উ ন্ন য় ন

কল্পনার পাতাল পথ ‘কর্ণফুলী টানেল’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:৪০| আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১০:৫৩
অ- অ+

সুড়ঙ্গ পথ বা টানেলের কথা মনে হলেই কল্পনায় ভেসে ওঠে টেলিভিশনে দেখা কোনো সিনেমার দৃশ্য। যেখানে কুয়াসদৃশ দীর্ঘ গোলকের ভেতর দিয়ে খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ট্রেন বা বাস। এই দৃশ্য দেখতাম আর অপেক্ষায় থাকতাম কতক্ষণ পর সূর্যের আলো বা সাধারণ সড়কের দেখা মিলবে। কল্পনায় এমন চিন্তাও আসত যদি পানি এসে ঢুকে পড়ে তখন কী হবে! আবার ভাবতাম কোরআন শরিফের বর্ণনায় হজরত মুসা (আ.) এর নীল নদের পানি দুভাগ করে রাস্তা হয়ে যাওয়ার কাহিনি। মুসা নবী তাঁর অনুসারীদের নিয়ে উট, ঘোড়া ছুটিয়ে নদের ওপারে পৌঁছে গেছেন কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই। সিনেমার দৃশ্য বা ইতিহাসের বর্ণনায় যা-ই থাকুক বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে পানির বুক ভেদ করে নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ বা টানেল নির্মাণ হয়েছে অনেক আগেই। আমাদের দেশে এই প্রথম সেই কল্পনার পাতাল পথ বা টানেল নির্মাণ শুরু হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বা কর্ণফুলী টানেল।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের মানুষের কাছে পদ্মা সেতু বা মেট্রোরেলের মতোই কর্ণফুলী টানেল একটি স্বপ্নের মেগা প্রকল্প। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণেই সম্ভব হচ্ছে এই স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এই সুড়ঙ্গটি নির্মাণের ফলে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের অঞ্চলকে সংযুক্ত করবে। এই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হবে। কর্ণফুলী সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য মোট ৩.৪৩ কিলোমিটার। এই টানেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। টানেলে যে দুটি টিউব বসানো হয়েছে তার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। এছাড়া টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজসম্পন্ন টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে।

কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড় থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল, গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মূলত এসব কর্মযজ্ঞ চলছে টানেলকে ঘিরে। টানেলের বহুমুখী সুবিধা নেওয়ার অপেক্ষায় এখন সবাই। এই টানেল নির্মাণ হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। টানেলে যান চলাচল শুরু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী গাড়িগুলোকে আর নগরে ঢুকতে হবে না। চট্টগ্রামের সিটি আউটার রিং রোড হয়ে টানেলের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

অবশ্যই দেশের প্রথম টানেল হিসেবে কর্ণফুলী টানেলের নানামুখী অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব রয়েছে। এটি শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না, এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধন হবে। দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাসমূহের মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানসহ পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর এ ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগব্যবস্থার ক্ষেত্রে টানেল মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হলে ৪ লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে।

এছাড়া কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। পশ্চিম পাশে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এতে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। পূর্ব দিকের শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। মূলত মিয়ানমার হয়ে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্তিসহ ৭টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই এই টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এগিয়ে যাক দেশ উন্নয়নের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে যান চলাচলের অপেক্ষা নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্মাণকাজ শেষ হোক- এটাই প্রত্যাশা।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মুরাদনগরে ধর্ষণ: তারকাদের ক্ষোভ, প্রতিবাদ
আট জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস
রক্তস্বল্পতা দূর করে কাঁঠালের বীজ, মানসিক চাপও কমায়
 The Economic Imperative for Peace in the Context of the Iran-Israel Conflict
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা