সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল: ঈদে যাত্রীদের চাপ না থাকায় আরামে বাড়ি ফিরছে মানুষ

আমিরুল ইসলাম ফরহাদ, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৪১| আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ২০:৫১
অ- অ+

রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে নেই যাত্রীদের চাপ। এ জন্য আরামে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। এদিকে মালিকরা বলছেন, কয়েকদিনে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়।

সোমবার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সরেজমিন ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

লঞ্চের স্টাফদের লাগামহীন হাঁকডাক থাকলেও যাত্রীর চাপ অন্যান্য ঈদের সময়ের তুলনায় অনেকটায় কম। টিকিট বিক্রেতারাসহ লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা এমনটিই জানিয়েছেন। টার্মিনালে যাত্রীর তেমন একটা ভিড় নেই, পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। নিয়মমাফিক লঞ্চ চলাচল করলেও লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের প্রত্যাশার চেয়ে যাত্রী অনেক কম। টার্মিনালে তেমন একটা ভিড় নেই। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলো অনেকটাই ফাঁকা। শুধুমাত্র চাঁদপুর রুটের যাত্রীদের ভিড় উপচেপড়া। ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া রুটগুলোতেও কিছুটা ভিড় ছিল। বরিশাল রুটে ছয়টি লঞ্চ যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রী সংকটে ছয়টি যায়নি।

ঈদ ঘিরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরে ফেরা মানুষদের সেই আমেজ আর নেই। এদিকে পর্যাপ্ত লঞ্চ ও খুব বেশি ভিড় না থাকায় অনেকটা আরামদায়কভাবে বাড়ি ফিরতে পারছেন বলে জানান লঞ্চ যাত্রীরা। ঢাকা থেকে ৪৫টি রুটে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোতে খুব বেশি যাত্রী না থাকলেও গত কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। এদিকে প্রত্যাশিত যাত্রী না হওয়ার কারণে কয়েকটি লঞ্চের যাত্রা বাতিল করেছে মালিকপক্ষ।

লঞ্চযাত্রীরা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর লঞ্চ মালিকদের দাপট অনেকটাই কমে গেছে। এখন আর বাড়তি ভাড়া চাওয়া হয় না। অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হয় না। টাকা কম লাগে। আর জার্নি খুব আরামদায়ক বলেই লঞ্চে ভরসা তাদের। তবে ভিন্ন কথা বলছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যাত্রী সংকটে কয়েকটি লঞ্চ রুট প্রায় বন্ধের পথে। ঈদের আগেও যাত্রীর চাপ নেই।

তাসরিফ লঞ্চে হাতিয়াগামী নুরে আলম জিকু বলেন, তাসরিফ লঞ্চে সকাল সাড়ে ৬টায় উঠলাম। তখনো লঞ্চের কোথায় বসার মতো জায়গা নেই। কেউ কেউ গত রাত থেকেই লঞ্চে অবস্থান করছেন। এখন বেলা সোয়া ৪টা বাজে তবুও যাত্রী উঠাচ্ছে। ছাদেও যাত্রী ভরা। ভেতরে নারী পুরুষ গরমে অতিষ্ঠ। শিশুরা চিৎকার করছে। নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ নেই।

বরিশালগামী জাবেদ বলেন, পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে যাচ্ছি। বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে ভ্রমণ একটু কষ্টকর। তাই লঞ্চে যাচ্ছি। তবে আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন বাসে করে ঢাকায় যাতায়াত করে।

সুন্দরবন-১১ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা মামুনুর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত কেবিনের কোনো চাপ দেখা যাচ্ছে না। তবে পরে হয় কি না তা আমরা এখনও জানি না। গতবার যে চাপটা ছিল এখন আর ওই চাপটা নেই। এখন টিকিট বিক্রি আগের তুলনায় কম হচ্ছে।

এমভি টিপু-১৩ লঞ্চের স্টাফ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ঈদের আগে ৭ এপ্রিল ট্রিপ আছে। এখনও অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে না। অগ্রিম টিকিট ছাড়ার বিষয়ে মালিকপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। টিকিট পেতে হলে যাত্রীদের ট্রিপের দুই দিন আগে এসে খোঁজ নিতে হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ঘাটে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই, যা আছে তা আশানুরূপ নয়। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে। বলা চলে ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আগের মতো তেমন চাপ নেই। আশা করি যাত্রী বাড়বে সামনে। ঘাটে বিশেষ লঞ্চ দেওয়া আছে। যাত্রী বেশি হলে চলবে না হলে চলবে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহন (যাপা) সহসভাপতি বদিউজ্জামাল বাদল বলেন, যাত্রী একেবারেই কম। লঞ্চের ডেক বেশিরভাগ খালি যাচ্ছে। বড় বড় লঞ্চগুলোর আরও বিপদ। লঞ্চের ব্যবসা শেষ। তেলের দামই উঠছে না। লস নিয়ে গেলে ফিরে আসা দায়।

বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম খান বলেন, ঈদুল ফিতরকে ঘিরে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে যেমন যাত্রীর চাপ হওয়ার কথা ছিল তেমনটা কিন্তু নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ তেমন একটা নেই যেমন হওয়ার কথা। আজ কিছুটা বেড়েছে তবে গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীর চাপ আরো বাড়বে।

কালবৈশাখি মৌসুমে ঈদ ভ্রমণে যাত্রীর বাড়তি নিরাপত্তার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, কালবৈশাখি কখন আসবে আমরা কেউ জানি না। তবে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে আবহাওয়ার সংকেত আমরা যথাযথভাবে সংগ্রহ করব। সেসব তথ্য লঞ্চ মালিক সমিতি এবং লঞ্চ মাস্টারদের সঙ্গে নিয়ে যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে সেখানে পাঠানো হবে।

সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম বলেন, বিগত সময়গুলোর তুলনায় ঘাটে যাত্রীর চাপ অনেক কম। তবে এ ভিড় গত কয়েক দিনের থেকে সামান্য বেড়েছে। পুলিশ, র‍্যাবসহ আনসার সদস্যরা যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে কাজ করছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। আমাদের নৌপুলিশ ঘাটে ও লঞ্চে উভয় স্থানে কাজ করছে।

(ঢাকাটাইমস/৮এপ্রিল/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পদ্মা সেতুতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ, নিহত ১
"ভোটে জেতা এত সহজ? মেম্বার ইলেকশন করলেও জিতবা না" — হাসনাতকে কটাক্ষ নাসির উদ্দীনের
দেশে পৌঁছেছে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও বিজিএমইএ’র সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবের মরদেহ
‘একটি দলের সঙ্গে রাষ্ট্রের যৌথ বিবৃতি প্রদান শোভনীয় না’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা