ট্রাফিক পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় ঢাকা আরও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে: ডিসি মোস্তাক 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৬ মে ২০২৪, ১৪:২৪ | প্রকাশিত : ১৬ মে ২০২৪, ১৩:০৮

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দিক থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্টারসেকশন। আসাদগেট, ধানমন্ডি এবং বসিলার সংযোগকারী এই রাস্তার আশপাশেই রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে হাজারো মানুষকে।

সম্প্রতি তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ এই দুর্ভোগ লাঘবে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন এই পরিকল্পনার বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহম্মেদ।

তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, “ট্রাফিক পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রাণপ্রিয় ঢাকা শহর আরও বসবাসযোগ্য হয়ে উঠবে, কমে আসবে চিরচেনা যানজট।”

মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, “ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুর এলাকার স্ট্যান্ডকেন্দ্রিক মানুষ প্রায়ই ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে অভিযোগ দেয়। স্কুল-কলেজের আধিক্য হিসেবে এই এলাকায় যে ধরনের মানুষ বসবাস করে, মানুষের আচরণ এবং যানবাহনের যে ধরন সেটা আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। আমরা সিটি করপোরেশন, লোকাল জনপ্রতিনিধি এবং অন্যান্য সব লোকের সঙ্গে সমন্বয় করে কোনোভাবেই এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না। এখানে রিকশা, সিএনজি বা যানজট হয় এমন গাড়ির আধিক্য আছে। তাই আমরা ট্রাফিক পুলিশ কদিন ধরেই ছোট আকারে পরিকল্পনা তৈরি করেছিলাম। রমজান মাসে শিয়া মসজিদ এলাকায় একটা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার আয়োজনও করেছিলাম। সেটার কারণে অনেকটা স্বস্তিদায়কও হয়েছে।”

তিনি বলেন, “মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে শিয়া মসজিদ এবং বসিলা এলাকাতে যাতে কোনো ধরনের হকার না থাকে তার জন্যও আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। পাশাপাশি রিকশা বা অন্যান্য গাড়ির জন্য আলাদা লেন বা ওয়ানওয়ে করে দিয়েছি, যাতে গাড়িঘোড়া উল্টা রোডে না যেতে পারে তার জন্য ব্যবস্থা করেছি। সব থেকে বড় কাজ যেটা করেছি, এই মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক যে বাসগুলো এসে দাঁড়াতো সেই বাসগুলোকে বসিলা পার করে আমরা ঘাটারচর পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছি। যে গাড়িগুলো বসিলা পর্যন্ত যাওয়ার কথা সেই গাড়িগুলো বসিলার পশ্চিম পাশ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছি। বর্তমানে এখানে শুধু একটি বা দুটি কোম্পানির বাস ইউটার্ন করতে পারে। সিটি করপোরেশন আমাদের একটা বামের লেন বের করে দেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করেছে।”

ডিসি মোস্তাক বলেন, “মোহাম্মদপুর এলাকায় টোটাল ২২টা স্কুল আছে, ৩০ হাজারের উপরে ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। আমরা প্রত্যেক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যে মিটিং করেছি এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করেছি। এখানে সমস্যা হলো, এই স্কুলগুলোতে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ি আসে, পাশাপাশি রিকশাও আসে। আমরা এই স্কুলকেন্দ্রিক এলাকাগুলো নিয়ে কিছু পরিকল্পনা করেছি, রাস্তার ব্যবস্থা করেছি এবং আরও কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি। আশা করি ১০-১৫ দিনের মধ্যে এগুলো সব বাস্তবায়ন করতে পারব।”

ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিল। ট্রাফিক যেসব এলাকায় থাকে সেসব এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা যাতে কোনোভাবে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই সচেষ্ট আছি। কিন্তু আপনারা জানেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা যে পরিমাণ বেড়ে গেছে তা দ্রুত সময়ে ঢাকা শহর থেকে নির্মূল করা সম্ভব নয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার মূল উৎপত্তিস্থল যেগুলো, এগুলোর চার্জিং পয়েন্ট যেগুলো, যেখানে গ্যারেজ আছে এমনকি যেসব ব্যক্তি এগুলোর সঙ্গে জড়িত সেসব ব্যক্তিরও তালিকা প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করেছি। আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের ডিএমপি কমিশনার যেভাবে পরবর্তী নির্দেশনা দেন সেভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।”

ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরে ডাম্পিং স্টেশনে না পাঠিয়ে জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের পর্যাপ্ত ডাম্পিং ব্যবস্থা নেই। যে পরিমাণ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে সেগুলো ডাম্পিং করতে গেলে তো পর্যাপ্ত ডাম্পিং স্টেশন প্রয়োজন। এখন আমাদের যে ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে সেখানে দেখা গেল ৫০টি অটোরিকশা ডাম্পিং করা যাবে। কিন্তু তারপরে আমরা যেগুলো ধরব সেগুলো কী করব? তাছাড়াও অন্যান্য অনেক গাড়ি আছে, যেগুলো ডাম্পিংয়ে নেওয়া হয়। রিকশা দিয়ে স্টেশন পরিপূর্ণ করে রাখলে অন্য যানবাহনগুলো ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হবে না। এই কারণে অনেক সময় আমাদের রিকশাগুলো ধরে ডাম্পিং স্টেশনে না পাঠিয়ে জরিমানা করে ছেড়ে দিতে হয়।”

তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ থেকে যানজট নিরসনে পরিকল্পনায় একাধিক পদক্ষেপের কথা জানান। সেগুলো হলো মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সব গণপরিবহনের অস্থায়ী পার্কিং অপসারণ, বসিলা থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ননস্টপ সার্ভিস চালু করা, বাসস্ট্যান্ড থেকে বসিলা চার রাস্তার মোড় পর্যন্ত সব অবৈধ হকার উচ্ছেদ করে শতভাগ রাস্তা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা, বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক বিআরটিসির বাস ডিপো থাকায় বিআরটিসির বাস দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় অপেক্ষা করার সুযোগ না দেওয়া এবং এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় করা, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডকেন্দ্রিক নতুন সার্কুলেশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করা।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সার্বিক উন্নতির স্বার্থে বাসস্ট্যান্ডর অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি অপসারণ করে রাস্তা ও ইন্টারসেকশন প্রশস্ত করার উদ্দেশ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে পত্র পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এমআই/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :