আজিজদের মতো অনেক রূপকথার কাহিনি আ.লীগ সরকারের আছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ থেকে যে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, লুট হচ্ছে, ব্যাংক শূন্য হচ্ছে, রাজকোষ শূন্য হচ্ছে, আমরা তো শুধু দুজনের কথা শুনেছি, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ। তাদের যে রূপকথার কাহিনি শুনেছি এরকম আরো যারা সরকারকে নানাভাবে সাহায্য করেছে, গুম খুন এবং নানান অত্যাচারে লিপ্ত ছিলেন তাদের কাহিনি তো আমরা জানি না। আমরা না জানলেও কথাগুলো তো মানুষের কাছে আছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব বলেন। জাতীয়তাবাদী প্রকাশনা পরিষদের উদ্যোগে আহবাব চৌধুরী খোকনের সম্পাদনায় ‘জিয়াউর রহমান অনন্য রাষ্ট্রনায়ক’ গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ এবং সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ— এরা যে এতকিছু করেছেন এটা কি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না? আওয়ামী লীগ সরকার কি কিছু জানত না? সরকার বা রাষ্ট্রের যারা গোয়েন্দা বাহিনী রয়েছে তারা তো একেবারেই প্রধানমন্ত্রীর কবজায়। শেখ হাসিনা যদি আমেরিকায় যায় সেখানে আন্দোলন হলে সেই ছবিগুলো তুলে রাখা হয় এবং পরবর্তীকালে সে আন্দোলনকারী বাংলাদেশে এলে এয়ারপোর্টেই গ্রেপ্তার করে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা লন্ডনে গিয়েছিল সেখানে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। সেই ছবিগুলো গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দারা আন্দোলনকারী যখনই বাড়িতে আসে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে গ্রেপ্তার করে থাকে।‘
রিজভী বলেন, আজকের আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমান সরকারের কাছে রেজিষ্ট্রেশনের মধ্য দিয়েই আওয়ামী লীগ হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতিও জিয়াউর রহমানের অবদান রয়েছে।
সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) অন্তরে হচ্ছে মানুষকে নিপীড়ন করা। ওদের অন্তর হচ্ছে ক্ষমতাকে স্থায়ী করে রাজত্ব কায়েম করা। এজন্য তারা উদারতাকে পছন্দ করে না। নিজেদের মধ্যে বিদ্বেষ, এটাও তারা প্রতিষ্ঠা করে। এজন্য তারা জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি বিদ্বেষ, তারেক জিয়ার প্রতি বিদ্বেষ দেখায়।
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা যে গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নন সেটি তারা প্রমাণ করছে। রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য উনার মধ্যে কোনো নীতি নৈতিকতা এবং জনগণের কাছে অঙ্গীকার এ রকম কিছুই নেই। উনি রাজনীতিকে একটা প্লট বলে মনে করেন, প্রতারণা বলে মনে করেন। উনি জনগণের কাছে অনেক ওয়াদা করেন, কিন্তু সেটি রক্ষা না করাকেই উনি রাজনীতি মনে করেন।
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের দেড় লাখ বাড়িঘর তছনছ হয়ে গেছে। ১৬ জন মানুষ মারা গেছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে দৃষ্টি যাতে না যায় সেজন্য তিনি (শেখ হাসিনা) পরশু দিন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটা বাজে কথা বলেছেন। উনার মনের মধ্যে থাকা যে প্রতিহিংসা এবং ক্ষোভ রয়েছে সেগুলো এমনই ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে এটা প্রকাশ করার জন্য উনি ব্যাকুল হয়ে গেছেন। জনগণ জলোচ্ছ্বাসে বাঁচলো কি মরলো এটুকু বুঝার খেয়াল পর্যন্ত ওনার নাই। ওনার টার্গেট হলো যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো অবস্থাতে জিয়া পরিবারকে আক্রমণ করা। ঘূর্ণিঝড়ে মানুষকে আশ্রয় দেওয়া, সাহায্য করা, খাবার দেওয়া এগুলোর ক্ষেত্রে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই।’
রিজভী বলেন, ‘এ সরকার কত যে অপকর্ম করেছে, কত যে নিষ্ঠুরতা করেছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যাকেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেছে তাদেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এ সরকার নিজেদের লোকগুলোকে অর্থে বিত্তে আঙুল ফুলে কলা গাছ করার জন্য নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজকে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা বলে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই উন্নয়ন লোক দেখানো সেটা এখন টের পাওয়া যাচ্ছে।
‘ঢাকায় প্রায় ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বহু জায়গায় প্রায় ১৫-১৬ ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ নেই। আমাদের যে মেট্রোরেল করা হয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ দশ মিনিট পর যায় আর আসে। উন্নয়ন টেকসই হয়নি। উন্নয়নের নামে যে অনেক টাকা চুরি হয়ে গেছে এটা এই সরকারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত। এখন চলছে আন্তর্জাতিক গুম দিবসের একটা সপ্তাহ। বাংলাদেশের গুম খুনের অত্যাচারের যে কাহিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রত্যেকেই এই সম্পর্কে রিপোর্ট করছে।’ বলেন রিজভী।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাবেক ছাত্রনেতা ডা. তৌহিদুর রহমান আউয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, ডিইউজের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বকুল প্রমুখ।
(ঢাকাটাইমস/২৮মে/জেবি/কেএম)