হাজী সেলিম কোথায়? কেমন আছেন?

রাজধানী ঢাকার প্রভাবশালী সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার প্রভাব কেবল বেড়েছেই। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানেরও মালিক।
পুরান ঢাকার এই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে সরকারি-বেসরকারি জায়গা দখলের অভিযোগও এন্তার। বিআইডব্লিউটিএর অভিযানে উদ্ধার হয় হাজী সেলিমের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা বেশ বড় জায়গা। ছেলে ইরফান সেলিম গ্রেপ্তারের পর পুরান ঢাকায় একটি ব্যাংকের জায়গা তাদের দখল থেকে উদ্ধারের খবর ফলাও হয়েছিল।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা-৭ আসনের এই সংসদ সদস্যকে দশ বছরের সাজা দেয় আদালত। ২০০৭ সালে দুদকের পক্ষ থেকে লালবাগ থানায় মামলাটি করা হয়। পরের বছরের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন তিনি।
গত ২৫ এপ্রিল হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখেন আপিল আদালত। এরপর তাকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২২ মে তিনি আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
এখন হাজী সেলিম কোথায় আছেন, কেমন আছেন?
ঢাকাটাইমসের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া হাজী সেলিম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান। ওই রাতেই তাকে কারা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিন সকালে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে আনা হয়। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এই হাসপাতালের কেবিন ব্লকে তার চিকিৎসা চলছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার হাসান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘হৃদরোগসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে হাজী সেলিম বর্তমানে বিএসএমএমইউতে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন। তার পাহারায় আমাদের কারারক্ষীরা আছেন। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আবার তাকে কারাগারে আনা হবে।’
হাজী সেলিমের শরীরের অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত বলে জানান বিএসএমএমইউ সূত্র। ঢাকাটাইমসকে সূত্র জানায়, হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগের তত্ত্বাবধানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা দেখভালে গঠিত একটি বোর্ড প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হাজী সেলিম হৃদরোগে আক্রান্ত। তার নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।’
২২ মে আত্মসমর্পণ করার সময় হাজী সেলিমের আইনজীবী তার পক্ষে আদালতে তিনটি আবেদন করেন। এর একটিতে আপিলের শর্তে জামিন চাওয়া হয়। আরেকটি আবেদনে বলা হয়, তাকে যদি কারাগারে পাঠানো হয়, তাহলে যেন প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেয়া হয়। আর তৃতীয় আবেদনে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার সুযোগ চাওয়া হয়।
শুনানি শেষে আদালত হাজী সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই দিন বিকাল পাঁচটার পর তাকে নিয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যানটি কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাকে বহনকারী পুলিশ ভ্যান কারাগারে প্রবেশ করে।
আদালতে আত্মসমর্পণের আগে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরেও গত ২ মে বিদেশে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন পুরান ঢাকার এই সংসদ সদস্য। চার দিন পরে তিনি দেশে ফেরেন।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করে দুদক। ২০০৮ সালের ১৩ বছরের সাজার রায় দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে ২০২১ সালের ৯ মার্চ হাইকোর্ট দশ বছরের সাজা বহাল রাখে ও অন্য ধারায় তিন বছরের দণ্ড থেকে অব্যাহতি দেয়। আর আপিল চলাকালে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা মারা যাওয়ায় তার আপিল বাতিল করা হয়।
পরে হাজী সেলিম আপিল আদালতের শরণাপন্ন হন। সেখানে চলতি বছরের এপ্রিলে দেওযা রায়ে তার সাজা বহাল রাখা হয় এবং নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয় তাকে।
ছেলের কাণ্ডে বিপাকে পড়েন সেলিম
২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের গাড়িটি তাকে ধাক্কা দেয়।
ওয়াসিফ নিজেকে নৌবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিলেও ইরফানের লোকজন গাড়ি থেকে নেমে তাকে কিল-ঘুষি মারে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা ওয়াসিফের স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ওই ঘটনায় ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। পরে ইরফানকে তার বাসা থেকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছরের ২৮ এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্ত পান।
অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পরে রাজধানীর চকবাজার থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ইরফান ও তার সহযোগী জাহিদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা করে র্যা ব। বাসায় অবৈধভাবে মদ ও ওয়াকিটকি রাখার অভিযোগে করা মাদক মামলায় এক বছর এবং ওয়াকিটকি মামলায় হাজি সেলিমের পুত্রকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন র্যা বের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
পরে মাদক ও অস্ত্র আইনে করা দুই মামলায় তাকে অব্যাহতি দিয়ে প্রতিবেদন দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ইরফান সেলিম ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। গত বছরের ২৭ অক্টোবর কাউন্সিলর পদ থেকে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর বর্তমানে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
(ঢাকাটাইমস/১৬সেপ্টেম্বর/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন