ঢাকা মহানগরসহ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ভেঙে দেওয়ায় নেতাকর্মীদের বিস্ময় 

জাহিদ বিপ্লব, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৪ জুন ২০২৪, ১০:৫৯| আপডেট : ১৪ জুন ২০২৪, ১১:০২
অ- অ+

হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার গভীররাতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম মহানগর, বরিশাল মহানগর এবং যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ঈদের ঠিক আগ-মুহূর্তে এসব ইউনিট কমিটি বিলুপ্ত করার কারণ বিষয়টি হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা।

বিলুপ্ত হওয়া কমিটিগুলোর শীর্ষ নেতারা বলেন, “ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার বিকালেই ভার্চ্যুয়ালি এসব কমিটি বিলুপ্তির কথা জানিয়েছিলেন।”

তবে, এসব আলোচনা বা কমিটি বিলুপ্তির বিষয়ে স্ব স্ব ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করেননি ইউনিটগুলোর শীর্ষ নেতারা।

ঢাকা মহানগর বিএনপির সদ্য বিদায়ী এক শীর্ষ নেতা ঢাকা টাইমসকে বলেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের বলেছেন, সংগঠনকে আরও গতিশীল ও ঢেলে সাজাতে নতুন উদ্যমে কাজ করার অংশ হিসেবে কমিটিগুলো বিলুপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে।”

বিএনপি নেতারা বলছেন, এর আগে কোনো কমিটি নেতৃত্বহীন ছিল না, এবার যেটি করা হয়েছে। আন্দোলনের মূল ইউনিটগুলো এখন নেতৃত্বশূন্য। নেতাকর্মীদের প্রশ্ন, হঠাৎ করে এমন কি ঘটল যে অভিভাবকশূন্য করে কমিটি বিলুপ্ত করা হলো? এর আগেও বিভিন্ন কমিটি ভাঙা হয়েছে, তবে তা নতুন আহ্বায়ক কমিটি অথবা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে।

কমিটি বিলুপ্ত করা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থতার অভিযোগেই এসব কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তবে, সদ্য পদ হারানো নেতারা এ অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছেন, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত যারা আন্দোলনের ছক তৈরি করেছিলেন, সেখানেই ঘাটতি ছিল। তারা কোনো সমন্বয় করতে পারেননি, নেতাকর্মীদের সেভাবে মাঠে নামাতে পারেননি। ব্যর্থতার দায়ভার তাদেরও আছে। আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের অধিষ্ঠিত করা হয় তাদেরও একটি বলয়ের আস্থাভাজন হয়েই পদ পেতে হয়। যখনই সেই বলয়ের সঙ্গে মনমালিন্য হয় তখনই হারাতে হয় পদ।

এদিকে, মধ্যরাতে হঠাৎ করে যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত করার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। যুবদলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, “ঈদের আগমুহূর্তে কমিটিগুলো ভেঙে সংগঠনের নেতাদের ঈদ নিরানন্দময় করা হয়েছে। তাছাড়া যুবদলের সভাপতি কারামুক্ত হয়েছেন এক সপ্তাহও অতিবাহিত হয়নি। আন্দোলন-সংগ্রামে সারাদেশে যুবদলের সক্রিয় অবস্থানও ছিল। তারপরও কেন এই মুহূর্তেই কমিটি ভাঙতে হবে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।”

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, যুবদল সারাদেশে আন্দোলনে যতটুকু ভূমিকা রেখেছে, কয়েকটি অঙ্গ সংগঠন, যাদের পারফরম্যান্স হতাশাজনক; বিশেষ করে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে ময়দানে থাকলেও তাদের শীর্ষনেতাদের সেভাবে দেখা যায়নি।

অপরদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং রফিকুল আলম মজনু গ্রেপ্তার হলেও রাজধানীর প্রতিটি থানায় নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করেছেন মহানগরের শীর্ষ নেতারা। যার কারণে ২৮ অক্টোবরের আগে-পরে মহানগর বিএনপির দুই সহস্রাধিক নেতাকর্মী আটক হোন। আন্দোলনে মাঠে না থাকলে এই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে আটক করা হতো না।

সদ্য বিলুপ্ত হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, “আমাদের মহানগর নেতারা ব্যর্থ হলে আন্দোলনের সময় দলের নীতিনির্ধারকরা কোথায় ছিলেন? তারা কেন আত্মগোপনে গেলেন? মহানগরের শীর্ষ নেতারা জেলে বা আত্মগোপনে থাকলেও থানা নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন। আমাকে পুলিশ না পেয়ে আমার ভগ্নিপতিসহ বাসার দারোয়ান, ড্রাইভারকে পুলিশ শুধু আটকই করেনি, রিমান্ডে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। আর বলা হচ্ছে মহানগর বিএনপি ব্যর্থ!”

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির (সদ্য বিলুপ্ত) এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, আন্দোলনের সময় আমি ছেলে সন্তানের পিতা হই। পুলিশের হুলিয়ার কারণে দুই মাস ১১ দিন পর আমি আমার সন্তানের মুখ দেখেছি। কারাগার থেকে মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু আমার নিয়মিত খোঁজখবর রেখেছেন। সালাম ভাই (মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক) আমার সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেছেন। আন্দোলনের সময় ভূমিষ্ট সন্তানকে দেখতে পারিনি, অথচ আমরা ব্যর্থ! আন্দোলনে রাজপথে না থাকলে মামলা হতো না।”

বিএনপির একাধিক নেতা আক্ষেপ করে বলেন, যে বলয়টি আন্দোলনের দুর্বল রোডম্যাপ দিয়ে আন্দোলনকে ফ্লপ করেছেন, সেই বলয়ই এখন দলের ভিতর পরিপূর্ণ বলয় নিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজস্ব লোক অধিষ্ঠিত করার মিশন নিয়ে নেমেছেন। যখন থেকে বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠনের কথা উঠেছে সেদিন থেকেই সেসব বলয়ের দ্বারস্থ হচ্ছেন সম্ভাব্য পদ প্রত্যাশীরা। এসব পদপ্রত্যাশী মনে করে, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের চেয়ে সে বলয়ের সদস্যরা অনেক বেশি শক্তিশালী। ক্ষেত্রবিশেষে অনেক স্থায়ী কমিটির সদস্যও এই বলয়ের কাছে অনেকটা অসহায়।

বিএনপি একটি সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সংগঠন পুনর্গঠনের উদ্যাগ নেয় বিএনপি। ১ মার্চ ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় এর কার্যক্রম। এরপর থেকেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপিসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব আনা হবে বলে শোনা গেছে। তবে, হঠাৎ করেই এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট বিলুপ্ত করা হবে তা কেউ ভাবেননি।

কমিটি বিলুপ্তি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য শুক্রবার সকালে বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকা টাইমস বলেন, “আপনার কাছে এই জানলাম। বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। প্লিজ আমার নাম কোট করবেন না।”

তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া দলটির একাধিক ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম মহাসচিবও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/জেবি/এফএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কসবায় ৭০ লাখ টাকার ভারতীয় চশমা জব্দ
লিটারে ১ টাকা কমল সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম
নারী সংস্কার কমিশন মানি না, বাধ্য করলে আন্দোলন: জামায়াত আমির
এবার চিন্ময়ের জামিন স্থগিতের আদেশ প্রত্যাহার, শুনানি রবিবার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা