কর্মসূচির দৌড়ে এগিয়ে রওশনের জাতীয় পার্টি

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২৪, ০৮:৫৪

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টিতে চলছে দেবর-ভাবির রশি টানাটানি। দলের মূল নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে এ দ্বন্দ্বের বিষয়টি আদালতে চলমান। আর মূল জাতীয় পার্টি কোনটি তা নিয়েও চলছে আধিপত্যের লড়াই। এ অবস্থায় দলের কর্মসূচি নিয়ে দুই অংশ অনেকটা দুই মেরুতে অবস্থান করছে। জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপায় দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি নেই বললেই চলে। কর্মসূচির দৌড়ে এগিয়ে আছে রওশনের জাতীয় পার্টি। দুই অংশের দ্বন্দ্বে আগামীতে জাতীয় পার্টির গন্তব্য কোথায় এ নিয়ে অনিশ্চয়তায় মাঠের নেতাকর্মীরা।

এদিকে জিএম কাদেরের অংশের সক্রিয় কর্মকাণ্ড না থাকা এবং জনদুর্ভোগ ও বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করতে না পারা নেতৃত্বের ব্যর্থতা বলছেন খোদ সেই অংশের নেতারা।

৯ মার্চ আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেদের আলাদাভাবে জানান দেয় রওশন অনুসারী জাতীয় পার্টি। নতুন ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই এই অংশ কর্মসূচিমুখী থাকলেও রাজপথে কার্যত কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি জিএম কাদের অনুসারী জাতীয় পার্টি।

গত ৯ এপ্রিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জিএম কাদের তার অংশের বর্ধিত সভা ডাকলে একই দিনে আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে পরিচিতি সভা ডাকে রওশন অনুসারী জাতীয় পার্টি। একপর্যায়ে বর্ধিত সভায় নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে সারাদেশ থেকে ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জনবল নিয়ে আসার জন্য একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। পাশাপাশি রওশন অনুসারীরাও পরিচিতি সভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে। করা হয় বিপুলসংখ্যক ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টার। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হলে একপর্যায়ে রওশন অনুসারী জাতীয় পার্টি পরিচিত সভা প্রত্যাহার করে ৯ এপ্রিল থেকে পক্ষকালব্যাপী তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ জনসাধারণের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচি পালন করে। তারা রাজধানীর বিভিন্ন থানাসহ বিভিন্ন জেলায় এই কর্মসূচি পালন করে।

জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধীদল হলেও এই তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ জনসাধারণের পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। এমনকি মহান মে দিবস উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ সকল রাজনৈতিক দল কর্মসূচি দিলেও তারা দেননি কোনো কর্মসূচি।

তবে জাতীয় পার্টির জিএম অংশের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন নিজ উদ্যোগে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ছাতা, জুস, পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করেন। পাশাপাশি রওশন এরশাদ অংশের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সাহিদুর রহমান টেপাও পক্ষকালব্যাপী নিজ উদ্যোগে জনসাধারণের মাঝে স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করেন।

অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এবারই প্রথম মহান মে দিবস উদযাপন করেনি এরশাদের সহোদর জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। সেদিন নতুন প্রতিষ্ঠিত রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি রাজধানী ঢাকা, সিলেট, খুলনাসহ অনেক জেলায় মে দিবস পালন করে। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টি (জিএম কাদের) ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল আলম রুবেল বলেন, এটি আসলে নেতৃত্বের ব্যর্থতা। রাজনীতি করতে হলে জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কথা বলতে হবে। বিভিন্ন জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দিবস সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

এ বিষয়ে জিএম কাদের অনুসারী জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, আসলে মূলস্রোত হিসেবে জিএম কাদেরের সাথে আছি। কিন্তু বাস্তবতা এই দলে কোনো রাজনীতি নেই। নেই কোনো কর্মসূচি। জাপার বনানী ও কাকরাইল কার্যালয়ও নেতাকর্মী শূন্য। মানুষ এখন জাতীয় পার্টির কথা শুনলে হাসে। তাছাড়া কর্মসূচি দিলেও নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত আমরা। তারপরও বলবো শেষ পর্যন্ত জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টিই টিকে থাকবে।

এ বিষয়ে রওশন এরশাদ অনুসারী জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টি সরকারের অনুগত বিরোধীদল। সরকারের অনুমতি ছাড়া তারা জনসাধারণকে পানি খাওয়াবে কিভাবে? মে দিবস পালন করবে কিভাবে? মে দিবস উদযাপন বা পানি খাওয়াতে তাদের সরকারের অনুমতি প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির জিএম কাদের অনুসারীর মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কে কি কর্মসূচি পালন করেছে এটি আমাদের কাছে কোনো সাবজেক্ট না। শ্রমিক পার্টি মে দিবসে আলোচনা সভা করেছে। কারো সাথে আমরা কোনো বিষয়ে কম্পেয়ার করি না।’ রওশন অনুসারী জাতীয় পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, দেশ ও জনগণের পক্ষে কাজ করেছেন পল্লীবন্ধু এরশাদ। তারই আদর্শ ধারণ করে আমরা জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাদের সাথে রয়েছেন। যারা এরশাদের আদর্শ ধারণ করে না তারাই জিএম কাদেরের সাথে আছেন। আসলে জিএম কাদের রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন। তাই তারা মে দিবস পালন করতে পারে না, জনগণের পাশে দাঁড়ায় না।

জিএম কাদেরের অংশের জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বলেন, তীব্র দাবদাহের কারণে আওয়ামী লীগ-বিএনপি অনেক কর্মসূচি বাদ দিয়েছে। তারাও (রওশন অনুসারী) একটি কর্মসূচি বাদ দিয়ে পানি বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে। তীব্র দাবদাহের কারণেই আমরা সকল কর্মসূচি বাদ দিয়েছি।

(ঢাকাটাইমস/০৮মে/জেবি/কেএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :