টানা ১০ ঈদ কারাগারে
‘উগ্র’ পাপিয়া কুমিল্লা কারাগারে ‘নরম’, মন দিয়েছেন ধর্মে-কর্মে

ছিলেন অন্ধকার জগতের ‘লেডি ডন’। পাঁচতারা হোটেলের বিলাসবহুল প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইটে সময় কাটতো আমোদেই। ঘর এখন তার কাছে দিবাস্বপ্নই বটে। আর বিলাসী জীবন; দুঃস্বপ্ন। যার সূর্য ওঠে কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে, আবার সন্ধ্যা নামে গারদের লোহার দেয়ালে।
বলছিলাম আলোচিত চরিত্র যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার কথা।
২০২০ সালে গ্রেপ্তারের পর টানা দশটি ঈদ কারাগারে করতে হচ্ছে তাকে। গত আগস্টে কারাবন্দিদের সঙ্গে মারমুখী আচরণের কারণে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই আছেন তিনি।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, পাপিয়ার আচরণে এখন বেশ পরিবর্তন এসেছে। নামাজ-কালামে মনোযোগী হয়েছেন। অতীত কর্মকাণ্ডের অনুশোচনা বোধ তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
রবিবার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, পাপিয়া এখন আমাদের কারাগারের হাজতি। অস্ত্র মামলায় রায়ের পর তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। মামলা বিচারাধীন থাকায় তাকে কারাগারের পোশাক পড়তে হচ্ছে না।
পাপিয়ার মধ্যে আগের মতো উগ্রতা নেই জানিয়ে এই কারাকর্মকর্তা বলেন, তাকে এই কারাগারে আনা হয়েছে সংশোধন হওয়ার জন্য। তাকে নিয়ম-শৃঙ্খলা মানানোর জন্য আমরা কারাবিধি অনুযায়ী চেষ্টা করছি। নিজে যদি সংশোধন না হন তাহলে তাকে তো সংশোধন করা সম্ভব না। তবে শুনেছি তিনি নামাজ-কালামে মনোযোগ দিয়েছেন। ধর্মীয় ব্যাপারে একটু সচেতন হয়েছেন। এটাই আমাদের ভালো লাগে, একটা মানুষ সংশোধন হচ্ছেন।
পরিবারের লোকজন প্রায় দেখা করতে কারাগারের জানিয়ে ঊধ্বর্তন এই কর্মকর্তা বলেন, ‘পাপিয়ার পরিবারের সদস্যরা প্রায় কারাগারে আসেন। তারে সঙ্গে দেখা করেন।’
আমোদ-প্রমোদ আর তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসার আয়ে বিলাস-ব্যসনে চলতেন পাপিয়া। হেন অপকর্ম নেই যা তিনি করতেন না। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ব্ল্যাকমেইল ও নির্যাতন- সব কিছুই ছিল তার নিত্যনৈমত্তিক কাজ। পেয়েছিলেন অপরাধ জগতের সম্রাজ্ঞীর তকমা। গ্রেপ্তারের আগে গুলশানের অভিজাত হোটেল ওয়েস্টিনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ভাড়া নিয়ে মাসে বিল গুনতেন কোটি টাকা। সব সময় সঙ্গে থাকত সাতজন অল্পবয়সী তরুণী। আর আনাগোনা ছিল সমাজের নানা পর্যায়ের ‘এলিট’ মানুষের।
প্রতিদিন হোটেলের বিল বাবদ গড়ে খরচ করতেন আড়াই লাখ টাকা। তরুণীদের অনৈতিক ব্যবহার, অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান, জাল নোটের কারবার, চাঁদাবাজি, তদবির-বাণিজ্য, জায়গাজমি দখল-বেদখল ও অনৈতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থবিত্তের মালিক হন পাপিয়া ও মফিজুর রহমান সুমন দম্পতি। পাপিয়া ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী সুমন ও দুই সহযোগী সাব্বির খন্দকার ও কাজী তায়্যিবা নূরসহ দেশত্যাগের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে একটি অবৈধ অস্ত্র, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, নগদ ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড জব্দ করা হয়।
ধরা পড়ার পর তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই দম্পতির বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তিনটি মামলা করে র্যাব। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীকে সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে আরও পাঁচটি মামলা রয়েছে, যা নিম্ন আদালতে বিচারাধীন।
(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/এসএস/ইএস)

মন্তব্য করুন