হিজবুল্লাহর হাতে ইরানি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধে জড়াতে কতটা প্রস্তুত?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ২৩:১৮

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র দল হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে দেশটির পৌনে তিন শ সেনাসহ ১৪০০ জনের মৃত্যু হয়। এরপর ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকা অবরোধ করাসহ শহরের ওপর ব্যাপক বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে, যাতে ছয়শোর বেশি শিশুসহ আড়াই হাজারের বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।

ইসরায়েলে বিমান হামলা শুরুর পর থেকেই লেবানন-ইসরায়েল সীমান্ত উত্তপ্ত। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে দখলিকৃত ভূখণ্ডে থাকা ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা ছুড়ছে হিজবুল্লাহ। গোলা ছুড়ে পাল্টা জবাবও দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা বন্ধ না করলে কিংবা স্থল অভিযান শুরু করলে লেবাননের হিজবুল্লাহ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিলিশিয়া বাহিনীটি ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে যে, তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

ওয়াশিংটন ডিসির একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ নিকোলাস ব্লানফোর্ড বলছেন, অতীতের যে কোনো সময়ের বর্তমানে হিজবুল্লাহ এই ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে।

সহিংসতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন যে, হিজবুল্লাহ তার নেতাদের এবং তাদের ইরানি সমর্থকদের নির্দেশে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারে। বিশ্লেষকরা আল জাজিরাকে বলেছেন, এই বিষয়টি হামাস এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর চাপ উপশম করতে পারে। তবে এটি লেবাননের জন্য ধ্বংসাত্মক এবং ইসরায়েলের জন্য ব্যয়বহুল হবে। হিজবুল্লাহর হামলায় ইতোমধ্যে লেবানন সীমান্তের ওপারে ইসরায়েলি উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, তারা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট খুলতে আগ্রহী নয়। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, উত্তরাঞ্চলীয় ফ্রন্টে যুদ্ধে জড়োনোর কোনো আগ্রহ নেই ইসরায়েলের। হিজবুল্লাহ যদি সংযত থাকে, তাহলে সীমান্তের পরিস্থিতি আগের মতোই রাখবে ইসরায়েল।

এদিকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ঘটবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এই হুমকি দিয়েছেন। ইরানের শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেছেন, ইরান নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে এই পরিস্থিতি দেখতে পারে না।

ইসরায়েল ও হামাসের মাঝে চলমান যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটলে এই সংঘাতে ইরানের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে লেবাননের সঙ্গে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্রও তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও ইতোমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।

হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা সম্পর্কে যা জানা দরকার

২০০৬ সালের জুলাইয়ে হিজবুল্লাহ তার সীমান্তে দুইজন ইসরায়েলি যোদ্ধাকে আটক করে। যার ফলে ইসরায়েল ব্যাপক সামরিক প্রতিক্রিয়া শুরু করে। ৩৪ দিনব্যাপী যুদ্ধে হয়। এতে হাজারের বেশি লেবাননের নাগরিক এবং ১৬৫ ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল। তবে কেউই চূড়ান্তভাবে যুদ্ধে জিততে পারেনি। পরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর দ্য রেড ক্রসের মতে, ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ৩০ বাড়ি, ১০৯টি সেতু এবং ৭৮টি চিকিৎসা সুবিধা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।

নিকোলাস ব্লানফোর্ড বলছেন, বর্তমানে ইসরায়েলে আঘাত করার জন্য হিজবুল্লাহর কাছে তিন থেকে ৫ হাজার উন্নতমানের স্বল্প পাল্লার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

গত ১৭ বছরে হিজবুল্লাহ তার সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে।

ব্লানফোর্ড আল জাজিরাকে বলেন, “আমি মনে করি ১৯৪৮ সালে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে।

হিজবুল্লাহ আজ কতটা শক্তিশালী?

ব্লানফোর্ড অনুমান করেছেন যে নিয়মিত ও রিজার্ভসহ হিজবুল্লাহর কমপক্ষে ৬০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহর ২০০৬ সালের ১৪ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। সেখান থেকে মজুদ বাড়িয়ে এখন প্রায় দেড় লাখ করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিভাগই স্বল্প-পাল্লার।

সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো হিজবুল্লাহর কাছে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে, যার সীমা ৩০০ কিলোমিটার।

ব্লানফোর্ড বলেন, হিজবুল্লাহর "বিশেষ বাহিনী" রয়েছে, যারা ইসরায়েলে অনুপ্রবেশের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

তিনি আল জাজিরাকে বলেন, "এটি সম্ভবত অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর ধরে হিজবুল্লাহকে তাদের প্রাথমিক হুমকি হিসাবে বিবেচনা করেছে।"

মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের কনফ্লিক্ট অ্যান্ড রেজোলিউশন প্রোগ্রামের ডিরেক্টর রান্ডা স্লিমও আল জাজিরাকে বলেছেন যে, সিরিয়ার যুদ্ধে অংশ নিয়ে হিজবুল্লাহ তার যুদ্ধের সক্ষমতা অনেক বাড়িয়েছে।

‘সিরিয়ায়, যেটি একটি দীর্ঘায়িত যুদ্ধ ছিল। এই শহুরে যুদ্ধে বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে তারা নতুন দক্ষতা অর্জন করেছে। তাদের গোয়েন্দা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে।’

এদিকে লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর হামলা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তের কাছের গ্রামগুলোর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ বাসিন্দাকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, উত্তরাঞ্চলে লেবানন সীমান্তের কাছে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে চার কিলোমিটার এলাকায় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬অক্টোবর/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

কানাডায় শিখ নেতা হরদীপ হত্যাকাণ্ডে আরও ১ জন গ্রেপ্তার

আগামী বছরই অবসর নেবেন মোদি, প্রধানমন্ত্রী হবেন অমিত শাহ: বিস্ফোরক দাবি কেজরিওয়ালের 

৩ লাখ ফিলিস্তিনিকে পূর্ব রাফাহ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে: ইসরায়েল

রাফাহ শহর ও সীমান্ত কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ব্রাজিলের বন্যা বিপর্যয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৭

পৃথিবীতে শক্তিশালী সৌরঝড়ের আঘাত, ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের শঙ্কা

ফের রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হলেন মিখাইল মিশুস্টিন

ইসরায়েল সম্ভবত গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে: যুক্তরাষ্ট্র

ভারী বৃষ্টিপাতে আফগানিস্তানে আকস্মিক বন্যা, নিহত অন্তত ৬০

বিশ্ব ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে: মাহমুদ আব্বাস

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :