হাশরের ময়দানে মিজানের পাল্লা ভারি হলেই মিলবে মুক্তি

ইসলাম ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮:১৬| আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:১০
অ- অ+

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকূলের রব। যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু। বিচার দিবসের মালিক। (সুরা আল-ফাতিহা, আয়াত ২-৪)

যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন এবং সৃষ্টি করেছেন অন্ধকার ও আলো। তারপর কাফিররা তাদের রবের সমতুল্য স্থির করে। (সুরা আল-আনআম, আয়াত ১)

যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, রাজত্বে তাঁর কোন শরীক নেই এবং অপমান থেকে বাঁচতে তাঁর কোন অভিভাবকের দরকার নেই। সুতরাং তুমি পূর্ণরূপে তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা কর। (সুরা আল-ইসরা, আয়াত ১১১)

সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমানসমূহে যা কিছু আছে ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক। আর আখিরাতেও সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবগত। (সুরা সাবা, আয়াত ১)

বল, হে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান কর এবং যার নিকট হতে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নাও; যাকে ইচ্ছা তুমি পরাক্রমশালী কর, আর যাকে ইচ্ছা তুমি অপমান কর। কল্যাণ তোমার হাতেই। নিশ্চয় তুমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা আল ইমরান, আয়াত ২৬)

তিনিই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তিদাতা, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল, তিনিই অতীব মহিমান্বিত। তারা যাকে শরীক স্থির করে আল্লাহ তা থেকে পবিত্র, মহান। (সুরা আল-হাশর, আয়াত ২৩)

আর তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। দুনিয়া ও আখিরাতে সমস্ত প্রশংসা তাঁরই; বিধান তাঁরই। আর তাঁর কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সুরা আল-কাসাস, আয়াত ৭০)

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহবান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। (সুরা আল আনফাল, আয়াত ২৪)

দুনিয়ার জীবনে লেনদেনের মাপকাঠি হলো অর্থ-সম্পদ আর পরকালে মুক্তির মাপকাঠি হবে নেকি। আখেরাতে অর্থ-সম্পদ কোনো কাজেই আসবে না। দুনিয়াতে জীবিত অবস্থায় আখেরাতে সম্বলের জন্য নেকি অর্জন করতে হবে। আখেরাতে হাশরের ময়দানে মানুষ একটা নেকির জন্য পেরেশান হয়ে সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী-পরিবার-পরিজনের কাছে যাবে। কেউ তাকে একটা নেকিও দিবে না। নেকির মূল্য তখন বোঝা যাবে। আখরাতে নাজাত বা মুক্তির জন্য নেকি যেমন প্রয়োজন তেমনি গোনাহ থেকে মুক্তি লাভও আবশ্যক। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের জন্য নেকি অর্জনের পাশাপাশি গোনাহ থেকে মুক্তির বিকল্প নেই। হাদিসের কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে সম্বোধন করে আহবান করছেন তার পথে চলার।

ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার জীবনের পিছনে পড়ে আখেরাতকে ভুলে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহতাআলা বলেন, সাবধান! প্রকৃতপক্ষে তোমরা নগদ জীবন (পার্থিব জীবন)কেই ভালবাসো আর আখেরাতকে উপেক্ষা করো। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত ২০-২১)

আল্লাহতায়ালা হাশরের ময়দানে বিশ্বাসী মুমিন বান্দার অবস্থা কেমন হবে আর অবিশ্বাসী কাফেরের অবস্থা কেমন হবে তা তুলে ধরে বলেন, সেদিন অনেক চেহারা উজ্জ্বল হবে। আপন রবের দীদার (দর্শন) লাভ করবে। সেদিন অনেক চেহারা (ভয়ে আতঙ্কে) বিবর্ণ হয়ে যাবে। তারা বুঝবে যে, তাদের সাথে এমন আচরণ করা হবে, যা তাদের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেবে। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াত ২২-২৫)

আখেরাতের ফিকির মুমিন বান্দাহর জীবনের সবচে বড় অনুষঙ্গ। সে তার পার্থিব জীবন আখেরাতের জীবন নিরাপদ ও সুন্দর করার কাজে ব্যয় করে। দুনিয়ায় বসে সে আখেরাতের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে যথাযথ চেষ্টা মেহনত অব্যাহত রাখে। যেসকল কথা ও কাজে আল্লাহ তাআলা নারাজ হন সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। ভুল হয়ে গেলে তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেকে শুধরে নেয়ার চেষ্টা করে।

আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার এ আখেরাতমুখিতা অনেক পছন্দনীয়। আখেরাতের জন্য যে চেষ্টা মেহনত করে আল্লাহতাআলা তার মেহনতের উত্তম পুরস্কার দান করেন।

আখেরাতমুখী মেহনতের পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ তাআলা তাকে দুনিয়ায় দান করেন ‘হায়াতুন তাইয়িবাহ’-উত্তম জীবন। পরকালের প্রত্যেক পর্বে তাকে ঢেকে রাখেন বিশেষ রহমতের চাদরে। সবশেষে রহমত ও সন্তুষ্টির পরম আধার জান্নাতে স্থান দান করেন।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তির চিন্তা ফিকির কেবলমাত্র পার্থিব জীবনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়, আল্লাহ তাআলার বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে নিজ খেয়াল খুশিমত চলতে থাকে, আখেরাত ভুলে শুধু দুনিয়ার ফিকিরে মগ্ন থাকে, তার জন্য রয়েছে দুনিয়া-আখেরাতে কঠিন শাস্তি। দুনিয়ার হাজারো আসবাব-উপকরণ থাকার পরও তার জীবন হয় সংকীর্ণ। আর পরকালের প্রত্যেক পর্বে তার জন্য থাকবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

আল্লাহ বলেন, সেদিন অনেক মুখ (ঈমান ও নেকআমলের আলোয়) উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ (কুফর ও পাপের কালিমায়) কালো হয়ে যাবে। (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৬)

সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবী কে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমানসমূহকে এবং লোকের পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সুরা ইব্রাহীম, আয়াত ৪৮)

আল্লাহতায়ালা পরকালে বিচারের জন্য কবর থেকে উঠিয়ে সমস্ত প্রাণী, মানুষ, জিনদের হাশরের মাঠে দণ্ডায়মান করবেন। পৃথিবীই হবে হাশরের মাঠ। হাদিসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীর উপরিভাগে একটি চাদর রয়েছে, একে পার্শ্ব ধরে টান দেওয়া হবে। ফলে গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সাগরে পতিত হবে। অতঃপর সমতল হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা কোরআনে ইরশাদ করেন, আর আমি জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব। (সুরা কাহাফ, আয়াত ৮)

হাশরে হিসাবের জন্য কবর থেকে সর্বপ্রথম উঠবেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মোহাম্মদ (সা.)। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবী (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমি হব সব আদমসন্তানের সরদার এবং আমিই প্রথম কবর থেকে উঠব। আল্লাহর নিকট আমিই প্রথম সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই প্রথম কবুল হবে। (মুসলিম : ২২৭৮)

হাশরের মাঠে মানুষ খালি পায়ে, বস্ত্রহীন হয়ে উঠবে। কারও শরীরে কোনো কাপড় থাকবে না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, হে মানবমণ্ডলী, নিশ্চয় কেয়ামতের দিন নগ্নপদে, বস্ত্রহীন ও খৎনাবিহীন অবস্থায় হাশরের ময়দানে তোমাদের একত্র করা হবে এবং কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে। (বুখারি : ৬৫২৪)

হাশরে সব নবীর উম্মত থেকে হিসাব নেওয়া হবে। সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে উম্মতে মুহাম্মদি থেকে। হাশরের ময়দানে বনি আদমকে পাঁচটি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এই প্রশ্নগুলোর সদুত্তর যারা দিতে পারবে তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যাবে। আর যারা এর যথাযথ উত্তর দিতে অক্ষম হবে, তারা অবিশ্বাসী কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে যাবে। এতদ প্রসঙ্গে হযরত ইবনে মাসউদ রা. রাসুলুল্লাহ সা.-এর নিকট হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, (হাশরের দিন) মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিকট এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা না হবে। ১. নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? ২. যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে? ৩. ধন সম্পদ কোথা হতে উপার্জন করেছে? ৪. অর্জিত ধন সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে? ৫. এবং (দ্বীনের) যতটুকু ইলম অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? (জামে তিরমিযী : ৪/২৪১৬)

হাশরের দিন প্রত্যেকটা ইবাদতের হিসাব নেওয়া হবে। আর ইবাদতের মধ্যে সর্বপ্রথম হিসাব হবে নামাজের। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, কেয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম হিসাব নেওয়া হবে নামাজের। যদি নামাজ সঠিক হয় তাহলে তার সব আমল ঠিক, আর নামাজ যদি নষ্ট হয়, তাহলে সব আমল নষ্ট। (আল মুজামুল কাবির, তাবরানি : ২৪০)

মানুষ পৃথিবীতে যেসব আমল করে, মৃত্যুর পর সবকিছুর হিসাব হবে। হাশরের মাঠে হবে সেসব হিসাব এবং বিচার। পৃথিবীতে যে ভালো কাজ করবে, হাশরে সে ভালো প্রতিদান পাবে আর যে মন্দ কাজ করবে তার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বান্দার ভালো-মন্দ সব কাজ মিজানের পাল্লায় ওজন করা হবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম করা হবে না। যদি কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তাও উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৪৭)

আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, অতএব যার পাল্লা ভারী হবে, সে অনন্ত সুখের জীবনযাপন করবে, আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার ঠিকানা হবে হাবিয়া (জাহান্নাম)। (সুরা কারিয়া, আয়াত ৬-৯)। তাই মিজানের পাল্লা যেন ভারী হয়, সে আশা রাখা ও আমল করা। হাদিসে মিজানের পাল্লা ভারী হওয়ার কিছু আমল বর্ণিত হয়েছে। নিচে হাদিসে উল্লিখিত জান্নাতের যাওয়ার আমল ও অধিক নেকি অর্জন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতে যাবে

ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস। ইসলাম ধর্মে ঈমানের অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক । ঈমানের ছয়টি স্তম্ভ হচ্ছে: ১. একক ইলাহ হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করা। ২. আল্লাহর ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস করা। ৩. সমস্ত আসমানী কিতাব সমূহতে বিশ্বাস। ৪. সকল নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস। ৫.তাক্বদীর বা ভাগ্যের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস। ৬. আখিরাত বা পরকালের প্রতি বিশ্বাস। (সুরা বাকারা, সারাংশ, আয়াত ২-৪)

যার ঈমান আছে (হোক সেটা দুর্বল ঈমান) সে একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের কর। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ২২)

কালেমার সাক্ষ্য দেওয়া

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামত দিবসে আমার উম্মতের একজনকে সব সৃষ্টির সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে ৯৯টি আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। তারপর তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি কি এগুলো থেকে কোনো একটি গুনাহ অস্বীকার করতে পারো? আমার লেখক ফেরেশতারা (কিরামান-কাতিবিন) কি তোমার ওপর জুলুম করেছে? সে বলবে, না, হে প্রভু! তিনি আবার প্রশ্ন করবেন, তোমার কোনো অভিযোগ আছে কি? সে বলবে, না, হে আমার প্রভু! তিনি বলবেন, আমার কাছে তোমার একটি সওয়াব আছে। আজ তোমার ওপর এতটুকু জুলুমও করা হবে না। তখন ছোট একটি কাগজের টুকরা বের করা হবে। তাতে লেখা থাকবে, ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ’, অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য প্রদান করি যে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর কোনো প্রভু নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’ তিনি তাকে বলবেন, দাঁড়িপাল্লার সামনে যাও। সে বলবে, হে প্রভু, এত খাতার বিপরীতে এই সামান্য কাগজটুকুর কী আর ওজন হবে? তিনি বলবেন, তোমার ওপর কোনো রকম জুলুম করা হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর খাতাগুলো (সারা জীবনের আমলনামা) এক পাল্লায় রাখা হবে এবং ওই কাগজের টুকরা আরেক পাল্লায় রাখা হবে। ওজনে খাতাগুলোর পাল্লা হালকা হবে এবং কাগজের টুকরার পাল্লা ভারী হবে। আর আল্লাহ তায়ালার নামের বিপরীতে কোনো কিছুই ভারী হতে পারে না। (তিরমিজি : ২৬৩৯; ইবনে মাজা : ৪৩০০)

এই কালেমাই জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম। এ জন্য এই কালেমার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখা এবং বিশ্বাসকে গভীর থেকে আরও গভীরতর করার চেষ্টায় সদা মশগুল থাকা।

সকাল-সন্ধ্যায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করা

সকাল-সন্ধ্যা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ জিকির করা। যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ জিকির করবে, তার আমলনামার পাল্লা সাত আসমান ও সাত জমিনের চেয়েও ভারি হবে। তার জন্য জান্নাত হবে সুনিশ্চিত। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামাতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৃষ্টির মধ্য থেকে আপনার উম্মতের এমন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যে ব্যক্তি একদিন হলেও ইখলাসের সঙ্গে এ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই এবং সে এর উপর মৃত্যুবরণ করেছে।’ (মুসনাদে আহমদ)

সব সময় ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা

সুখের খবর কিংবা দুঃখের খবর, আনন্দের খবর কিংবা বিপদের খবর; যে কোনো সংবাদেই সব সময় ‘আলহামদুল্লিাহ’ তথা সব প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য বলা। আর তাতে বান্দার আমলনামার পাল্লা সাত আসমান ও সাত জমিন থেকেও ভারি হবে। আর তা হবে জান্নাত লাভের মাধ্যম।

সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি পড়া

পবিত্র হাদিসে রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ১০০ বার এ দোয়াটি পড়বে, বিচার দিবসে তার চেয়ে অধিক নেকি নিয়ে আর কেউ হাজির হতে পারবে না মহান আল্লাহর দরবারে। (মুসলিম)

দোয়াটি হলো এই- ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’। অর্থ, আল্লাহ পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তারই।

৪০ লাখ নেকি পাওয়ার দোয়া

সাহাবি তামিম দারি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এই দোয়াটি দশ বার পড়বেন, আল্লাহ তাআলা তার আমল নামায় ৪০ লাখ নেকি লিখে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৩; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৬৯৫২; তাবরানি, হাদিস : ১২৭৮) দোয়াটির আরবি হলো—

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু। ইলাহান ওয়াহিদান- আহাদান সামাদান। লাম ইয়াত্তাখিজ সাহিবাতান ওয়ালা ওয়ালাদা। ওয়ালাম ইয়াকুল লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ : আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। একক উপাস্য, একাই, অমুখাপেক্ষী, তার স্ত্রী-সন্তান নেই। তার সমকক্ষও কেউ নেই।

৭০ জন ফেরেশতা, ১০০০ দিন পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পাঠকারীর জন্য সাওয়াব লিখতে থাকে

নিম্নোক্ত দরুদ শরীফটি একবার পাঠ করলে ৭০ জন ফেরেশতা, ১০০০ দিন পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পাঠকারীর জন্য সাওয়াব লিখতে থাকে। উচ্চারণঃ- জাযাল্লাহু আন্না মুহাম্মাদান মা-হুয়া আহলুহু।

অর্থঃ- আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমাদের পক্ষ থেকে এমন প্রতিদান দান করুক, যেমন প্রতিদান পাওয়ার উপযুক্ত তিনি। (সহীহ আততারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২৬০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস নং-১৭৩০৫; আবু নুআইম ফী হিলয়াতিল আউলিয়া, মুসনাদে শামিয়্যীন, লিত্ত্ববরানী, হাদীস নং-২০৭০। আবু নুআইম ফী হিলয়াতিল আউলিয়া, ৩/২০৬)

জান্নাতের যাওয়ার দোয়া

প্রত্যেক অযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ করুণ (আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসুলুহু) । এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৩৪)

প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করুণ এতে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে যেতে পারবেন। (সহিহ নাসাই, সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ৯৭২)

প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং ১ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর) পাঠ করুণ এতে আপনার অতীতের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১২২৮) সেই সঙ্গে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে ৫০০ বার পড়া হচ্ছে। (সহিহ মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং- ১৮০৩)

প্রতিরাতে সুরা মুলক পাঠ করুন এতে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। (সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব, হাকিম হাদিস নং- ৩৮৩৯, সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ১১৪০)

রাসূল (সা.)-এর উপর সকালে ১০ বার ও সন্ধ্যায় ১০ বার দরুদ পড়ুন এতে আপনি নিশ্চিত রাসূল (সা.)-এর সুপারিশ পাবেন। (তবরানি, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৬৫৬)

সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পড়লে সৃষ্টিকুলের সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দেয়া হবে। সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৯১। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি : ৩৪৬৪)

সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ করলে কিয়ামতের দিন তার চেয়ে বেশী সওয়াব আর কারো হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৯২)

সকালে ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ১০০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০০ বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর পাঠ করলে অগণিত সওয়াব হবে। (নাসাই, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৬৫১)

বাজারে প্রবেশ করে- (‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহয়ি ওয়া ইউমিতু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শায়ইন কাদির’)পাঠ করুণ এতে ১০ লাখ পুণ্য হবে, ১০ লাখ পাপ মোচন হবে, ১০ লাখ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে এবং জান্নাতে আপনার জন্য ১টি গৃহ নির্মাণ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৪২৮, ৩৪২৯)

বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করুণ এতে আল্লাহতায়ালা নিজ জিম্মাদারিতে আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ৪৯৯, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৩১৬)

জামাতে ইমামের প্রথম তাকবীরের সঙ্গে ৪০ দিন সলাত আদায় করুন এতে আপনি নিশ্চিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। (তিরমিজি, সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ৭৪৭, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৪০৪)

সৎ চরিত্রবান হওয়া

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে গুণ বর্ণনায় কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেছেন, তাহলো সৎ চরিত্র বা মহান চরিত্র। যে চরিত্রে থাকবে না কোনো গোনাহের চিন্তা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ ঘোষণা দেন। আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ হাশরের ময়দানে এ উত্তম চরিত্রের লোকদের আমলনামা হবে সাত আসমান ও সাত জমিনের চেয়ে ভারি। সৎ চরিত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো: হালাল গ্রহণ করা। হারাম বর্জন করা। আর নিজ পরিবারের স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা ও ভাই-বোনের সঙ্গে উত্তম ও উদার ব্যবহার করা।

কেউ মারা গেলে জানাজায় অংশ গ্রহণ করা

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মৃত মুসলিম ব্যক্তির জানাযায় ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় শরিক হয় এবং জানাজা ও দাফন পর্যন্ত থাকে, ওই ব্যক্তি দুই কেরাত নেকি পাবে। আর প্রতি কেরাত হচ্ছে ওহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে জানাজা পড়ে দাফনের আগে ফিরে যাবে সে এক বেরাত নেকি নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। (বুখারি, মুসলিম)

সদকা করা

দান-সাদকা করা। তা একটি খেজুর কিংবা একটি খেজুরের গাছ হলেও। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা কর। (বুখারি ও মুসলিম)

রাগ না করা

রাগ দমন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর যে ব্যক্তি তা করতে সক্ষম হবে সেই দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াব। রাগ দমনকারীদের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, (তারাই মুহসিন বা সৎকর্মশীল) বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরই ভালবাসেন। (সুরা ইমরান : আয়াত ১৩৪)

দ্বীনের পথে দাওয়াত

প্রথম মানব ও প্রথম নবী বাবা আদম (আ.) থেকে সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী ও রাসুলের মূল কালেমার দাওয়াত ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)। আল্লাহর পথে অন্যকে ডাকা বা আহ্বান করা। যে ব্যক্তি মানুষকে মহান আল্লাহর পথে ডাকে বা আহ্বান করে সে ব্যক্তির আমলনামা হবে সাত আসমান ও সাত জমিন থেকে ভারি। জান্নাতে যাওয়া তার জন্য সহজ হবে।

(ঢাকাটাইমস/৯ ডিসেম্বর/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
’সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেপ্তার হয়নি, নুরুল হুদার সঙ্গে মব জাস্টিসের বিষয়ে ব্যবস্থা’
‘অভিমানে’ দলের নেতৃত্ব ছাড়ছেন শান্ত!
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত, মোট প্রাণহানি ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় নামল চালকবিহীন ‘রোবোট্যাক্সি’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা