প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে: রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮:১৫ | প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭:২৫

প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই প্রহসনমূলক নির্বাচন দেশকে অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা ব্রিটিশ পর্যবেক্ষক জেজ কৌলসন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আই ফাউন্ড দ্য নর্থ কোরিয়া মডেল হিয়ার’। অর্থাৎ বাংলাদেশে উত্তর কোরিয়া স্টাইলের একদলীয় নির্বাচন হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, জনগণ ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের আহ্বান পরোয়া না করে পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলের একতরফা ভোটারবর্জিত ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয় হয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত ভোট বর্জনকারী গণতন্ত্রকামী বীর জনতার।

তিনি বলেন, চরম কলংকিত অপদস্তমূলক লজ্জার পরাজয় ঘটেছে গণবিচ্ছিন্ন বেপরোয়া একনায়ক মাফিয়া প্রধান শেখ হাসিনা গংয়ের। এই দিনটি অনন্তকাল একটি জঘন্য কালো দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনে ভোট বর্জন করে দেশের সর্বস্তরের মানুষ আওয়ামী লীগকে লাল কার্ড দেখিয়েছে। ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে জনগণের অভাবনীয়-অভূতপূর্ব নীরব প্রতিবাদে একটি উদ্ভট, গণবর্জিত প্রহসনের প্রকাশ্য অটো ভোট ডাকাতির মঞ্চায়ন দেখলো দেশবাসীসহ গোটা বিশ্বের মানুষ।

‘শত ভয়-ভীতি, জেল-জুলুম নির্যাতন-প্রলোভন ও সরকারের সাঁড়াশি চাপ উপেক্ষা করে ভোট প্রদান না করার মাধ্যমে জনগণ এই নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ৭ জানুয়ারি গভীর রাত থেকে চুরি-ডাকাতি, জালভোট, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বারবার জালভোট দিয়েও বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫% ভোটের ঘোষণা দিয়ে গণভবনের চাপে আবার এক ঘণ্টা পরেই ৪০% এবং গতকাল দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোঁজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর এই ভুয়া হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলংক তিলক উৎকীর্ণ করলো ডামি সরকার।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই অংশগ্রহণহীন ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে। বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া এবং পর্যবেক্ষকরা এই নির্বাচনকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও ভোটার সম্পর্কহীন পুরোপুরি ‘ওয়ান ওম্যান শো’-এর ঘোষিত জয়-পরাজয়ের ভোট বলে আখ্যায়িত করেছে। পাতানো ডামি নির্বাচনের ফাঁদে পা দেয়নি দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ। সারা দেশের ভোট কেন্দ্রগুলো ছিল ভোটারশূন্য।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, গত ৫ বছর গণবিচ্ছিন্ন শেখ হাসিনা বিএনপিসহ বিরোধী দল ও ভিন্ন মতের প্রতিটি মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম-খুন-নির্যাতন মিথ্যা মামলা হুলিয়ায় গৃহছাড়া করেছে। জনপদগুলো গডফাদার-সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-কিলার বাহিনীর মাধ্যমে জল্লাদের উল্লাস-মঞ্চ বানিয়েছে। দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলায় অর্ধকোটির বেশি বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কোটির অধিক বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্বাস্তু করেছে। কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বিএনপি নেতাকর্মীকে বন্দি করে রেখে মৃত্যুর মুখে নিপতিত করেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশকে করেছে বৃহৎ কারাগার। কারা হেফাজতে প্রতিদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের কারো না করো মৃত্যুর সংবাদ আসছে। নতুন নতুন কালাকানুন করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও সাধারণ জনগণকে শৃঙ্খলিত করেছে। আচার-বিচার-আইন আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু দলীয়করণ করে প্রতিষ্ঠা করে সমস্ত মৌলিক অধিকার কবর দিয়ে ভয়ের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। লুটপাট করে দেশকে দেউলিয়া বানিয়েছে। সিন্ডিকেট করে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশচুম্বী করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে। দেশের জনগণকে ভোটারহীন করে রিফিউজিতে পরিণত করেছে। এতো কিছু করার পর শেখ হাসিনার পরিকল্পিত এই স্বেচ্ছাচারী একতরফা প্রহসনের ভোটার বর্জিত নির্বাচনের পর এখন কদর্য উল্লাসে মেতে উঠেছে। ডামি নির্বাচনের ডামি প্রার্থীরা এখন ডামি পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদের কোনো বৈধতা নেই। এক মুহূর্ত ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। এই অবৈধ সরকারকে জনগণ মানে না। আমি এই মুহূর্তে পাতানো গণবিরোধী ডামি নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণের চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আরো দুর্বার করে এই ডামি সরকারের পতন ঘটানো হবে। ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আপনি যে দল কিংবা যে মতেরই হোন, আমাদের আন্দোলনকে বেগবান করতে আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিন। আপনার সাধ্য ও সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে বিএনপিসহ ৬৩টি রাজনৈতিক দলের চলমান আন্দোলনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন। কারণ, আপনার তথা প্রতিটি নাগরিকের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমাদের চলমান আন্দোলন।

ঢাকাটাইমস/০৯জানুয়ারি/জেবি/ইএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :