ডিম-সহ উকুন।
মেয়োনিজ
উকুন তাড়াতে কার্যকর মেয়োনিজ। সারা রাত মাথায় মেয়োনিজ মাখিয়ে রেখে দিন। ১২ ঘণ্টার বেশি রাখতে পারলে সবচেয়ে ভাল। সকলে মাথায় চিরুনি চালিয়ে নিলেই উকুনের থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। মেয়োনিজ, সাদা ভিনেগার এবং টি ট্রি অয়েল কয়েক ফোঁটা দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার ভালোভাবে চুলের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন আধাঘণ্টা। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
রসুনের ব্যবহার
১০ কোয়া রসুন নিন। ভালো করে খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। এর সঙ্গে ২ চা চামচ লেবুর রস মেশান। পেস্টের মতো তৈরি করে মাথার ত্বকে ভালো করে ঘষে লাগিয়ে নিন। চুলের গোড়ার কোনো অংশ যেন বাদ না যায়! এভাবে ৩০ মিনিট পেস্টটি চুলে লাগিয়ে রাখুন। এর পর হালকা গরম পানিতে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিন দিন এই পদ্ধতিটি কাজে লাগালে উকুনের সমস্যা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
পেঁয়াজের রস
উকুন তাড়াতে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের রস মাথায় লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাবেন। কিছুক্ষণ চুল ঢেকে রেখে তার পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পরে চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিন এবং উকুন দূর করুন। সপ্তাহে দুবার এটি ব্যবহার করুন।
চিকন দাঁতের চিরুনি
চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন। প্রাচীন মিশরীয়রা উকুন দূর করতে কাঠের তৈরি খুবই চিকন দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করত। চুলে শ্যাম্পু করার পর এই চিরুনি দিয়ে ভালোভাবে চুল ব্রাশ করুন। উকুন অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
(ঢাকাটাইমস/২৬আগস্ট/আরজেড/এজেড)

মন্তব্য করুন