বায়ু দূষণের পেছনে গাড়ির দূষিত ধোঁয়া
রাজধানীতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানে দেখা গেছে বেশিরভাগ গাড়িই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি দূষিত ধোঁয়া ছাড়ছে। এটিকে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এছাড়া প্রায় প্রতিটি গাড়িতেই আবার বেঁধে দেওয়া মাত্রার চেয়ে উচ্চ শব্দের হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও সড়কে চলাচলকালী যানবাহন পরীক্ষা করে জানতে পেরেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সবচেয়ে দূষিত নগরের তালিকায় ঢাকার নাম আসার মধ্যে বুধবার ঢাকা ও আশপাশের পাঁচটি এলাকায় অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর মধ্যে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অভিযানে বাস, ট্রাক ও পিকআপ মিলিয়ে নয়টি গাড়ি পরীক্ষা করতে দেখা যায়। এর সাতটিরই ধোঁয়া ছিল সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যানবাহনের নির্গত ধোঁয়ার ঘনত্বের সহনীয় মাত্রা ৬৫ এইচএসইউ। এর মধ্যে একটি গাড়িতে পাওয়া যায় ৯৫, একটিতে ৯২। আরও পাঁচটি গাড়িতে ধোঁয়ার ঘনত্ব ছিল সহনীয় মাত্রার বেশি।
২২ জানুয়ারি সুইস বায়ুমান পর্যবেক্ষক সংস্থা আইকিউএয়ারের শহরভিত্তিক এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) সবচেয়ে বাজে দশা ছিল ঢাকার বাতাসের। সেদিন স্কোর ছিল ২৭১, যে মাত্রা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর ও ঝুঁকিপূর্ণ’।
আইকিউ এয়ারের গতকালের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বাতাসের মান (একিউআই) ১৬৩।
একিউআই ১০১-১৫০ হলে সেই বাতাস স্পর্শকাতর শ্রেণির মানুষের (শিশু, বৃদ্ধ, শ্বাসকষ্টের রোগী) জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং ১৫১-২০০ হলে তা সবার জন্যই অস্বাস্থ্যকর বিবেচিত হয়। আর একিউআই ২০১-৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ পেরিয়ে গেলে সেই বাতাসকে বিপজ্জনক ধরা হয়।
এ বিষয়টি সামনে আসার পর মঙ্গলবার বায়ু দূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মহানগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার নির্দেশ দেন পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।
এরপর ঢাকায় তিনটি, গাজীপুরে একটি এবং সাভারে একটি করে আদালত অভিযান চালায়।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ের অভিযানে আসেন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনও। তিনি বলেন, বায়ু দূষণ রোধে মন্ত্রণালয় সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। অভিযান জোরদার করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
আমরা সিটি করপোরেশনকে বলেছি- রাস্তায় ধুলাবালি বেশি হচ্ছে যেন নিয়মিত তারা পানি ছিটায়। যেসব যানবাহন সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি ধোঁয়া ছাড়ে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিআরটিএকে বলা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য যেন বায়ু দূষণ না হয় তাও দেখা হচ্ছে।
বায়ু দূষণের পেছনে মানুষের অসচেতনতা ‘অনেকাংশে দায়ী’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, মানুষকে সচেতন করা দরকার। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও ভূমিকা পালন করতে হবে। এ বিষয়ে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি।
সড়কে হর্নের অত্যাচারও নতুন নয়। কেবল অকারণে হর্ন বাজানোই নয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের এই অভিযানে দেখা গেছে, গাড়িগুলোতে যে হর্ন ব্যবহার করা হয়, তার শব্দের মাত্রা সরকারের অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ের অভিযানে পাঁচটি গাড়ি পরীক্ষা করে প্রতিটিতেই সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দে হর্ন বাজাতে দেখা গেছে।
রাজধানীতে শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা সময় ও এলাকা ভেদে আলাদা। নীরব এলাকায় রাতে সর্বোচ্চ মাত্রা ৪০ ডেসিবল আর দিনে ৫০।
আবাসিক এলাকায় রাতে ৪৫ ও দিনে সর্বোচ্চ ৫৫ ডেসিবল শব্দ করা যাবে। মিশ্র এলাকায় যথাক্রমে ৫০ ও ৬০ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৬০ ও ৭০ ডেসিবল এবং শিল্প এলাকায় তা রাতে ৭০ এবং দিনে সর্বোচ্চ ৭৫ ডেসিবল শব্দ করা যাবে।
আর একটি গাড়িতে যেহেতু একটিই হর্ন থাকে, তাই তা ৪০ ডেসিবলের নিচে থাকার কথা। কিন্তু যে পাঁচটি গাড়ি পরীক্ষা করা হয়েছে, তার হর্নের শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ১১০ ডেসিবল। অন্য চারটি যথাক্রমে ১০১, ৯৯, ৯৮ ও ৯৭ ডেসিবল।
উচ্চ শব্দের হর্ন বাজানোর কারণে হানিফ পরিবহনের একটি বাসকে জরিমানাও করা হয়। তবে ওই বাসের চালক রুহুল আমিন বোঝেননি কী কারণে তার জরিমানা হলো।
তিনি বলেন, এইটা তো হাইড্রোলিক হর্ন না। এইটা টিটি হর্ন, বেশি শব্দ হয় না। কিন্তু তারা (পরিবেশ অধিদপ্তর) বলছে- বেশি শব্দ হয়। এ জন্য ৩ হাজার টাকা জরিমানা করছে।
(ঢাকাটাইমস/০১ ফেব্রুয়ারি/আরআর/আরকেএইচ)