বাড়ছে গোলের গুড়ের কদর, ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত উপকূলের কৃষকরা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
  প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৩| আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৯:৫৬
অ- অ+

প্রায় শত বছর ধরে গোল গাছের রস দিয়ে গুড় তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে উপকূলের আড়াই শতাধিক কৃষক পরিবার। প্রাকৃতিকভাবে নোনা জলে জন্ম নেয় এই গোল গাছ। অনেকেই আবার এর বীজ সংগ্রহ করে নদী ও খালের পাশে রোপণ করে পরিধি বাড়াচ্ছে গোল গাছের।

নোনা জলে জন্ম নেওয়া সত্ত্বেও এর ডগা কাটলেই বেড় হচ্ছে সুমিষ্ট রস। এ রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে রসালো গুড়। এ গুড় ভূমিকা রাখছে দেশীয় অর্থনীতিতে। ভোক্তা পর্যায়ে গোলের গুড়ের চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি সুযোগ সুবিধা। ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।

ছোট ছোট খাল, ডোবা বাঁধ দেওয়ার কারণে লবণ পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মরে যাচ্ছে গোলগাছ। বর্তমানে লোকসানের মুখে হতাশায় এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন অনেকে। তবে এ পেশাকে আরও সমৃদ্ধ করতে প্রতি বছর পতিত জমিতে গত বছর ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। চলতি বছর আরও ২০ হাজার চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী উপকূলীয় এলাকার জোয়ার-ভাটা প্রবাহমান খাল, নদী নালা ও পতিত জমিসহ ডোবায় প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য গোল বাগান। কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ, চাকামইয়া, মহিপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার। বিশেষ করে পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে গোলগাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন বিকালে গাছের ডগা কেটে মাটির হাড়ি, প্লাস্টিক বোতল পেতে রাখা হয়। পরের দিন সকালে হাড়ি থেকে রস সংগ্রহ করে টিনের তাওয়ায় উচ্চ তাপে তৈরি করা হয় গুড়। কখনো কখনো সকাল-বিকালও রস সংগ্রহ করে থাকেন চাষিরা। কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই গরম গুড় একটি পাত্রে রেখে ঘুটে তৈরি করা হয় উন্নতমানের গুড়। আর এ গুড় প্রতিকেজি বাজারে বিক্রি করা হয় ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে। এ গুড় খেলে ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায় এমন দাবি কৃষকদের। তবে বর্তমানে গুড়ের বাজার মূল্যসহ কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পাওয়া, দিনদিন বাগান উজাড় হয়ে যাওয়া এবং সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় হতাশায় অনেকেই পরিবর্তন করতে চাইছেন এ পেশা।

নীলগঞ্জের গোলচাষি বিধান চন্দ্র মিস্ত্রী বলেন, দিনকে দিন গোলের গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে আমাদের গুড় বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। এখন মোবাইলে বিভিন্ন এলাকা থেকে যোগাযোগ করে কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে টাকা দরে বিক্রয় করছি।

চাষি নির্মল চন্দ্র মৃধা বলেন, আমাদের কাছে থেকে ২০০ টাকা দরে কিনে নিয়ে কয়েকটি গ্রুপ অনলাইনে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রয় করছে। ক্রেতারা সরাসরি আমাদের কাছে থেকে ক্রয় করলে ২০০ টাকায় পাবে।

দেবাশীষ বলেন, গোলের গুড়ের চাহিদা বাড়লেও দিন দিন বাগান কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে গাছ মরে যাচ্ছে। পানি প্রবাহ সচল রাখতে এলাকার খালের বাঁধগুলো কেটে উন্মুক্ত করলেই গোলগাছ বৃদ্ধি পাবে।

তবে কৃষকরা দাবি করছেন, গোলের গুড় স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এ গুড় খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানব দেহের গুঁড়াকৃমি দমন হয়। পানিবাহিত রোগীরাও খেতে পারে। স্যালাইনের প্রয়োজন হবে না।

উপকূলীয় এলাকার খালগুলো খনন করে জোয়ার ভাটার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করতে পারলে গোলগাছ ধ্বংস হবে না। নতুন বাগান সৃষ্টি করলে গোলের গুড়ের উৎপাদন আরও বাড়বে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চাষিরা কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ বলেন, গোল গাছ উপকারী গাছ হিসেবে খুবই কার্যকর। গোল গাছ থেকে শুধু গুড় তৈরিই হয় না, গোলপাতা গ্রামাঞ্চলের মানুষ ঘরের চালের ছাউনিতে ব্যবহার করে থাকে পাশাপাশি গোলগাছ এবং গোল গাছের ফল জালানি চাহিদা পূরণ করে থাকে। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার গোলের গুড় বিক্রি হয়ে থাকে। এর চাহিদাও ব্যাপক।

কলাপাড়া উপজেলায় মোট ৬৫ হেক্টর জমিতে গোলের চাষ হচ্ছে। বর্তমান গোল চাষিদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং সরকারি সকল সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, গোলগাছ বনজ অর্থকরী ফসল। গোলগাছ থেকে বনের ওপর নির্ভরশীল গরিব মানুষগুলো জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গোল চাষিরা দেশীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।

তিনি আরও জানান, গত বছর উপকূলীয় এলাকার পতিত জমিতে ৩০ হাজার গোলের চারা রোপণ করা হয়েছে। চলতি বছরে আরও ২০ হাজার চারা রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের এই কর্মকর্তা। আর এর মাধ্যমে গোল চাষিদের সুদিন ফিরে আসবে। তাল ও খেজুর গুড়ের পাশাপাশি গোলের গুড় বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ ডাকাত করিম শরীফ বাহিনীর ২ সদস্য আটক
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে খালেদা জিয়া কখনো আপস করেননি: কাদের গনি চৌধুরী 
সুনামগঞ্জে পিকআপের ধাক্কায় শিশু নিহত
ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে শুরু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা