মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করে যেসব ভেষজ গাছ
ভ্যাপসা গরমের এ মৌসুম অনেকেরই মাথা ব্যথার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাড়ির বাইরে সূর্যের তাপের সংস্পর্শে মাইগ্রেনের সমস্যা জটিল হয়ে ওঠে।
মাইগ্রেনের ব্যথা মাথার যেকোনো একপাশ থেকে শুরু হয়ে ধীরে ধীরে তা পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয়।
মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা। মাথার যেকোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে অনেক সময় পুরো মাথায় ব্যথা করে। এতে মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে, সেগুলো মাথাব্যথার শুরুতে স্ফীত হয়ে যায়। মাথাব্যথার সঙ্গে বমি এবং বমি বমি ভাব রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে।
সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় ‘পেইনকিলার’ জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যথার ওষুধ খেলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু ঘরোয়া টোটকাও রয়েছে। এমন কিছু ভেষজ রয়েছে যেগুলি ব্যবহার করলে মাইগ্রেনের ব্যথায় আরাম মিলতে পারে।
মাইগ্রেন কমাতে তুলসী পাতা
সবার প্রথমেই বলা যেতে পারে বাসিল বা তুলসী গাছের কথা। ইটালিয়ান এই পাতা ফুটিয়ে তা ছেঁকে নিয়ে চায়ের মতো খেলে মাইগ্রেনের ব্যথায় উপকার পাওয়া যায়। চাইলে অন্দরমহলের টবে এই গাছ রাখতে পারেন। মাথাব্যথা বা ঘোরায় টোটকা হিসাবে তুলসী ব্যবহার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পানিতে তুলসী পাতা ফুটিয়ে সেই পানীয় খেতে পারেন। আবার তুলসী পাতা ছিঁড়ে সেই ঘ্রাণ নিলেও অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়।
পুদিনা গাছের পাতা
পুদিনা পরিবারের সদস্য ক্যাটনিপ। এর মধ্যে প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। পাশাপাশি মানসিক চাপ থেকেও কিছুটা রেহাই দিতে পারে। যা মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে উপকারী। চাইলে পুদিনা গাছও রাখতে পারেন তাতেও শরীর ঠান্ডা থাকবে। পুদিনা গাছের পাতা মাইগ্রেনের ব্যাথা কমায়। লেবুর রস দিয়ে বানানো শরবত বা ঠান্ডা কোনও পানীয়ে মিশিয়ে নিতে পারেন পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতার নির্যাস মাথা ব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। পুদিনা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। উপকারী যত উদ্ভিদ আছে, তার মধ্যেপুদিনা একটি। পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েল বা পুদিনার তেল দিয়ে মাইগ্রেন ম্যাসাজ করা। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েলের সক্রিয় উপাদান মেন্থল মাথাব্যথা উপশম করতে পারে। কয়েক ফোঁটা পিপারমিন্ট এসেনশিয়াল অয়েলের (পুদিনার তেল) সঙ্গে কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মেশান। তেলের এই মিশ্রণ দিয়ে কপালে ও কপালের দুপাশে তর্জনি ও মধ্যমা আঙুলের সাহায্যে বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করুন। এক মিনিট ধরে ম্যাসাজ করতে থাকুন। কয়েক মিনিটের মধ্যে আপনার মাইগ্রেনের কমে যাবে।
ক্যামোমাইল ফুলের চা
ক্যামোমাইল ফুলের চা মাইগ্রেনের ব্যথা কমায়। ২০১৬ সালে ফাইটোমেডিসিন নামের একটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়। সেখানেই মন শান্ত রাখার জন্য (যা মাইগ্রেনের জন্য জরুরি) ক্যামোমাইল ফুলের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার ঠিক কি ঠিক নয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়। মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে চায়ের মাধ্যমেই এই ফুলের স্বাদ নেওয়া যেতেই পারে। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকতে পারে। তাই ডাক্তারদের পরামর্শ নিয়েই এটি খাওয়া যেতে পারে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
মাইগ্রেন কমাতে রোজমেরি
চুলের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে অনেকেই রোজমেরির মতো ভেষজ ব্যবহার করেন। এই ভেষজটি মাইগ্রেনের সমস্যাতেও দারুণ কাজ করে। এই ভেষজ দিয়ে তৈরি পানীয় খেলে বা রোজমেরি অয়েল কপালের দু’পাশে মালিশ করলেও আরাম মেলে।
ল্যাভেন্ডার ফুল
শুধু ত্বকের যত্নে নয়, মাথা ব্যথাতেও দারুণ কাজ করে ল্যাভেন্ডার। এ ক্ষেত্রে ল্যাভেন্ডার অয়েল কপালের দু’পাশে ম্যাসাজ করলেও আরাম মিলতে পারে। আবার শুকনো ল্যাভেন্ডার ফুলের পাপড়ি দিয়ে তৈরি পানীয় খেলেও মাইগ্রেনের ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়। ল্যাভেন্ডার ফুলের গন্ধ মন শান্ত করে। এমনটাই বলেন অনেকে। ফলে এই গাছ বাড়িতে রাখা ভাল। যদি শুকনো ল্যাভেন্ডার ফুল ব্যবহার করতে হয় তাহলে এক লিটার পানিতে ১৫ গ্রাম ফুল ব্যবহার করবেন।
(ঢাকাটাইমস/৩০ মে /আরজেড)