দিনে সর্বোচ্চ শব্দদূষণ বাংলামোটরে, রাতে লালবাগে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:২৭ | প্রকাশিত : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:০০

রাজধানীতে দিনে সর্বোচ্চ শব্দদূষণ হয় বাংলামোটরে এবং রাতে সবচেয়ে বেশি লালবাগে। বাংলামোটর এলাকায় দিবাকালীন (সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা) সবচেয়ে বেশি শব্দ থাকে। এই সময়ে এই এলাকায় শব্দের মাত্রা ১০৩.৮ ডেসিবেল। অন্যদিকে রাত্রিকালীন (রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা) সময়ে শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগে, যা ১০১.৫ ডেসিবেল।

সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে ঢাকা মহানগরীতে শব্দদূষণের বর্তমান চিত্র ও করণীয়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন এসব তথ্য তুলে ধরেন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সভাপতি প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান।

পরিজা সভাপতি জানান, গত দুই মাসে ঢাকা মহানগরীর ৪৫টি এলাকায় দিবা ও রাত্রীকালীন শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে। জরিপকৃত এলাকাগুলোকে নীরব, আবাসিক, মিশ্র ও বাণিজ্যিক এলাকায় ভাগ করে নেওয়া হয়েছে।’

জরিপের ফল তুলে ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক ও পরিজা’র সভাপতি আবদুস সোবহান বলেন, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি সচিবালয় এলাকায়, যা ১০১.৭ ডেসিবেল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি ধানমন্ডি ল্যাবএইড এলাকায়, যা ১০১.৫ ডেসিবেল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি বাংলামোটরে, যা ১০৩.৮ ডেসিবেল এবং রাত্রিকালীন শব্দের মাত্রা সবচেয়ে বেশি লালবাগ সেকশনে, যা ১০১.৫ ডেসিবেল।’

আবদুস সোবহান জানান, নীরব এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৮৪.৫ থেকে ১০১.৭ ডেসিবেল এবং রাত্রিকালীন ৯৬.৪ থেকে ১০১.৫ ডেসিবেল। আবাসিক এলাকায় দিবাকালীন ৮২.০ থেকে ৯১.০ ডেসিবেল এবং রাত্রিকালীন ৮৩.০ থেকে ৯১.৬ ডেসিবেল। মিশ্র এলাকায় দিবাকালীন ৯১.০ থেকে ১০১.৫ ডেসিবেল এবং রাত্রিকালীন ৮৯.০ থেকে ১০৩.৮ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৯২.০ থেকে ৯৭.০ ডেসিবেল এবং রাত্রিকালীন ৯১.০ থেকে ৯৯.০ ডেসিবেল।

আবদুস সোবহান বলেন, বাংলামোটরে শব্দের মাত্রা ১০৩.৮ ডেসিবেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৮৬.০০ থেকে ৯৪.০০ ডেসিবেল। সচিবালয় এলাকায় শব্দের মাত্রা ৯৬.০০ থেকে ১০১.৭ ডেসিবেল।

সভায় জনস্বাস্থ্য বিষেষজ্ঞ ও ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, শব্দ সরাসরি স্বাস্থ্যকে আঘাত করছে। এটা আমাদের বোধশক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। শব্দের মাত্রা যদি অনেক বেশি হয়, তাহলে শুধু শ্রবণের ক্ষতি না, উচ্চরক্তচাপ থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হতে পারে। মানুষ বা যেকোন প্রাণী যখন ক্রমাগত স্ট্রেসে থাকে তখন তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।’

রাজধানী ঢাকা বর্তমানে বাসযোগ্য অযোগ্য নগরে পরিণত হয়েছে জানিয়ে নগর গবেষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই নগর কেন এতটা অবসবাসযোগ্য আমার বোধগম্য হয় না। মিরপুরে রাত ২-৩টা পর্যন্ত ট্রাক থেকে অবকাঠামো নির্মাণসামগ্রী রাস্তায় প্রচণ্ড শব্দে ফেলা হয়। যেকোন সংকটের কথা বললেই শোনা যায় সরকারের জনবলের ঘাটতি।

রাজধানীতে শব্দদূষণের উৎসসমূহ

যানবাহনের জোরালো হর্ণ ও ইঞ্জিনের শব্দ, যানবাহন চলাচলের শব্দ, রেলগাড়ী চলাচলের শব্দ, বিভিন্ন নির্মাণ কাজের শব্দ, মেশিনে ইট ও পাথর ভাঙ্গার শব্দ, ইমারত ভাঙ্গার শব্দ, কলকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, গ্রীলের দোকানে হাতুড়ী পেটানোর শব্দ, জেনারেটরের শব্দ, লাউড স্পিকারের শব্দ, অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানোর শব্দ, উড়োজাহাজের শব্দ, ডিজে গান বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে । শহর এলাকায় শব্দ দূষণের প্রকোপ গ্রামাঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশী। ঘরের বাহিরে, রাস্তায় বা কর্মস্থলেই নয়, ঘরে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি যেমন ভ্যকুয়াম ক্লিনার, ফুড ব্লেন্ডার ও গ্রাইন্ডার, পাখা থেকেও বিরক্তিকর শব্দ বের হয় ।

শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ

শব্দ দূষণের ফলে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা ঘটতে পারে। উচ্চ শব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। আকস্মিক উচ্চ শব্দ মানবদেহে রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে এবং পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়। এছাড়াও শ্রবণশক্তি কমে আসে, বধির হওয়ার মত অবস্থার সৃষ্টি হয়, মাথা ব্যথা, বদহজম, অনিদ্রা, মনসংযোগ কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তিবোধ, এমনকি অস্বাভাবিক আচরণ করার মত মনোদৈহিক নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ণ বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রচন্ড চাপ দেয়। এধরনের শব্দের প্রভাবে সাময়িকভাবে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি হয়, রক্তনালী সংকুচিত হয়, রক্তে কোলেষ্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ণ মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুত গতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়৷

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ - বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে সরকার শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ প্রণয়ন করে। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক বা শিল্প এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে, এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোন এলাকায় শব্দের সর্বোচ্চ মানমাত্রা অতিক্রম করতে পারবে না। নীরব এলাকা হচ্ছে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বা একই জাতীয় অন্য কোন প্রতিষ্ঠান এবং এর চারপাশের ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা। নীরব এলাকায় চলাচলকালে যানবাহনে কোন প্রকার হর্ণ বাজানো এবং মোটর, নৌ বা অন্য কোন যানে অনুমোদিত শব্দের মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ণ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই বিধিমালার বিধান লংঘন অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে । কোন ব্যক্তি নির্ধারিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক ১ মাস কারাদন্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দন্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ডে বা উভয় দত্তে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ মোতাবেক এলাকাভিত্তিক শব্দের মানমাত্রা।

করণীয়

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা; জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো; উচ্চ শব্দসৃষ্টিকারী হর্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা; উচ্চ শব্দের হর্ণ আমদানী বন্ধ করা; নীরব এলাকায় হর্ণ না বাজানো ও অন্যান্য এলাকায় অপ্রয়োজনে হর্ণ না বাজানোর জন্য মোটরযান ড্রাইভারদের উদ্বুদ্ধ করা; যানবাহন নিয়মিত মেরামত করা; লাউড স্পীকারের ব্যবহারে সচেতন হওয়া; অডিও ক্যাসেটের দোকানে উচ্চ শব্দে গান বাজানো নিয়ন্ত্রণ করা; কলকারখানায় শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপর ন্যস্ত আইনসিদ্ধ দায়িত্ব ও কর্তব্য আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করা এবং বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা; মোবাইল কোর্ট পরিচালনা; সর্বোপরি জনগণসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সরকারী বিধিবিধান মেনে চলা ।

(ঢাকাটাইমস/০৪মার্চ/এলএম/এমআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

বাসাবোতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে যাওয়া আরও এক শ্রমিকের মৃত্যু

নিষেধাজ্ঞা পাল্টা নিষেধাজ্ঞা না থাকলে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত: প্রধানমন্ত্রী

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

হজ পালনে সৌদি আরব গেছেন ২৪ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি

আজ শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

বড় বড় খেলাপিরা সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারছে: ফরাসউদ্দিন

গতানুগতিক ভবন নির্মাণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে: জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী

২১ মে ১৫৭ উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন শহীদ স্কোয়াড্রন লিডার জাওয়াদের পরিবার

সব জেলায় বইছে তাপপ্রবাহ, শনিবার থেকে বৃষ্টির আভাস

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :