কত মানুষের ভার নিতে পারবে আমাদের পৃথিবী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩৫

পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অতিরিক্ত জনসংখ্যা যেকোন দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। কারণ প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অতিরিক্ত জনসংখ্যা সরাসরি প্রভাব ফেলে। কোন দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ভূমির উপর। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খাদ্য ও বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়৷ খাদ্যের চাহিদা মেটানোর জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হয়।

মানুষের অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা বাড়াতে প্রতিবছর পালন করা হয় বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ১৯৯০ সালের ১১ জুলাই প্রথম বারের মতো ৯০টি দেশে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উদযাপিত হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য— ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি : নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’। বহু মানুষ তাঁদের লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণী, ধর্ম, যৌন অভিমুখ, অক্ষমতা এবং নাগরিকত্বের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য, হয়রানি এবং হিংসার সম্মুখীন হন। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বহু জায়গাতেই মানবাধিকারও খর্ব হয়। এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই দিনটি পালন করা হয়।

আধুনিক মানুষ হোমো সেপিয়েন্সের যাত্রা শুরু প্রায় দুই লাখ বছর আগে। খ্রিষ্টপূর্ব ১,৯০,০০০ সালে আফ্রিকায় যাত্রা শুরু মানবজাতির। পৃথিবীর জনসংখ্যা ৮০০ কোটির মাইলফলক ছাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীতে প্রতি বছর জনসংখ্যা বাড়ছে প্রায় সাত কোটি। আর চিরনিদ্রায় শায়িত হন আরও প্রায় সাত কোটি। গবেষণায় দেখা গেছে, দুজন থেকে যাত্রা শুরু হয়ে প্রথম ৫০ হাজার বছর শেষে মানবজাতির সংখ্যা স্পর্শ করে ২০ লাখ। ৪২ হাজার বছরের ব্যবধানে ৮০০০ খ্রিষ্টপূর্বে জনসংখ্যা ৫০ লাখের (৫ মিলিয়ন) মাইলফলক স্পর্শ করে। বলা হয় প্রায় দুই হাজার বছর আগে যিশুখ্রিষ্টের জন্মের সময় পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৩০ কোটি।

পৃথিবীতে জন্ম নেয়া মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বা ৮ বিলিয়ন এখন জীবিত রয়েছে। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে ১০ হাজার কোটি (১০০ বিলিয়ন) মানুষ। জাতিসংঘের ধারণা অনুযায়ী, পৃথিবীর জনসংখ্যা ১০৪০ কোটিতে পৌঁছানোর পর এ সংখ্যাটি মোটামুটি দুই দশক স্থির থাকবে। এরপর জনসংখ্যা ক্রমশ আবার কমতে থাকবে।

২০৭০ বা ২০৮০ সালের মধ্যে আমরা 'পিক হিউম্যান' মুহূর্তে পৌঁছাব। তখন বৈশ্বিক জনসংখ্যা হবে ৯৪০ থেকে ১০৪০ কোটি। জাতিসংঘের ধারণা অনুযায়ী, জনসংখ্যা ১০৪০ কোটিতে পৌঁছানোর পর এ সংখ্যাটি মোটামুটি দুই দশক স্থির থাকবে। এরপর জনসংখ্যা ক্রমশ আবার কমতে থাকবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সার্বিকভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জন্মহার কমেছে। তবে আগামী কয়েক দশকে প্রাক্কলিত বৃদ্ধির একটি বড় অংশ আসবে ৮টি দেশ থেকে। এই দেশগুলো হলো—কঙ্গো, মিসর, ইথিওপিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও তানজানিয়া।

জাতিসংঘের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারত বিশ্বে সবথেকে জনবহুল দেশে পরিণত হয়েছে। সেই তালিকায় চীন রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় স্থান দখল করে রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা যুক্ত দশটি দেশ হল- ভারত ১৪২.৮৬ কোটি, চীন ১৪২.৫৭ কোটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৩৩.৪২ কোটি, ইন্দোনেশিয়া ১৮.১৫ কোটি, পাকিস্তান ২৩.২৮ কোটি, নাইজেরিয়া ২২.০৪ কোটি, ব্রাজিল ২১.৬৭ কোটি, বাংলাদেশ ১৬.৯২ কোটি, রাশিয়া ১৪.৬১ কোটি ও মেক্সিকো ১৩.২৭ কোটি।

বাংলাদেশে সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন এবং নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। বাকিরা তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ গ্রামে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করেন।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বৈশ্বিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক পরিবেশবাদীই মনে করেন, বর্তমানে আমরা যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি এগুলো অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে নয়, বরং মানুষের মাত্রাতিরিক্ত হারে ভোগের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঘটছে।

অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে বাসস্থান চাহিদা মেটানোর জন্য গাছ কেটে যথেচ্ছা দালানকোঠা নির্মাণ আমাদের পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। গাছপালা কেটে ভূমি উন্মুক্তের ফলে মাটির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়৷ অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বন উজাড় করে স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, শিল্প-কারখানা নির্মাণ পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করে৷

জনসংখ্যা বৃদ্ধি মানে পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া। কারখানার বর্জ্য পানিতে নিক্ষেপ মানে জলজ উদ্ভিদ, কচুরিপানা, প্ল্যাংটন, শেওলা প্রভৃতি জন্মতে না পারা। এতে জলে বসবাসকারী মাছসহ অনেক জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, জলজ সম্পদ দিন দিন কমতে থাকে।

মানুষের সংখ্যা যত বেশি হবে, তারা তত সেবা ও পণ্য তৈরি করতে পারবে এবং বেশি ভোগ করতে পারবে- তাই অর্থনীতির সর্বোত্তম বন্ধু হলো জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তবে একটি দেশে মোট কতজন মানুষ আছে তা দেশটির অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নয়। বরং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও হ্রাস পাওয়ার হারটিই কোনো দেশের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তবে যতই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার চেষ্টা করা হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমাদের পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা কেবল বাড়তেই থাকবে। এ প্রবৃদ্ধি থামানো সম্ভব হবে না। ২০১৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে কোনো বৈশ্বিক দুর্ঘটনা, মহামারি, ভয়ংকর বিশ্বযুদ্ধ, এমনকি পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এক-সন্তান নীতি গ্রহণ করা হলেও আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০০ কোটিতে পৌঁছাবে।

পৃথিবী কত মানুষের ভার নিতে পারে, এমন প্রশ্নের দুটি দিক থাকে—প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা ও আমাদের পছন্দসমূহ। গবেষকদের মতে, আমাদের পছন্দের পরিণতি হলো—এই গ্রহ প্রতিবছর যে পরিমাণ পুনরুৎপাদন করতে পারে, এর চেয়ে মানবজাতির অনেক বেশি জৈবিক সম্পদ ভোগ যেমন বন, ভূমি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যধিক ব্যবহার আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী।

ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে সবার সঙ্গে মিলেমিশে বাস করা ও পরিবেশ রক্ষা করার কোনো টেকসই উপায় খুঁজে পাওয়াটাই মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সকলের উচিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্পর্কে নিজে সচেতন হওয়া ও সচেতনতা তৈরি করা।

(ঢাকাটাইমস/১১ জুলাই/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :