দেশের নদী রক্ষায় স্বাধীন নদী কমিশনের গুরুত্ব অনেক: সংলাপে বক্তারা
বর্তমান সময়ে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কার্যকর একটি স্বাধীন নদী কমিশন দেশের নদী রক্ষায় সময়ের প্রয়োজন। ‘আদালতের রায় মেনে নদী দূষণ রোধে শক্তিশালী নদী কমিশনের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে এমন বক্তব্য এসেছে।
বুধবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের দূষণবিরোধী নাগরিক প্রচেষ্টা প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনটির সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, সুপ্রিমকোর্টের রায় আনুযায়ী প্রস্তুতকৃত অধিকতর শক্তিশালী নদী কমিশন আইনের খসড়া প্রশংসনীয়। তবে যেকোনো আইনী কাঠামো বাস্তবায়ন নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর। আর যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা তার নের্তৃত্বের ওপর নিভরশীল। কাজেই বর্তমান সময়ে যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কাযকর একটি স্বাধীন নদী কমিশন দেশের নদী রক্ষায় অত্যন্ত বেশী প্রয়োজন।
সংলাপ অনুষ্ঠানে পানি ও নদী দূষণের ওপর আদালতের নির্দেশনা, নীতি ও আইন বিশ্লেষণপূর্বক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ গোলাম সারোয়ার।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালের হাইকোটের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৩ সালে নদী রক্ষা কমিশন গঠিত হয়। গত কয়েক বছরে নদী রক্ষায় যে বিষয়গুলো এসেছে তা জনস্বার্থে করা রিট থেকে এসেছে। নদী রক্ষা কমিশনের পর্যাপ্ত জনবল নেই যা নদী রক্ষায় কাজ করবে। প্রয়োজন সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ।’
ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, ‘নদী রক্ষার জন্য আদালত সমন্বয়হীনতাকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। নদী রক্ষার সাথে জড়িত সরকারী সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকে আন্তরিক হতে হবে। ঢাকার নদী, পানি, বায়ুর স্ট্যান্ডাড মান অনুযায়ী আমরা ২য় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বসবাস করি।’
এসময় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদ্য-সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘নদীকে ভালবাসা মানে মাকে ভালবাসা। নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে নদীর জমি ছেড়ে দিতে হবে এবং তা জনগনের সম্পত্তি ঘোষনা করতে হবে।’
মাইনুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি নিদিষ্ট এলাকা হিসেবে ঢাকা শহরের নদী, পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণ নিয়ে কাজ করে ঢাকা স্টেট অফ এনভায়রনমেন্টের বর্তমান চিত্র সবার সামনে প্রকাশ করে কিভাবে সুশাসন এবং জবাবদীহিতার জায়গা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সকলের প্রচেষ্টায় এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।’
রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশনের কার্যকারিতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এর পরিচালনায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের উপর বেশী নিভর করে। নদী রক্ষা কমিশনকে যতোই ক্ষমতা দেওয়া হোক না কেন বাস্তবায়নে তা কতোটা কাযকর সেটাই দেখার বিষয়।’
নোঙর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শামস সুমন বলেন, ‘নদী রক্ষা কমিশনের সাথে জনগণের বন্ধুত্ব করতে হবে। কমিশনের উচিত যারা নদী নিয়ে কাজ কওে তাদের এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে নদী রক্ষায় কাজ করা।’
৪৮ নদী সমীক্ষা প্রকল্পের টিমলিডার সৈয়দ মো. মতলুবুর রহমান বলেন, ‘নদীকে রক্ষায় যারা কাজ করছে তাদের কে সহযোগিতা করতে হবে। নদী দেশের সকল কিছুর সাথে জড়িত। নদী রক্ষায় আইন সংশোধন করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়ন জরুরী।’
সাবেক ইউপি সদস্য জান্নাতি আক্তার রুমা, ‘শুধু শিক্ষিত মানুষ হলে চলে না, নদীগুলোকে রক্ষা করার জন্য সুশিক্ষিত মানুষ দরকার। আমাদের পরিবেশ আগে যেমন ছিল আমরা তেমন নদী আর পরিবেশ চাই।’
অনুষ্ঠানে কনসোর্টিয়াম সদস্য, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বায়ুমল্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ মনির হোসেন চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ এর সভাপতি এমএস সিদ্দিকী, ঢাকা ওয়াসার ঢাকা ল্যাবরেটরির পরিচালক ড. আলমগীর হোসেন, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো: রাকিবুল ইসলাম, বারসিকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ফেরদৌস আহমেদ, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: কামরুজ্জামান এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিবেশ সাংবাদিক ও স্থানীয় কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/কেআর/ডিএম