ঝুঁকি কমেনি ওয়াহেদ ম্যানশনের
![](/assets/news_photos/2024/05/27/image-354744.jpg)
৭১টি প্রাণ কেড়ে নেওয়া পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার সেই ওয়াহেদ ম্যানশন ৫ বছরেও ঝুঁকি কমেনি। ভবনে ঠাসা যেই প্লাস্টিকের দানার গোডাউনের জন্য মুহূর্তেই গোটা এলাকা পরিণত হয়েছিল অগ্নিকুণ্ডে, সেই প্লাস্টিকের দানায় ঠাসা গোডাউন আবারো জায়গা পেয়েছে ওয়াহেদ ম্যানশনে।
২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে আগুন লাগে। ওই ভবনে প্লাস্টিকের দানা ও কেমিক্যাল গোডাউন থাকায় মুহূর্তে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। সেই ভয়াবহতা ঘটার আশঙ্কা এখনো দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, রাজধানীর অন্য এলাকাগুলোতে আগুন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করা হলেও শঙ্কা কাটেনি চুড়িহাট্টায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফের চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির শঙ্কা রয়েছে সেই ওয়াহেদ ম্যানশনেই। ভবনটির নিচে প্লাস্টিকের দানায় ঠাসা বেশ কয়েকটি গোডাউন আর ওপরে দুটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থাকায় শঙ্কা কাজ করছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। পোড়া ভবনের চিত্র মুছে দিতে ভবনটির বাইরে চলছে রং মাখার কাজ। ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের ভবনেও (৬৫/৬৬ হোল্ডিং) রয়েছে প্লাস্টিকের গুদাম, আছে কেমিক্যাল মজুদও, সেই ভবনটির নিচে আছে ঝুঁকিপূর্ণ সেই রাজমহল হোটেল। এই হোটেলটি থেকেই ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। হোটেলে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার একের পর এক বিস্ফোরণ হয় সে সময়ে। ওয়াহেদ ম্যানশনসহ ঝুঁকিপূর্ণ এই দুই ভবনের পাশেই রয়েছে মসজিদ ও মাদ্রাসা। যেখানে দিনরাত শত শত মুসল্লি আসা-যাওয়া করে থাকেন। এছাড়াও মধ্যরাত পর্যন্ত চুড়িহাট্টার সড়কগুলো থাকে জমজমাট। এ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। যেকোনো সময় এখান থেকে আবারও হতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা। এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে কোথাও নেই ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিঝুঁকির ব্যানার।
সরেজমিনে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবনটি বর্তমানে সেই আগের মতোই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। নিচতলায় যেসব ইলেকট্রনিক্স দোকান ও প্লাস্টিকের দানার গোডাউন রয়েছে সেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ভবনটির বাইরের অংশে রং মাখানোর কাজ করছেন কয়েকজন রং মিস্ত্রি। ইতোমধ্যে নতুন ভবনের আদলে রং মাখা হয়েছে সেখানে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝাই যাবে না, এই ভবনে আগুন লেগে ৭১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশের ইতিহাসে অল্প সময়ে আগুনে পুড়ে এত মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা এর আগে কোথাও ঘটেনি।
ভবনটির নিচতলা ঘুরে দেখা যায়, কয়েকটি ইলেকট্রনিক্সের দোকান রয়েছে। পাশেই দেখা মিলছে সেই ভয়ংকর প্লাস্টিকের দানায় ঠাসা কয়েকটি গোডাউন। যেই প্লাস্টিকের দানার গোডাউন থাকায় চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির আগুন নেভাতে ১৪ ঘন্টার বেশি সময় লেগেছিল, সেই প্লাস্টিকের দানার গোডাউনই আবার ভাড়া দেওয়া হয়েছে সেখানে। ভবনটির নিচতলায় প্রায় ৫-৬টি প্লাস্টিকের দানার গোডাউন রয়েছে। এছাড়াও মুদি দোকানও রয়েছে সেখানে। ভবনটির ২য় তলায় উঠতেই দেখা যায় সেখানে ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংকের কার্যালয়। ব্যাংকের বাইরে রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইউসিবি ব্যাংকের কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সেখানে অসংখ্য গ্রাহক ব্যাংকিং সেবা নিতে এসেছেন।
ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা হয় ইউসিবি ব্যাংকের চুড়িহাট্টা উপশাখার সাবব্রাঞ্চ ইনচার্জ মো. মোস্তফা কামালের। তিনি বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ইউসিবি ব্যাংকের এই উপশাখাটি চালু করা হয়। ভবন মালিকের কাছ থেকে ব্যাংকিং উপশাখা হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়। ভবনটিতে অগ্নিঝুঁকি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয় ভবন মালিক বলতে পারবেন। তবে আমাদের এই উপশাখার কার্যালয়ের মধ্যে কোনো অগ্নিঝুঁকি নেই।
ইউসিবি ব্যাংকের পাশেই রয়েছে এক্সিম ব্যাংকের আরেকটি উপশাখা। সেখানেও গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য মানুষ সেবা নিতে এসেছেন। এই কার্যালয়টিও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।
এক্সিম ব্যাংকের এই উপশাখাটির সাবব্রাঞ্চ ইনচার্জ সঞ্জয় কুমার শিকদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর এই ভবনে এক্সিম ব্যাংকের উপশাখাটি চালু করা হয়। ভবন মালিকের কাছ থেকে ফ্লোরটি ভাড়া নেয় এক্সিম ব্যাংক।
ভবনটিতে কোনো অগ্নিঝুঁকি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ব্রাঞ্চ ওপেন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাউকেই আমরা দেখিনি। ভবনে অগ্নিঝুঁকির বিষয় বাড়িওয়ালা বলতে পারবেন। তবে আমাদের এই কার্যালয়ের মধ্যে কোনো অগ্নিঝুঁকি নেই। ভবনে প্লাস্টিকের গোডাউন ভাড়া দেওয়া এবং অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে কথা বলতে ওয়াহেদ ম্যানশনের ভবন মালিকের বাসায় গিয়ে কাউকেই পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন আরও অনেকে। তৎকালীন সময়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট প্রায় ১৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখান থেকে ৬৭ জনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ জনে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের পর ওয়াহেদ ম্যানশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ। কোনো ফায়ার সেফটি প্লান অথবা লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। কারণ তারা সরকারি আদেশ সম্পূর্ণভাবেই অমান্য করছে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিম ঢাকা টাইমসে বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছে। আমার জানা মতে, সেখানে কোনো প্লাস্টিকের গোডাউন নেই। যদি থেকে থাকে তাহলে কেউ গোপনে রাখতে পারে। ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনে কোনো ঝুঁকি নেই। তারা সকল নিয়মকানুন মেনেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই এলাকার কাউন্সিলর হিসেবে আমি নিজে বিষয়টি দেখাশোনা করছি।
৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বয়স ৫ বছর শেষ হলো, এখনো শেষ হয়নি মামলার বিচার কাজ। এমনকি সাক্ষ্যগ্রহণের কাজও শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। এ ঘটনায় নিহত জুম্মনের ছেলে মো. আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- ভবনের দুই মালিক হাসান ওরফে হাসান সুলতান, সোহেল ওরফে শহীদ ওরফে হোসেন, রাসায়নিকের গুদামের মালিক ইমতিয়াজ আহমেদ, পরিচালক মোজাম্মেল হক, ম্যানেজার মোজাফফর উদ্দিন, মোহাম্মদ জাওয়াদ আতির, মো. নাবিল ও মোহাম্মদ কাশিফ। বর্তমানে তারা সবাই জামিনে আছেন।
এদিকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি মামলার চার্জগঠন করে আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরুর আদেশ দেন আদালত। তবে ১ বছরের বেশি সময় পার হলেও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ৮ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন আছে। তবে বিচারকাজ শেষ না হলেও সেই চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির ওয়াহেদ ম্যানশনে আবারো চলছে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম।
(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এইচএম/কেএ)
সংবাদটি শেয়ার করুন
বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ
![](/cache-images/news_photos/2024/06/16/resize-90x60x0image-356697.jpg)
অনলাইনে পশুর হাট জমল নাকি কমল?
![](/cache-images/news_photos/2024/06/15/resize-90x60x0image-356614.jpg)
ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তায় তালিকভুক্ত চোর ধরছে পুলিশ
![](/cache-images/news_photos/2024/06/15/resize-90x60x0image-356606-1718419674.jpg)
সংকটে চামড়া খাত, পর্যাপ্ত জোগানেও বন্ধ হচ্ছে না আমদানি
![](/cache-images/news_photos/2024/06/13/resize-90x60x0image-356405.jpg)
কোরবানির পশু জবাই ও মাংস বানানোর সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/12/resize-90x60x0image-356400.jpg)
পল্টনে অগ্নিঝুঁকিতে ১৫টি ভবন, নেই কোনো ব্যবস্থা
![](/cache-images/news_photos/2024/06/10/resize-90x60x0image-356102.jpg)
নেতৃত্ব বাছাইয়ে ছাত্রদল সততা, মেধা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করে: সাধারণ সম্পাদক
![](/cache-images/news_photos/2024/06/08/resize-90x60x0image-355952.jpg)
রি-টেন্ডার করিয়ে শতকোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিতে চায় ‘মিঠু চক্র’
![](/cache-images/news_photos/2024/06/07/resize-90x60x0image-355852.jpg)
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা উত্তম কুমার: বিলাসী বাসা ছেড়েছেন, গ্যারেজে পড়ে আছে গাড়ি
![](/cache-images/news_photos/2024/06/06/resize-90x60x0image-355698.jpg)
দালাল চক্রের আখড়া মিটফোর্ড হাসপাতাল
![](/cache-images/news_photos/2024/06/05/resize-90x60x0image-355642-1717597995.jpg)