বন্ধ নাক খোলার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০১

প্রকৃতিতে জাঁকিয়ে বসেছে শীত। ঘরে বাইরে চারিদিকে ঠান্ডার আমেজ। দেখা দিচ্ছে কুয়াশা। ঘাস কিংবা ধানখেতে জমছে শিশিরবিন্দু। শীতকালে ঠান্ডায় এই সময়ে যেকোনো ভাইরাসের সংক্রমণ চেপে বসে। সেই সঙ্গে সর্দি-কাশির সমস্যা লেগেই থাকে। ভাইরাসজনিত কারণে এ সময়ে নাক বন্ধ হতে পারে। এছাড়া শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলাবালুর কারণে অ্যালার্জি হলে নাক বন্ধ হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। নাক বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি ঘ্রাণ নিতে অসুবিধা হওয়া, মাথাব্যথা, হালকা সর্দি, জ্বর বা কাশিও থাকতে পারে। কথা বলার সময় অসুবিধা হতে পারে। ওষুধে নাক বন্ধ সমস্যার সমাধান হয় দেরিতে। ভুগতে হয় বেশ লম্বা সময়। জেনে নিন বন্ধ নাক খোলার কিছু ঘরোয়া টোটকা-

এক কাপ পানিতে দু’-তিন কোয়া রসুন আর আধ চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন। নিয়মিত এই পানি খেলে নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে। সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।

ফুটন্ত পানির মধ্যে জোয়ান গুঁড়া কিংবা কালোজিরের গুঁড়া মিশিয়ে সেই পানির ভাপ নিন। এতে বন্ধ নাক খুলে যাবে, মাথা ভার, মাথা যন্ত্রণার হাত থেকেও আরাম পাবেন।

নাক বন্ধের সমস্যা দূর করতে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। গরম পানিতে গোসল করলে বন্ধ নাক খুলে যায়। এর পাশাপাশি, যত সম্ভব গরম পানীয় খেতে হবে।

দু’কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। নাকের একটি ছিদ্র বন্ধ করে ওই পানি অন্য ছিদ্র দিয়ে টানতে থাকুন। মুখ দিয়ে পানি বের করে দিন। নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বন্ধ নাক খুলতে গোলমরিচ বেশ উপকারী। হাতের তালুতে অল্প একটু গোলমরিচ গুঁড়ো নিয়ে সামান্য সর্ষের তেল দিন। আঙুলে লাগিয়ে নাকের কাছে ধরুন। হাঁচি হবে। সেই সঙ্গেই নাক একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। সরিষার তেল নাক দিয়ে টানলেও বন্ধ নাক খুলে যায়।

এক কাপ গরম পানিতে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খেলে মিউকাস পরিষ্কার হবে। দিনে দুই থেকে তিন বার খান। সর্দি সম্পূর্ণ কমে যাবে।

বন্ধ নাকে দারুণ কাজ করে ইউক্যালিপটাস অয়েল। একটা পরিষ্কার রুমালে কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল নিন। রুমাল নাকের কাছে ধরে শ্বাস নিন। নাক খুলে যাবে। ঘুম ভাল হবে।

নাকের মিউকাস পরিষ্কার করতে হার্বাল চা খান। নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে, শরীর থেকে টক্সিনও দূর হবে।

এক কাপ টমেটোর রস, এক টেবিল চামচ রসুন কুচি, এক টেবিল চামচ লেবুর রস, ঝাল সস ও এক চিমটে লবণ মিশিয়ে নিন। এই চা দিনে দুবার খান। সর্দি একেবারে কমে গিয়ে আরাম পাবেন।

এক গ্লাস পানিতে দুচামচ মেথি মেশান। এই জল ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। দিনে দুই থেকে তিন বার এই জল গরম খেতে থাকুন। যতক্ষণ না সর্দি পুরোপুরি কমে যাচ্ছে।

নাক বন্ধ হলে সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে স্টিম বা গরম ভাপ। পরিষ্কার পানিতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এরপর চুলা বন্ধ করে দিন। পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মাথা ঢেকে গরম পানির ভাপ নিন। এতে শ্বাসনালীতে কোনো বাধা থাকলে তা দূর হয়। দিনে অন্তত দুই বার এভাবে গরম পানির ভাপ নিতে হবে।

আদা কুচি করে কেটে অল্প লবণ মেখে চিবিয়ে আদার রস গ্রহণ করতে হবে। এভাবে সরাসরি আদার রস পান করলে দ্রুতই নাক বন্ধ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

রসুনের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি শর্ম বন্ধ নাকের সমস্যা দূর করবে। যা ফ্লু প্রতিরোধেও কাজ করে। ২-৩টি রসুন থেঁতলে এক কাপ পানিতে ১০ মিনিট গরম করতে হবে। এরপর পানি ছেঁকে হালকা গরম অবস্থায় পান করতে হবে। দিনে দুবার রসুনপানি পানে দ্রুতই নাক বন্ধভাব ভালো হয়ে যাবে।

তেজপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, যা ঠান্ডাজনিত সমস্যাগুলোর প্রকোপ কমাতে কাজ করে। বিশেষত বন্ধ নাকের সমস্যাটি কমিয়ে স্বাদ ফিরিয়ে আনতে তেজপাতা খুব ভালো কাজ করবে। দেড় গ্লাস পানিতে ৫-৬টি তেজপাতা পনের মিনিট জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দেয়া শেষে পানি ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে।

নাক বন্ধ সমস্যা দূর করার আরেকটি ভালো উপায় মেনথল। গরম পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা মেনথল ফেলে একটি তোয়ালে দিয়ে ঢাকুন। এরপর গরম পানির ভাপ নিন, দেখবেন নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা কেটে গেছে।

ইনফেকশন ও নাক বন্ধের সমস্যায় লেবু খেতে পারেন। লেবু খাওয়ার জন্য প্রয়োজন হবে অর্ধেকটি লেবুর রস, এক গ্লাস পানি ও এক চা চামচ মধু। প্রথমে পানি গরম করে এতে মধু মিশিয়ে নিতে হবে। পরে এতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। রোজ দুবার লেবু-মধুর মিশ্রণ খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

আদা চা, মেন্থল চা অথবা গরম স্যুপ খেতে পারেন। এতে আপনার গলা ও নাক পরিষ্কার হয়ে থাকে। আদা দেওয়া চা পানে গলাতে ব্যথা থাকলে সেটিও কমে যাবে। আর স্যুপ খাওয়ার ফলে আপনার শরীর গরম থাকবে যার ফলে ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা কমে যায়।

নাক বন্ধ রোধে পেঁয়াজ একটি ভালো সামাধান। পেঁয়াজ নাকের সর্দি বের করে দিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। নাকের বন্ধভাব রোধে খোসা ছাড়িয়ে পেঁয়াজ কেটে পাঁচ মিনিট নাকের কাছে রাখুন।

ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়ায় নাক বন্ধ ভাব রোধ করতে শোয়ার সময় মাথাকে উঁচু করে শোবেন। এতে মিউকাস কম তৈরি হয়। সবচেয়ে ভালো হয়, ছাদ বা সিলিংয়ের দিকে মুখ করে শুইলে।

নাক বন্ধ রোধে ঝাল জাতীয় খাবার বেশ উপকারী। এ ক্ষেত্রে ঝাল মরিচ খেতে পারেন। এর মধ্যে থাকা ক্যাপসেসিন নাকের পথ পরিষ্কার করে নাক বন্ধ হওয়া রোধে সাহায্য করবে।

স্যালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে পারেন। যথেষ্ট পানি পান করুন। নাক ঝেড়ে ফেলুন, সর্দি আটকে রাখবেন না। নাক এবং কপালে গরম সেঁক দিন, তবে ত্বক যেন পুড়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন

আপনার নাক যদি অ্যালার্জির কারণে বন্ধ হয়ে থাকে তাহলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে তারপর।

অসুস্থ ব্যক্তি হাঁচি-কাশির সময় নাকে-মুখে রুমাল বা টিস্যু পেপার চেপে ধরলে অন্যদের মধ্যে জীবাণু ছড়াবে না। বাইরে থেকে ফিরে প্রত্যেকেরই হাত ধোয়া উচিত। কারণ হাতের মাধ্যমেও জীবাণু ছড়াতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২১ ডিসেম্বর/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :