ঢাকা-১৪: এস এ খালেকের উত্তরাধিকার সাজুকেই বিএনপির নির্ভরযোগ্য প্রার্থী ভাবছেন স্থানীয়রা

সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে নতুন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনমুখী হতে শুরু করেছেন। ভোটারদের মধ্যেও সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে।
অবিভক্ত মিরপুর আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ছিলেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক ডেপুটি মেয়র এস এ খালেক। স্থানীয়দের কাছে তিনি ছিলেন এক নির্ভরতার নাম। ২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি এস এ খালেক প্রয়াত হয়েছেন বটে, কিন্তু মিরপুরের রাজনীতিতে বিএনপির এই নেতা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। এমনটাই বলছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী এহছানুল হক।
এহছানুল বলছিলেন, বিশেষ করে মিরপুরের ক্ষেত্রে এস এ খালেক নামটি ও তার পরিবারকে বাদ দিয়ে মিরপুরের নির্বাচনী রাজনীতির সমীকরণ অত সহজ হবে না।
তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৪ আসনে কে হবেন বিএনপির নির্ভরযোগ্য প্রার্থী- এমন প্রশ্নে প্রায় সবার বক্তব্যে আসে এস এ খালেকের উত্তরাধিকারের কথা। এই বিবেচনাতেই দারুসসালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক ও ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এস এ সিদ্দিক সাজু এগিয়ে বলে মনে করেন তারা।
কেন এস এ সিদ্দিক সাজু এগিয়ে, তার আরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ। তার মতে, শুধু বাবা এস এ খালেকের ইতিবাচক প্রভাব কিংবা পারিবারিক ঐতিহ্য নয়, আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামে রাজধানী ঢাকায় একেবারে প্রথম কাতারে থাকা মুখগুলোর অন্যতম এই সাজু।
সাজুর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ আমলে ৮২টি হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার আসামি করা হয় তাকে। তার নেতাকর্মীরাও নানা মামলায় আসামি হয়ে বিপর্যস্ত। এর মধ্যেই একসময় দুরারোগ্য ব্যাধি তার শরীরে বাসা বাঁধে, তবু সাজু আগলে রেখেছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের। তাদের মামলার খরচ বহন, হামলা-গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে-লুকিয়ে থাকা কর্মীদের সব দায়িত্ব নেন নিজের কাঁধে।
হুলিয়া মাথায় নিয়ে সাজু নিজেও বছরের পর বছর ছিলেন নিজের বাড়িছাড়া। পৈতৃক বিশাল বাড়ি ফেলে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে-চুকিয়ে ভাড়াবাড়িতে কাটিয়েছেন দীর্ঘ সময়। তবু সব সময় অবিচল থেকেছেন দলের নীতি-আদর্শের প্রতি।
স্থানীয় বিএনপির একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। নিজেদের ‘ব্র্যাকেটবন্দি’ থেকে দূরে রাখতে নাম প্রকাশ করেননি তারা। তাদের মতে, সাজু অসম্ভব কর্মীবান্ধব, সদা হাসিমুখ। সহজে মিশতে পারেন সবার সঙ্গে। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছেন, এমন নন তিনি।
জানা যায়, এস এ সিদ্দিক সাজু ১৯৮৮ সালে দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উচ্চ শিক্ষা নেন। এরপর দেশে ফিরে নব্বইয়ের দশকে বাবা এস এ খালেকের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে নাম লেখান।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে মিরপুর আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এস এ খালেক। বাবার নির্বাচন পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এস এ সিদ্দিক সাজু। সেই যে প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে তার পথচলা শুরু, এরপর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে মিরপুরের মানুষের পাশে আছেন সাজু ।
দারুস সালামের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাজু দলের কর্মকাণ্ডে যেমন সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থেকেছেন, পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ নিম্নবিত্ত মানুষের কল্যাণে সমান সক্রিয় ছিলেন। সামাজিক দায়বদ্ধতার এই ধারা বাবার ধারাবাহিকতার সূত্রেই ধরে রেখেছেন এই তরুণ রাজনীতিক।
মিরপুরের শিক্ষা-স্বাস্থ্য এবং যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এস এ খালেকের নাম সমীহের সঙ্গেই স্মরণ করেন এলাকাবাসী। রাজধানীর একসময়ের প্রান্তিক এলাকা মিরপুরে স্টেডিয়াম নির্মাণ, গাবতলী টার্মিনাল নির্মাণ ও আধুনিকীকরণ, হাজার গৃহহীনের জন্য জমি বরাদ্দ ও টিনশেড ঘর নির্মাণের মাধ্যমে আবাসন সুবিধা প্রদান- এমন বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আনার ক্ষেত্রে আজও পাইওনিয়ার মনে করা হয় সাজুর বাবা এস এ খালেককে।
বাবার এই সাংগঠনিক গুণগুলো ধারণ করেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত সাজু- এমনটাই বলছিলেন তাকে ঘনিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করা একজন সাংবাদিক।
ওই সাংবাদিক বলেন, কর্মীদের দুঃসময়ে নীরবে-নিভৃতে ছুটে গেছেন সাজু, যখন অনেক হোমড়া-চোমড়াও কর্মীদের ফোন ধরতে পুলিশের ভয়ে থাকতেন। নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি ও তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফার প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি শুধু নয়, দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালনে সাজু অগ্রগামী।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারেও যেতে হয়েছে সাজুকে। তাকে হয়রানি করতে প্রতিপক্ষ বারবার তার দারুস সালামের বাড়িতে ও গাবতলীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ পাঠিয়েছে। এ কারণে বছরের পর বছর অসুস্থ পিতা-মাতা থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন সাজু।
এত এত হয়রানি হওয়ার পরও সাজু এখন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কোনো প্রতিহিংসার আশ্রয় নেননি। তার এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের প্রশংসা করেন মিরপুরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ।
তবে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার হওয়া নেতাকর্মীদের পক্ষে বিচারের দাবিতে উচ্চকণ্ঠ তিনি। দুরারোগ্য ব্যাধিকে জয় করে শতভাগ সুস্থ সাজু দলের পক্ষে সভা-সমাবেশ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, ঢাকা-১৪ আসনে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সাজু ছাড়াও বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন আরও দুজন। কিন্তু দলের প্রতি নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার, এলাকার মানুষের জন্য কাজ এবং এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা পালনের ফলে অনেক এগিয়ে আছেন সাজু।
২০২৫ সালের ৫ জানুয়ারি এস এ খালেকের মৃত্যুর পর তার জানাজায় অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা প্রত্যক্ষ করেছেন এস এ খালেকের পরিবারের প্রতি মানুষের ভালোবাসা।
আগামী সংসদ নির্বাচনে পিতার কাজের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এস এ সিদ্দিক সাজুর ওপর আস্থা রাখবে বিএনপি- এমনটাই মনে করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নেতৃত্ব গঠিত নতুন দল এনসিপি তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা আরিফুল ইসলাম আদিবকে প্রার্থী করবে ঢাকা-১৪ আসনে।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, এই আসনে যেকোনো শক্তিশালী প্রার্থীকে মোকাবিলায় এস এ খালেক পরিবার ও তাদের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার সাজুই যোগ্য প্রার্থী।
(ঢাকাটাইমস/৩জুলাই/মোআ)

মন্তব্য করুন