বাসে ডাকাতি-ধর্ষণ: চারজনের দোষ স্বীকার, ছয়জন রিমান্ডে
টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে জিম্মি করে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধভাবে নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০ আসামির মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও বাকি ছয়জনকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক। মঙ্গলবার বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফারজানা হাসানাত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
টাঙ্গাইলের আদালত পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এ মামলায় দুপুরে ১০ জন আসামিকে আদালতে তোলা হয়। এদের মধ্যে চারজন তাদের দোষ স্বীকার করেছেন। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন। বাকি ছয়জনকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।’
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান, রাসেল তালুকদার, আলাউদ্দিন ও নাঈম সরকার তাদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও মাহমুদুল হাসান মুন্না ওরফে রতন হোসেন, আব্দুল মান্নান, সোহাগ মন্ডল, বাবু হোসেন জুলহাস, জীবন প্রামাণিক ও হাসমত আলীকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
এর আগে সোমবার (৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে রতনসহ গ্রেপ্তার ১০ জনকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে আনা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে রবিবার (৭ আগস্ট) তাদের ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১২ ও ১৪)।
র্যাব জানায়, বাসের হেলপারের ছদ্মবেশে ২০১৮ সাল থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছিল মাহমুদুল হাসান মুন্না ওরফে রতন হোসেন। তিনি এ চক্রের দলনেতা। তার অধীনে ১৩ থেকে ১৫ জন্য সদস্য রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় দুই দফার কারাভোগও করেছেন তিনি। দ্বিতীয় দফায় নয় মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসেন এবং পুনরায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করে দলনেতা হন রতন হোসেন।
ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ছাড়ে কুষ্টিয়া থেকে। গন্তব্য ছিল নারায়ণগঞ্জ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে। মহাসড়কের পাশের এই হোটেলে যাত্রীরা খাওয়া-দাওয়া করেন। যাত্রাবিরতি শেষে রাত ১২টার দিকে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয় বাসটি। এরপরই সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যেই তিন ধাপে ১৩ জন বাসটিতে ওঠে। তখনও বাসে থাকা যাত্রীরা আঁচ পারেননি আগামী কয়েকঘণ্টায় কী ঘটতে যাচ্ছে।
এরপরই শুরু হয় তিন ধাপে বাসে ওঠা ১৩ ডাকাতদের তাণ্ডব। প্রথমে চালকের গলায় চুরি ঠেকিয়ে বেঁধে ফেলে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে। এরপর যাত্রীদের বেঁধে বাসটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লুট করে মালামাল। লুটপাট শেষে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে। বাসটিতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা তাণ্ডব চালিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় একটি বালুর স্তূপে বাসটি উল্টে গেলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় মধুপুর থানায় ওই বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সব মিলিয়ে এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজা মিয়া, আউয়াল ও নুরনবী নামের তিনজন এর আগে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এই তিনজন বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আছেন।
(ঢাকাটাইমস/০৯আগস্ট/কেএম)