ধেয়ে আসছে রেমাল: আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকা জরুরি

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ১৩ জুন ২০২৪, ২১:৩৭ | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২৪, ০৮:৪০

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ রূপান্তর হয়ে ধেয়ে আসছে উপকূলে।সে ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ আজ মধ্য রাতে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ-খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১১০-১২০ কিলোমিটার। এখন নিম্নচাপটি কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। শনিবার এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে রোববার দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘রেমাল’ হয়েছে কেন?

ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এর নামকরণ করেছে ওমান। আরবিতে যার অর্থ বালি। অবশ্য এই নামে ফিলিস্তিনের গাজা থেকে ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে একটি শহরও রয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হয় কীভাবে?

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও), এশিয়ার জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়। এ ছাড়া আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহাওয়া কেন্দ্র (আরএসএমসি), পাশাপাশি ক্রান্তিয় ঘূর্ণিঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রগুলোও ঘূর্ণিঝড়ের নাম প্রস্তুত করে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বিশ্বের ছয়টি আরএসএমসির মধ্যে আছে, যেগুলোকে উত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ডব্লিউএমও ও ইউএন এসকেপ (ইএসসিএপি) ভারত, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওমান নিয়ে গঠিত। ২০১৮ সালে ডব্লিউএমও ও এসকেপ আরও পাঁচটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে- ইরান, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, খরা, ভূমিধস, টর্নেডো, শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর ব্যাপক সম্পদ ও প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সম্পদ ও প্রাণহানির পরিমাণ ব্যাপক। এ বিষয়ে জনগণকে, বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে জনগণের করণীয় বিষয়গুলো জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে।

ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে করণীয়

সবসময় সতর্ক বার্তার দিকে নজর রাখুন এবং তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। কোনো গুজব ছড়াবেন না। এমন অবস্থায় আতঙ্কে মানুষ আরও দিশাহারা হতে পারে।

দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক আবহাওয়ার বার্তার দিকে খেয়াল রাখুন। ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক বার্তার মানে হলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদের ভয় আছে। তাই পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা সতর্ক থাকুন।

সমুদ্র উপকূলের নিম্নাঞ্চল কিংবা উপকূলের কাছে অন্যান্য নিম্নাঞ্চল থেকে দূরে থাকুন।

উঁচু স্থান বা সাইক্লোন শেল্টারে যাওয়ার পথ প্লাবিত হওয়ার আগেই নিরাপদে পৌঁছান। আপনার বাড়ি যদি উঁচু স্থানে নিরাপদভাবে নির্মাণ করা হয়, তা হলে সেখানকার নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিন।

জানালা কাচের হলে তা হার্ডবোর্ড দিয়ে ঢেকে রাখুন। ঘরের বাইরের দিকের দরজার ক্ষতি এড়াতেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন।

রান্না ছাড়া খাওয়া এমন খাবার সংরক্ষণ করুন। ঢাকনাওয়ালা পাত্রে অতিরিক্ত পানযোগ্য পানি সংরক্ষণ করুন।

বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হলে সম্ভাব্য বন্যার ক্ষতি এড়াতে মূল্যবান জিনিসপত্র উঁচু স্থানে রাখুন।

উপকূলীয় এলাকায় থাকলেঃ একেবারে সমুদ্রের ধারে কাঁচা বাড়িতে থাকলে আর সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের চরম সতর্কতা জারি হলে, প্রথমেই জরুরি জিনিস নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যান। সরকারি ‘সাইক্লোন সেন্টার’ বা সমুদ্র থেকে দূরে কোনও পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিন।

গুছিয়ে রাখুন: টাকা-পয়সা, জরুরি নথি, আধার, রেশন-প্যান কার্ডের মতো জরুরি জিনিস। যে হেতু ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টিও হয়, এক্ষেত্রে তাই অবশ্যই সমস্ত জিনিস মোটা কোনও প্লাস্টিকের মধ্যে রাখবেন। সঙ্গে রাখতে হবে অন্তত দু-দিনের জন্য শুকনো খাবার। যেমন চিঁড়ে, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তার খাবারও আগেই ব্যবস্থা করে রাখতে হবে।

বাড়িতে থাকলে: ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কী কী করবেন?একটু স্মরণ করিয়ে দেওয়া যাক।

বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হলে প্রথমেই এসি, টিভি, রেফ্রিজারেটর, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, গিজার, কম্পিউটারের প্লাগ খুলে রাখুন। যতটা সম্ভব তখন বিদ্যুৎ সংযোগের পরিষেবা কম ব্যবহার করুন। এমন সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে পড়ার আগেই দেখে নিন, বাড়ির ‘আর্দিং’ সঠিক আছে কি না।

ঝড়ের পূর্বাভাস থাকলে আগেই বাড়ির ছাদে বা আশপাশে এমন কোনও জিনিস রাখবেন না, যা উড়ে গিয়ে কারও আঘাত লাগতে পারে।

ঝড় মানেই বাড়ির বয়স্করা আম কুড়ানোর গল্প করেন। সে ভাবে আম গাছ না থাকলেও এখনও শহরাঞ্চলেও অল্প কিছু আম গাছ আছে। আর বিভিন্ন জেলায় আম বাগানও আছে। ছোটবেলার সেই আনন্দ উপভোগ করার জন্য ঝড়ের সময় আম কুড়োতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনবেন না।

মোবাইল ব্যবহার করবেন না। শুধু চার্জ দেওয়া নয়, ঝড়-বৃষ্টি বজ্রপাতের সময় মোবাইলে কথা বলা থেকে এমনকী বজ্রপাতের ছবি তোলা থেকেও বিরত থাকুন।

মোবাইল, ল্যাপটপ, এমার্জেন্সি লাইটে আগে থেকে চার্জ দিয়ে রাখুন। মোমবাতি ঘরে রাখুন। পানীয় ও স্নানের জল আগে থেকেই বেশি করে ধরে রাখুন। ঘূর্ণিঝড়ের সময় সকলের নিরাপত্তার কথা ভেবেই অনেক সময় বিদু্ৎ পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাই বিষয়টি মাথায় রেখে সতর্ক হন।

বাড়িতে জরুরি ওষুধ, অন্তত ২-৩ দিনের রেশন, শুকনো খাবার মজুত রাখুন।

অ্যাডভেঞ্চার করতে দয়া করে গাড়ি বা বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন না। বিপদ যে কী ভাবে আসবে বুঝতে পারবেন না। সাহস থাকা ভাল, তবে হঠাকারি সিদ্ধান্ত বিপদ ডেকে আনতে পারে। যদি জরুরি কাজে গাড়ি বা বাইক নিয়ে বের হতেই হয়, তা হলে অন্তত প্রবল ঝড়ের মুখে কোনও ধাবা বা শপিং মল বা কোনও কংক্রিটের ছাউনির নীচে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করুন।

তবে ঘূর্ণিঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাতে সুরক্ষার জন্য বাড়িতে থাকতে হলেও, দরজা-জানলা বন্ধ করে নিজেদের মতো খাওয়া-দাওয়া আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারেন, তাতে কোনও বাধা থাকছে না। বাইরে বেরিয়ে অ্যাডভেঞ্চারের চেষ্টা ‘নৈব নৈব চ’।

বাড়িতে কেউ না থাকলে সুরক্ষা কী ভাবে?

প্রাকৃতিক বিপর্যয় তো বলেকয়ে আসে না। হতেই পারে যখন ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি হল, বাড়ি তখন খালি, কারণ শহরের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল আগে থেকেই।

সে ক্ষেত্রে বাইরে যাওয়ার আগে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস জানতে পারলে, প্রথমেই বাড়ির সমস্ত বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের প্লাগ খুলে রেখে দেবেন। ‘আর্দিং’ ঠিকমতো মিটারের সঙ্গে রয়েছে কি না, দেখে নিতে হবে।

দরজা-জানলা খুব ভালো করে বন্ধ করে যাবেন। ছাদে বা বারান্দায় ফুলের টব থাকলে অবশ্যই তা ঘরের মধ্যে রেখে যাবেন। কারণ, ঝড় বৃষ্টিতে শুধু যে গাছপালা নষ্ট হবে তা নয়, ঝড়ে টব উড়ে কারও মাথায় পড়ে বিপদ ঘটতে পারে।

অফিস থাকলে

ঘূর্ণিঝড় আসবে বলে জরুরি পরিষেবা, অফিস বন্ধ থাকে না। তাই খুব প্রয়োজনে লোকজনকে বের হতেই হবে। সে ক্ষেত্রেও প্রবল ঝড় ও বৃষ্টির সময় রাস্তায় বা খোলা জায়গা না থাকার চেষ্টা করতে হবে। আচমকা ঝড়-বৃষ্টি হলে গাছের তলায় কোনও ভাবেই আশ্রয় নেবেন না। বরং কোও পাকা বাড়ি, শপিং মল, কংক্রিটের ছাউনি আছে, এমন জায়গায় মাথা গোঁজা যেতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৫ মে/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :