রানীর পর এবার গিনেসবুকে সাভারের ‘চারু’

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
 | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৩২

গিনেসবুকে নাম তোলা বিশ্বের সবেচেয় ছোট গরু ‘রাণী’র কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। সাভারের শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে বেড়ে উঠা সেই খর্বাকৃতির গরুটি নিয়ে সেসময় আলোচনা হয় বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তবে শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে মারা যায় রানী। মৃত্যুর পর গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতি গরুর স্বীকৃতি পায় এটি।

এবার রানীর মতো শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড খামারে বেড়ে উঠা চারু নামে আরেকটি গরু গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে জায়গা করে নিলো। রেকর্ড বই অনুযায়ী বিশ্বের জীবিত গরুর মধ্যে এটিই এখন সবচেয়ে ছোট।

সাভারের আশুলিয়ার চারিগ্রাম এলাকায় শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সুফিয়ান বুধবার সকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গিনেস কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার চারুকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট জীবিত গরুর স্বীকৃতি দিয়ে ইমেইল পাঠিয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শিকড় অ্যাগ্রো থেকে চারুর বিষয়ে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছিল।

কাজী সুফিয়ান জানান, চারু নামে গরুটির জন্ম ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সেই হিসাবে তার বয়স আড়াই বছর এবং এখন চার দাঁত। উচ্চতা ২৩ দশমিক ৫০ ইঞ্চি, লম্বা ২৭ ইঞ্চি ও ওজন ৩৯ কেজি।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে খর্বাকৃতির গরু হিসেবে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়া মৃত রানির উচ্চতা ছিল ২০ ইঞ্চি, লম্বা ২৪ ইঞ্চি ও ওজন ২৬ কেজি।

রাণীকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা খামারের কর্মচারী মো. মামুনই এখন চারুকে দেখাশুনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজ খামারে অনেক রকমের পশু-পাখি পালন করি। রানি মারা যাওয়ার পর প্রায় এক বছর আগে চারুকে আমরা সিলেট থেকে সংগ্রহ করেছি। যেভাবে রানিকে সংগ্রহ করা হয়েছে সেভাবেই চারুকে আনা হয়েছে। কর্মকর্তারা এখানে আনার পর ওর নাম দিয়েছেন চারু।’

‘আগেরবার যেহেতু রাণী মারা গেছে, তাই চারুর প্রতি একটু বেশি যত্ন নেই আমরা। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী একাধিকবার চারুর মাপের ছবি এবং ভিডিও পাঠানো হয়েছে। শিকড় অ্যাগ্রোর পশু চিকিৎসক প্রতি দুই সপ্তাহ পরপর চারুকে দেখতে আসেন এবং ওজন, শরীর চকচকে আছে কি না, গঠন বাড়ছে কি না এসব পরীক্ষা করেন।’ বলেন মামুন।

খামারের সিইও কাজী সুফিয়ান জানান, ‘রানীর সঙ্গে কোনো গরুকেই তুলনা করতে রাজি নন তিনি। তার মতে শিকড় খামারে রানী ছিল একটি সিগনেচার। তিনি বলেন ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে ২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর স্থান করে নেয় আমাদের শিকড় অ্যাগ্রোর রানী। তবে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় অফিশিয়ালি বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখাবার আগেই রানি মারা যায়। পরবর্তীতে, রানির দেহাবশেষ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন অ্যান্ড মিউজিয়াম ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অফ বাংলাদেশে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

কাজী সুফিয়ান বলেন, ‘অল্প কদিনেই রানীর উল্লেখযোগ্য ভক্ত তৈরি হয়ে গেছিল। আর তাই বেশির ভাগ মানুষই রানীর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। আমরা অনেক টাকায় বিক্রির সুযোগ পেয়েও কেন বিক্রি করিনি সেটা নিয়েও অনেকে বিদ্রূপ করেছেন। কেউ কেউ আমাদের গাফিলতির কথা বলে আমাদের বকাও দিয়েছেন। ওই সময়টায় ভীষণ খারাপ লাগলেও আমরা দাঁতে দাঁত চেপে পরিস্থিতি মেনে নিয়েছিলাম। মূলত রানীর প্রতি সবার ভালবাসাটা আমরা বুঝতাম।’

সুফিয়ান বলেন, ‘রানীর মৃত্যুর পর গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ শোক প্রকাশ করে আমাদের ই-মেইল পাঠান। তারা জানান, রানীর সম্মানার্থে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত ছোট গরু হিসেবে আরও একটা ক্যাটাগরি তারা চালু করবেন এবং আমাদের কাছে প্রতিযোগিতা করার মতো কিছু থাকলে এতে অংশগ্রহণ করতে পারি।’

রানীর পর চারুকে কীভাবে খুঁজে পেলেন সে প্রসঙ্গে সুফিয়ান বলেন, যারা শিকড় অ্যাগ্রো সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের সুদক্ষ এবং নির্ভরশীল কর্মীরা প্রতিদিনই দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়ায়। রানীর জীবদ্দশায়ই আমাদের সংগ্রহশালায় নতুন চমক হিসেবে যোগ হয় চার দাঁতের প্রাপ্তবয়স্ক দেশীয় প্রজাতির বামন গরু চারু। এর উচ্চতা ২৩ দশমিক ৫ ইঞ্চি, লম্বা ২৭ ইঞ্চি এবং ওজন ৩৯ কেজি। এটিকে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত ছোট গরু হিসেবে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি দিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ মেইলের মাধ্যমে আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চারুকে নিয়ে পরিকল্পনার বিষয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছে ছিল বিশ্বরেকর্ডধারী রানীকে বাংলাদেশ সরকারকে উপহার হিসেবে দেয়া। যেন সরকারের তত্ত্বাবধানে রানী তার জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু রানী তার আগেই মারা যাওয়ায় সে সুযোগটা আমরা পাইনি। তাই আমরা চাই বিশ্বরেকর্ডধারী চারু যেন জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করতে পারে। এজন্য শিকড় এগ্রোর পক্ষ থেকে এটি সরকারকে উপহার হিসেবে দিতে চাই।’

২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গিনেস বুকে মৃত গরু হিসেবে রেকর্ড গড়া ২০ ইঞ্চি উচ্চতা, ২৪ ইঞ্চি লম্বা ও ২৬ কেজি ওজনের রানী গত ১৯ আগস্ট দুই বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :