বিছানায় ৪ ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান!

ফিচার, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:২৫ | প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৫৮

আরামদায়ক ঘুম চান তবে সেজন্য যেমন দরকার শারীরিক এবং মানসিক শান্তি তেমনি বিছানাটিও কিন্তু আরামদায়ক হওয়া প্রয়োজন। অনেকেই জানেনা যে ভালো ঘুমের পেছনে একটি স্বাচ্ছন্দ্যকর বিছানা যে কতটা ভূমিকা পালন করতে পারে। জাজিম, তোশক, ম্যাট্রেস, বালিস, বিছানার চাদর, বালিশের কভার ইত্যাদি সব মিলিয়েই বিছানা। নিজের বিছানাটিকে সকলের কাছে আরামের বাগান মনে হয়। বিছানার চাদর বালিশের কভার যদি খসখসে ও ময়লা হয়ে থাকে তাহলে সেটি শুধু ঘুমের ব্যাঘ্যাতই ঘটায় না পাশাপাশি আপনার ত্বকেরও বেশ অনেক ক্ষতি করে থাকে।

এছাড়া সারা দিন ধুলোবালি তো জমেই, আমাদের দেহের যাবতীয় নোংরা কিংবা ঘাম-লাল গিয়ে জমা হয় এই বিছানার চাদরেই। অনেক বাড়িতেই পা না ধুয়ে বিছানায় উঠে যাওয়া কিংবা বিছানায় বসে খাওয়ার অভ্যাস আছে। ফলে বলাই বাহুল্য যে সারা দিনে সবচেয়ে বেশি নোংরা হচ্ছে এই বিছানার চাদর ও বালিশের কভারগুলোই। নিয়মিত বালিশ পরিষ্কার করা জরুরি এবং বালিশের কাভার রোজ বদলে ফেলা জরুরি। ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, সর্দি কাশি ইত্যাদি সব রোগের অন্যতম কারণ নোংরা বিছানা।

সম্প্রতি মার্কিন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা অনুযায়ী, বিছানার চাদর ও বালিশের কভারে সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া জমা হয়! এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘরের অন্যান্য জায়গা থেকেও বেশিমাত্রায় ব্যাকটেরিয়া মেলে বিছানার চাদর ও বালিশের কভার থেকেই। যা কিনা বিপাকে ফেলতে পারে।

এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, শুধু মাত্র এক সপ্তাহ পর একটি বালিশের খোলে টয়লেট সিটের তুলনায় ১৭ হাজার গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। আবার যে খোল গুলি চার সপ্তাহ পর্যন্ত ধোয়া হয়নি, তাতে আপনার পোষা প্রাণীর খাবারের পাত্রের তুলনায় ৩৯ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে।

এবার আপনি যদি ভেবে থাকেন, প্রতি সপ্তাহে বালিশের খোল পাল্টেই এই ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে মুক্তি পাবেন, তা হলে আবার ভেবে দেখার সময় এটি। কারণ সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, এক সপ্তাহ পর বিছানার চাদরে বাথরুমের দরজার হাতলের চেয়েও বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। আবার মাত্র দুসপ্তাহ পর আপনার আদরের পোষার খেলনার তুলনায় চাদরে দ্বিগুণ সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া উপস্থিত হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাত বছর পুরনো বিছানার গদি থেকে চার ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল গ্রাম-পজিটিভ কক্কি ও ব্যাসিলি, যা ফুড পয়জনিংয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিয়মিত বিছানার চাদর ধোয়া ও গদির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের ফলে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কম করা যাবে। তাঁদের মতে, ব্যাকটেরিয়ার আশ্রয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে, চাদর অর্ধেক মুড়ে রাখা উচিত। যাতে বিছানা শুকোতে পারে। কারণ এই স্যাঁতস্যাঁতে বিছানায় ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। আবার ধুলো, ময়লা দূরে রাখার জন্য ম্যাট্রেস প্রোটেক্টার ব্যবহার করা উচিত। সাত বছরের পুরনো ম্যাট্রেস পাল্টে ফেলার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিছানা অপরিষ্কার থাকলে অনেক রোগ জীবাণু ছড়ায়। তাই এটা পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। তাদের মতে, বিছানার চাদর অপরিস্কার থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং ফুসফুসেরও বেশ কিছু অসুখ দেখা দিতে পারে।

বিছানার চাদর যদি অপরিস্কার থাকে তাহলে তা থেকে অ্যাকনে, অ্যালার্জি, এগজিমা, হাঁপানি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর এমনকি ঘুমেরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনের পর দিন বিছানায় একই চাদর থাকলে ধুলো, তেল, ময়লার সঙ্গে অসুখ ছড়াতে পারে। বিছানার চাদরে যে জীবাণু থাকে, তা সাতদিনের মধ্যে বাড়তে শুরু করে। তাই অন্তত সাতদিন অন্ত বিছানার চাদর বদলানো প্রয়োজন। সবথেকে ভালো হয় যদি তিন থেকে চার দিন অন্তর বিছানার চাদর বদলানো যায়। তবেই বিছানার চাদরে থাকা জীবাণুর মাধ্যমে অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

গরম পানিতে বিছানার চাদর ও বালিশের খোল পরিষ্কার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নোংরা ও বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা যাবে। এটি করা সম্ভব না-হলে কোল্ড ওয়াশের আগে, নিজের বালিশ ফ্রিজারের মধ্যে রেখে দিন এর ফলে ধুলোকণাগুলো ধ্বংস হবে।

বিছানার চাদর কিংবা বালিশের কাভারের মতো কাপড়গুলো কেবল ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিলেই হয় না, বরং এগুলোকে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে মানতে হয় কিছু নিয়ম। অন্যথায় ব্রনসহ নানা রকম চর্ম রোগ, পেটের অসুখ, খুশকি, উকুনসহ নানা রকমের রোগের শিকার হতে পারেন আপনি।

শোবার ঘরের আসবাব ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করলে ভালো হয়। এছাড়া বালিশের কভার, বিছানার চাদর ইত্যাদি ধোয়ার সময় পানিতে ভিনেগার ও সামান্য লেবুর রস মেশাতে পারেন।

বিছানার চাদর ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাপড় সাধারণ পানিতে ভেজাবেন না; বরং গরম পানি ও ভালো মানের ডিটারজেন্ট দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। গরম পানিতে উকুনসহ অন্যান্য জীবাণু মারা যায়।

ধোয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে এই কাপড়গুলো ভিজিয়ে রাখুন। এতে ময়লা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বিছানার চাদর ওয়াশিং মেশিনে ধুলে ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। তাই হাতে ধোয়াই উত্তম। ভালো করে কেচে নিন। একটু পরিশ্রম হলেও এটাই সেরা পন্থা।

খুব ভালো করে বারবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন, যেন কোনো সাবান লেগে না থাকে। সাবান চাদরে থেকে গেলে রোদে দেওয়ার পর রং যেমন নষ্ট হয়ে যাবে, একই সঙ্গে শরীরে চুলকানি বা র‍্যাশ দেখা দিতে পারে। স্বাভাবিক পানিতে ধোয়া শেষে আবারও বালতিতে গরম পানি নিন। এর সঙ্গে মিশিয়ে নিন স্যাভলন বা ডেটলের মতো কোনো জীবাণুনাশক। এতে বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারগুলো ২-৩ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ভালো করে চিপে নিন। মাড় দিতে চাইলে এই সময়ই দিন।

কাপড়গুলো অবশ্যই কড়া রোদে শুকোতে হয়। ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বা ঘরের মাঝে এইসব কাপড় শুকোবেন না। অবশ্যই রোদের মাঝে পরিষ্কার দড়িতে শুকোতে দিন।

(ঢাকাটাইমস/২ ফেব্রুয়ারি/আরজেড/ ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :