নেতৃত্ব বাছাইয়ে ছাত্রদল সততা, মেধা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করে: সাধারণ সম্পাদক

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। তিনি বলেন, ‘দেশের যেকোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সবসময় অগ্রভাগে ভূমিকায় থাকে ছাত্রদল।’
নাছির বলেন, ‘ছাত্রদল নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছে। পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে সবসময় সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছে।’
এছাড়া একান্ত আলাপনে ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ, সংগঠনের পদবাণিজ্যের অভিযোগসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন ঢাকা টাইমস প্রতিবেদকের সঙ্গে। আলাপচারিতায় ছিলেন মো. মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম।
স্বাধীনতার আগে ও পরে প্রায় সব আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্ররাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তবে বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায়নি...
নাছির: ভাষা আন্দোলনের আগে এবং পরে দেশের গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে। স্বাধীনতার এক দশক পরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্ভব ঘটেছে এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য সবসময় কাজ করছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী যে আন্দোলন সেখানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রদল কঠোর আন্দোলন করেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে ৯০-পরবর্তী আন্দোলনে সফলতার কারণে কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদসহ দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় বড় কলেজগুলোতে ছাত্রদল অভূতপূর্ণ সাফল্য লাভ করেছে। আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের এই চেষ্টা শতভাগ সফল।
গত দেড় যুগে দেশে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ সালে একটি বিনাভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে নিশিরাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে একটি ডামি নির্বাচন হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচন দেশের সাধারণ মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের এই প্রত্যাখ্যানের আগে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদল যেকোনো সময়ের থেকে অনেক বেশি আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে।
একইসঙ্গে গত ৫ দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোতে সবসময় কাজ করছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান, শিক্ষাদানের পরিবেশ নিয়ে ছাত্রদলের সক্রিয়তা দেখা যায় না। ছাত্র সংগঠন হয়েও এই নিস্পৃহতা কেন?
নাছির: গত পাঁচ বছর ছাত্র অধিকার নিয়ে যে আন্দোলনগুলো হয়েছে, যেমন কোটা সংষ্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সেগুলোসহ প্রত্যেকটি আন্দোলনে ছাত্রদল সবসময় সোচ্চার ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে শপথে দেশের মানুষ আন্দোলন করছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে আবাসন সংকট রয়েছে এবং ছাত্রলীগের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি হওয়া, গুম, খুন, চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোর বিপরীতে ছাত্রদল অতীতে যেভাবে সোচ্চার ছিল, ভবিষ্যতেও সেভাবে থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদলের সক্রিয়তা কোন পর্যায়ে?
নাছির: ছাত্রদলের যে পাঁচ দশকের পথচলা সেখানে সবসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজগুলোতে সবসময় ছাত্রদলের পদচারণা ছিল। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ যে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছিল সেটি সফল করার জন্য ছাত্রদল কাজ করেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্রদল সবসময় কাজ করে আসছে।
২০১৯ সালে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী কায়দায় ছাত্রদলকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের যে পথচলা সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য জঙ্গি কায়দায় হামলা চালিয়ে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আমাদের ইতোমধ্যে কয়েক দফা কথা হয়েছে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুনরায় ছাত্রদলের পদচারণা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ।
কমিটি দেওয়ার তিন মাস পরও পূর্ণাঙ্গ করতে পারেননি...
নাছির: গত ১ মার্চ ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একটি আংশিক কমিটি দিয়েছেন। এরপরই দেশের ১১৮টি সাংগঠনিক ইউনিটের তথ্য আমরা হালনাগাদ করেছি। রাজশাহী ও ফরিদপুর সাংগঠনিক বিভাগের ১৪টি সাংগঠনিক জেলায় সভা শেষ করেছি। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগরের যে কমিটি ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাজ একদম শেষভাগে নিয়ে আসছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবকের কাছে তা হস্তান্তর করব।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে বা কোনো নেতার তদবির বা চাপ আছে?
চাপ বা প্রেশার অতীতেও কখনো ছিল না। আমরা যে কাজ করছি আমাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারই আলোকে এবং ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে ছাত্রদল যে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে সেসময় যারা রাজপথে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে এবং এর আগের সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যারা নিরলস কাজ করেছে, তাদেরকে আমরা মূল্যায়ন করছি।
আগেও কয়েকটি কমিটিতে পদ নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ছিল। এবারও কি তেমন কিছুর অভিযোগ আছে?
নাছির: আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ ওঠা শুধু ছাত্রদলের জন্য না, পুরো ছাত্ররাজনীতির জন্য আসলে লজ্জাজনক বিষয়। বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে এটি আমার জন্যও খুবই দুঃখজনক। আমরা নিশ্চিত করে বলতে চাই, অতীতে এরকম অভিযোগ হয়তো এসেছে, কিন্তু বেশিরভাগ অভিযোগই দল যাচাই-বাছাই করেছে। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
ছাত্রদলের মতো একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনে হাজার হাজার নেতাকর্মী রয়েছে। তাদের মধ্যে একধরনের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। সবাইকে তো একই পদে মূল্যায়িত করা যায় না। যখন কেউ মূল্যায়িত না হয়, তখন তারা এ ধরনের দৈব অভিযোগ করে থাকেন। এমন অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদল সবসময় সোচ্চার।
আমরা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং পরিশ্রমের মূল্যায়নের ভিত্তিতে কাজ করে আসছি। সুতরাং এই ধরনের অভিযোগ ভবিষ্যতে উঠবে না বলে আমরা মনে করছি।
(ঢাকাটাইমস/১০জুন/ডিএম)

মন্তব্য করুন