স্বর্ণকারবারিদের টাকায় সম্পদশালী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা উত্তম কুমার

স্বর্ণচোরাচালানে হওয়া অনেক মামলা তদন্ত করছেন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস। অভিযোগ আছে, আলোচিত বেশ কিছু মামলার তদন্ত করে কামিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।
সম্প্রতি দুদকের জালে আঁটকে পড়ার ভয়ে নামে-বেনামে থাকা বিপুল অর্থ তুলে নিয়েছেন উত্তম কুমার। এরইমধ্যে সেসব অর্থ নিয়ে দেশত্যাগের পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। তবে আদালত তাকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিমানবন্দর ও দেশের বিভিন্ন ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে অনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে বিপুল সম্পদ গড়া সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার অবস্থান অবস্থান কোথায় তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত এসপি উত্তমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, যা জানা গেল
আলোচিত যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উত্তম কুমার। সেসময় অনেককে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ ছিল সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তখন ভয়ভীতি দেখিয়ে কামিয়েছেন বিপুল সম্পদ। অভিযোগ আছে, মিল্কি হত্যা মামলা তদন্তের সময় রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ অনেককে আসামি করার ভয় দেখান উত্তম।
পরে তাদের কাছ থেকে নেন মোটা অংকের টাকা। সেসব টাকা বিদেশে পাচার করে গড়েছেন অঢেল সম্পদ। দুদক এরইমধ্যে তার সম্পদের বিভিন্ন তথ্য উদঘাটন করা শুরু করেছে। ভারতেও উত্তমের সম্পদের প্রাথমিক তথ্য মিলেছে।
এসআই থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হওয়া উত্তম কুমার চাকরিজীবনে নিজে নামে ও স্ত্রীর নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। ঢাকার বেইলি রোডে ফ্ল্যাটসহ একাধিক জমি, বাড়ি, গাড়ির মালিক এই উত্তম কুমার। কথিত আছে, ইউরোপ-আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদ সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গত অক্টোবরে অবসর নেওয়া উত্তম কুমার অবসরের এক বছর শেষ হলেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুদক তাকে চিঠি দিয়ে একাধিকবার ডাকলে উত্তম কুমার হাজির হননি। পরিস্থিতি অনুকূলের বাইরে যাচ্ছে বুঝে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা আমানত তুলে ফেলেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্বর্ণচোরাচালানিদের টাকায় বিপুল সম্পদ: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উত্তম কুমার আলোচিত বেশকিছু স্বর্ণচোরাচালানের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সেসময় এসব মামলা থেকে আসামিদের বাঁচিয়ে দিতে অনৈতিক সুবিধা নেন বলে অভিযোগ আছে। তাছাড়া অনেককে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে বিপুল অর্থ নিয়েছেন। যা স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের নামে-বেনামে রেখেছেন। ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা যাতে তাকে সন্দেহ না করেন এ কারণে সাধারণভাবে জীবনযাপন করতেন। অসাধু বেশকিছু কর্মকর্তাকে নিয়ে তার একটি গ্রুপ ছিল বলেও জানা গেছে।
স্বর্ণকারবারিদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়া উত্তম কুমার পুলিশের এসআই, ওসি ও এএসপি পদে থাকাকালে দু'হাতে কামিয়েছেন। বিভিন্ন থানায় ওসি থাকাকালে নিরীহ মানুষকে হয়রানির মাধ্যমে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য আদালত দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই আদেশ দেন।
যা বলছে দুদক:
মামলার প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে দুদকের পক্ষে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক রুহুল হক। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এই আদেশ দেন।
দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। নিষেধাজ্ঞার আবেদনে বলা হয়, উত্তম কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু হয় যা এখন চলমান আছে। ইতোমধ্যে তার ও তার স্ত্রীর নামে সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেশকিছু রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিনি দুদকের নোটিশ পাওয়ার পরপরেই অসংখ্য হিসাব থেকে সব টাকা তুলে হিসাব বন্ধ করছেন, যা সন্দেহজনক মর্মে প্রতীয়মান হয়। তিনি অনুসন্ধানের শুরু থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা করেননি, বরং বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অহেতুক কালক্ষেপণ করছেন।
অনুসন্ধানকালে গোপন সূত্রে জানা যায়, উত্তম কুমার সব হিসাব বন্ধ করে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছেন। তিনি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কাজ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এজন্য তার বিদেশ গমণে নিষেধাজ্ঞা একান্ত প্রয়োজন। এরপর আদালত নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরইমধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগের এসব বিষয়ে উত্তম কুমারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
কবে পুলিশে আসেন উত্তম:
মাগুরার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা উত্তম কুমার ১৯৮৯ সালে এসআই পদে পুলিশে যোগদান করেন। এরপর তিনি পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। পরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি পেলে তাকে সিআইডিতে পদায়ন করা হয়। এরপর র্যাব-২ প্রেষণে বদলি হন। গত বছরের মাঝামাঝি তিনি সিআইডিতে পুনরায় বদলি হন। এরপর অক্টোবরে অবসরে যান।
(ঢাকাটাইমস/৩০মে/এসএস/কেএম)

মন্তব্য করুন