চালের বস্তায় জাত-দাম লেখার নির্দেশনা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি

তাওহিদুল ইসলাম, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ মে ২০২৪, ০৮:৩৬

চালের দাম যৌক্তিক পর্যায় রাখতে বস্তায় ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম লেখা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। এই নির্দেশনা ১৪ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে বলেছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু তিন মাসেও সরকারের দেওয়া এই নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।

ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ কৌশল গ্রহণ করে সরাসরি বস্তায় ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম না লিখে তারা আলাদা করে কার্ডে লিখে দিচ্ছেন। রাইস মিল মালিকরা বলছেন, বাজার চালের দাম ওঠা-নামা করায় বস্তায় এসব লিখতে পারছেন না। আবার অনেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আংশিক কার্যকর করেছেন।

এর আগে ৫৩ দিন সময় পেয়েও নির্দেশনা কার্যকর না করার বিষয়ে গত ১৬ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, তাদের ২০-২৫ সময় লাগবে। সে হিসেবে ১১ মে’র মধ্যে সেটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে মে’র ২৩ তারিখেও দেখা যাচ্ছে নির্দেশনা শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, নির্দেশনার এখন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। এখনও শতভাগ কার্যকর হয়নি। কবে নাগাদ পুরোপুরি কার্যকর হবে সে ব্যাপারেও নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না মন্ত্রণালয়।

এদিকে ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ ও বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে আরও নতুন করে কয়েকটা পরিপত্র জারি করতে যাচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। যেগুলো মানা ব্যবসায়ীদের জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে কোথাও চালের বস্তায় ধানের জাত ও মূল্য লেখা দেখতে পাওয়া যায়নি। যদিও দোকানিরা বলছেন, বস্তায় মূল্য লেখা থাকলে তাদেরও সুবিধা হয়। কাস্টমারের সঙ্গে বেশি কথা বলতে হয় না।

এ ব্যাপারে জানতে বগুড়ার সান্তাহারের মেসার্স রহমান অ্যান্ড সন্স অটো রাইচ মিলের মালিক আতিকুর রহমান মিলনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কিছু লিখছি। আর এ বিষয় আমাদের উপজেলা প্রশাসনে সঙ্গে একটা মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটা এখনও ফাইনাল হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠির উপরই মিটিং হওয়ার কথা ছিল। কীভাবে জিনিসটা দিক নির্দেশনা দেবে, যা এখানে ফাইনাল হবে।’

এখনো বস্তায় দাম-জাত না লেখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা বস্তায় দাম-জাত লিখছি না। কার্ডে লিখে দিচ্ছি। কার্ডে উৎপাদনের তারিখ, মূল্যসহ সবকিছু লিখে দিচ্ছি। আর কার্ড বস্তার সঙ্গে সিলাই করে দিচ্ছি।’

বগুড়ার খান অটো রাইস মিলস লি. এর মালিক নাসির উদ্দিন খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কিছু কিছু বস্তায় লেখা শুরু করেছি। আর দাম কমতেছে তো তাই লিখতে পারছি না। যখন দাম লেভেল হয়ে যাবে তখন লেখা শুরু করে দেব। আমরা মেশিনের ব্লক বানিয়ে আনছি। দুই একদিনের মধ্যে লেখা শুরু করে দেব। আর বাজারে নতুন চালের দাম কমতেছে। এখন যদি আমরা বর্তমান বেশি দামে ছাড়ি তাহলে তো ক্রেতারা ভেজালে পড়ে যাবে।’ বাজারে চালের দাম ওঠা-নামা করায় বস্তায় মূল্য লিখতে পারছেন না বলেও জানান এই মিল মালিক।

সরকারের নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করার কারণ নওগাঁর রামভদ্রপুরের তছিরণ অটোমেটিক রাইস মিলে মালিক তছির উদ্দিন সরকারের কাছে জানতে চায় ঢাকা টাইমস। তিনি নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, ‘আমাদের বস্তায় দাম-জাত লেখা হচ্ছে। তবে এখনও কিছু বস্তা আছে যাতে লেখা হয়নি। যেগুলোতে লেখা হয়নি সে বস্তা আগের। আর পাশাপাশি নতুন বস্তায় লেখা হচ্ছে।’

নওগাঁর মহাদেবপুরের হাটচকগৌরীর মেসার্স আপন চিনতা অটোমেটিক রাইস মিলের ম্যানেজার রতন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা লেখা শুরু করেছি। আমরা প্রিন্টিং মেশিন নিয়ে নিছি।’

এ বিষয় কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এরআগেও চাল ব্যবসায়ীরা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক নির্দেশনা পালন করেনি। এটাও যে সঠিকভাবে পালন করবে তা নিয়ে আমাদের সংশয় ছিল। নানা টালবাহানা করে সরকারের নির্দেশনা পালন করে না। তারা তাদের স্টাইলে চলে। এরআগে সবাইকে পাটের বস্তা ব্যবহার করার নির্দেশনা ছিল। তখনও তারা টালবাহানা করে কার্যকর করেনি। সরকারের নির্দেশনা পালন না করলে যদি শক্তভাবে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, যদি এটা কাগজে কলমে থেকে যায় তাহলে তো ব্যবসায়ীরা অবজ্ঞা করবেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি খাদ্য বিভাগ মাঠ পর্যায় তদারকির ক্ষেত্রে সেরকম আগ্রহ প্রকাশ করে না। তারা অর্ডার দিয়েই ক্ষ্যান্ত। তাদের প্রতিটা কাজের বেলায় এ ধরনে শিথিলতা আমরা দেখছি। এটার কারণে পুরো বছর চালের বাজার অস্থির থাকে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা তো খুচরা বিক্রির জন্য বাধ্যতামূলক করি নাই। পাইকারিতে দেখেন। আমরা এখনও খুচরার জন্য অনেক কিছুই বাধ্যতামূলক করি নাই।’

ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি এটা ঠিক। আমরা ৬৪ জেলাতে মনিটরিং করছি। প্রায় ৬০/৭০ শতাংশ বাস্তাবায়ন হয়েছে। রাইস মিলগুলোতে প্রডাকশন ছিলো না। মাত্র বোরো ধান কাটা হয়েছে এখন প্রডাকশন হবে…। শুধু বস্তায় গায়ে জাত আর মূল্য লেখা না, আরও পাঁচ থেকে সাতটা পরিপত্র জারি হচ্ছে এবং সবগুলোই তারা (রাইসমিল মালিক) প্রতিপালন করতে বাধ্য।

‘ধান চাল গমের ব্যবসা করতে হলে সরকারের নির্দেশনা মেনেই করতে হবে। শতভাগ হয়নি সেটা হয়ে যাবে’—যোগ করেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৪মে/টিআই)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

অনলাইনে পশুর হাট জমল নাকি কমল?

ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তায় তালিকভুক্ত চোর ধরছে পুলিশ

সংকটে চামড়া খাত, পর্যাপ্ত জোগানেও বন্ধ হচ্ছে না আমদানি

কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানানোর সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা 

পল্টনে অগ্নিঝুঁকিতে ১৫টি ভবন, নেই কোনো ব্যবস্থা

নেতৃত্ব বাছাইয়ে ছাত্রদল সততা, মেধা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করে: সাধারণ সম্পাদক

রি-টেন্ডার করিয়ে শতকোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিতে চায় ‘মিঠু চক্র’

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা উত্তম কুমার: বিলাসী বাসা ছেড়েছেন, গ্যারেজে পড়ে আছে গাড়ি

দালাল চক্রের আখড়া মিটফোর্ড হাসপাতাল

ঢাকায় ফ্ল্যাট-গাড়ি, অঢেল টাকা: সিআইডির সাবেক কর্মকর্তা উত্তমের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :