শরীরের বিষ দূর করার কার্যকরী পানীয়

পরিবেশ দূষণের কারণে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ায় প্রতিনিয়ত আমাদের দেহে প্রবেশ করছে প্রচুর পরিমাণ বিষাক্ত পদার্থ। এসব বিষ শরীরে নানা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। অনেকেই ঘরের বাইরে রেস্তোরাঁ বা স্ট্রিট ফাস্টফুডে খেতে পছন্দ করেন। ফাস্টফুডের সঙ্গে তৃপ্তি মেটাতে কৃত্রিম ফ্রুট জুস, নরম পানীয় দেদারসে পান করছেন। এসব ফাস্টফুড ও কৃত্রিম পানীয়ের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ লুকনো চিনি ও লবণ। যা অজান্তেই আমাদের প্রদাহ জনিত সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে শরীরে আসে অস্বস্তিও। শরীরে বিষের পরিমাণ বেড়ে যায়।
আসলে বাইরের খাবারে রয়েছে তেলের আধিক্য। তাই এই ধরনের খাবার খেলে শরীরে এলডিএল কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এই ধরনের খাবারে থাকে অত্যধিক পরিমাণে লবণ ও মশলা। এই সকল উপাদানও কিন্তু শরীরের জন্য খারাপ। তাই বাইরের খাবার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজারে বাইরের খাবারে কামড় দিয়েই ফেলেন, সেক্ষেত্রে শরীর ডিটক্স করার উপায়ও জানতে হবে। তাহলেই দেহে উপস্থিত ক্ষতিকর সব পদার্থকে বের করে দিতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে এই কয়েকটি ডিটক্স পানীয়কে ডায়েটে জায়গা করে দিতে ভুলবেন না যেন।
শরীরের ভেতরে থাকা সব দূষিত উপাদান বের করে দেওয়ার জন্যই ডিটক্স ওয়াটার-এর ব্যবহার। কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া বানিয়ে নেওয়া যায় ডিটক্স ড্রিংকস। এক্ষেত্রে পানি, বিভিন্ন ধরনের ফল, পুদিনা পাতা, আদা এই ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। তবে কিছুক্ষেত্রে সবজিও ব্যবহার করা হয়। এগুলোর বিভিন্ন ধরনের হেলথ বেনিফিটস আছে। এগুলো আমাদের পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। এটি ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ওজন দ্রুত কমে যায়। এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। এটি কিডনি এবং লিভার পরিষ্কার করে। এগুলো পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। এটি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখে। এতে আপনার মেটাবলিজম দ্রুত কাজ করে। জেনে নিন শরীরের বিষ দূর করে যেসব কার্যকরী পানীয়
পুদিনার চা
পুদিনায় রয়েছে মিন্থল ও মিন্থোন নামক দুটি উপকারী উপাদান। এই দুটি উপাদান কিন্তু শরীরকে ডিটক্সিফিকেশন সাহায্য করে। এছাড়া পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের খনি। এই সকল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট র শরীর থেকে ক্ষতিকর সব পদার্থ বের করে দিতে পারে। তাই আজেবাজে খাবার খাওয়ার পর এক কাপ পুদিনা চা খাওয়ার চেষ্টা করুন। সেক্ষেত্রে এক কাপ মতো জলে কয়েকটি পুদিনা পাতা ফেলে ফুটিয়ে নিন। তরপর ছেঁকে খেয়ে নিন। এতেই মিলবে উপকার।
আদা ও লেবুর চা
আদ ও লেবুর চায়ের কম্বিনেশন কিন্তু একাধিক সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। আসলে আদা এবং লেবু- এই দুই খাদ্যেই রয়েছে অনেকটা পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে দেহে উপস্থিত ক্ষতিকর সব পদার্থকে বের করে দেওয়ার কাজে এদের কোনও জুড়ি নেই। এছাড়া এই চা খেলে দেহে বিপাকের হারও দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়। ফলে সহজেই শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে যেতে পারে। তাই আর দেরি না করে আদা-লেবুর চা বানিয়ে খেয়ে নিন।
হলুদ চা
হলুদ একটি অনন্য ভেষজ। তাই আয়ুর্বেদে এই ভেষজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের কথায়, হলুদে উপস্থিত রয়েছে একাধিক উপকারী উপাদান। আর এই সকল উপাদান খুব সহজেই দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে পারে। তাই রবিবার ভূরিভোজ করার পর আপনাকে হলুদের চা খেতেই হবে। এক্ষেত্রে এক কাপের মতো জলে একটা ছোট টুকরো হলুদ মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর ছেঁকে খেয়ে ফেলুন। এতেই মিলবে উপকার।
ক্যামোমাইল চা
ক্যামোমাইল ফুল দিয়ে তৈরি চা খেলে কিন্তু একাধিক জটিল অসুখকে হেলায় হারানো সম্ভব। এমনকী শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ক্ষতিকর সব পদার্থ। তাই আজেবাজে খাবার খাওয়ার পর শরীরকে ডিটক্স করার জন্য এই সুবাসিত চা খেতেই পারেন। এতেই সুস্থ থাকবে শরীর। দূরে রাখা যাবে একাধিক জটিল অসুখ।
বিটের রস
রক্তাল্পতা ও রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে আসতে পারে বিট। এ ছাড়াও থাইরয়েড ও হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা থেকে বাঁচতেও বিট দারুণ কাজ করে। বিটে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে। ফলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কোলেস্টরলকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে এই সব্জি। নিয়ম করে বিটের রস পান করতে হবে সকালে। ভাল করে পরিষ্কার করে ব্লেন্ডারে ঘুরিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন বিটের স্মুদিও।
মেথি ডিটক্স ওয়াটার
মেথির গুণের শেষ নেই। ডায়াবিটিসের মতো ঘাতক অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে মেথি। এমনকী এই প্রাকৃতিক উপাদানের গুণে ওজন কমে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়মিত মেথি খেতে হবে। আর এক্ষেত্রে মেথি জলপান করতে পারলেই সবথেকে বেশি উপকার মিলবে। একগ্লাস পানিতে এক চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রেখে দিন। তারপর সকালে উঠে সেই পানি পান করুন। এতেই দেখবেন উপকার মিলবে। বেরিয়ে যাবে শরীরে উপস্থিত সব বিষ!
আপেল ডিটক্স ওয়াটার
প্রতিদিন একটি আপেল খেলে রোগ-ব্যাধি দূরে থাকে। প্রয়োজন পড়ে না চিকিৎসকের। আপেলে থাকা ফাইবার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আপেলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের উপস্থিতির কারণে কোষগুলো থেকে ক্ষতিকর পদার্থ সহজেই নির্গত হয়। বিটের মতো আপেল দিয়েও একই রকমের পানীয় তৈরি করে ফেলতে পারেন। তবে ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে একটি সামলে খেতে হবে আপেলের তৈরি পানীয়।
গাজর ডিটক্স ওয়াটার
গাজরে থাকে বিটা ক্যারোটিন। আমাদের শরীর এই ক্যারোটিনকে ভিটামিনে রূপান্তরিত করে। এই উপাদান চোখ ভাল রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর। ভিটামিন এ শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বার করে দিতে সাহায্য করে। তাই সকালে এক কাপ গাজরের রস পান করতে পারেন সকাল সকাল।
লেবু ডিটক্স ওয়াটার
লেবু ডিটক্স ওয়াটার হজমশক্তি উন্নত করতে এবং ওজন কমানোর জন্য সেরা ঘরোয়া প্রতিকার। লেবু মানে ভিটামিন সি। লেবু ধুয়ে তিন থেকে চারটি পাতলা করে কেটে নিন। একটি কাচের পাত্রে পরিষ্কার জল ভরে তাতে এই টুকরোগুলি মিশিয়ে নিন। লেবুর টুকরো সহ দুই-তিনটি পুদিনা পাতা দিন। সারাদিন ধীরে ধীরে চুমুক দিয়ে এই জল পান করুন। এটি শরীরকে হালকা করে, ভিটামিন সি-এর ঘাটতি দূর করে, ডায়েট করতে সাহায্য করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
শসা ডিটক্স ওয়াটার
শসার ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি পাওয়া যায়। এটি প্রস্তুত করতে, এক গ্লাস জলে কিছু শসার টুকরো রাখুন, এবার লেবুর রস, কালো লবণ এবং কিছু পুদিনা পাতা যোগ করুন, একটি চামচ দিয়ে মিশিয়ে পান করুন।
কমলা ডিটক্স ওয়াটার
কমলার ডিটক্স ওয়াটারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি শরীরের চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সাহায্য করে, তাই এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে এবং ওজন কমায়। কমলালেবুর টুকরোগুলো পানিতে কয়েক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখেই পান করতে পারেন। তাতেই মিলবে সব পুষ্টিগুণ।
দারুচিনি ডিটক্স ওয়াটার
ডায়েটিশিয়ানরাও ডিটক্স ওয়াটারে এক টুকরো দারুচিনি যোগ করার পরামর্শ দেন। দারুচিনি ও আদার ডিটক্স ওয়াটার শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখে, প্রদাহ দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও দারুচিনি রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে।

মন্তব্য করুন