এবার লেবাননে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল

লেবাননের শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে দেশটিতে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। টাইমস অব ইসরায়েলসহ একাধিক ইসরায়েলি মিডিয়ার খবরে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন জানিয়েছে, লেবানন সীমান্তের কাছে আরও সেনা-সমাবেশ শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে দুই রিজার্ভ ব্রিগেডের সেনাদের ডেকেছে তারা। এর মাধ্যমে শঙ্কা দেখা দিয়েছে দখলদার ইসরায়েল হয়ত লেবাননে স্থল হামলা চালাতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মঙ্গলবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট লেবাননে স্থল আক্রমণের জন্য প্রশিক্ষণরত সৈন্যদের সঙ্গে দেখা এবং দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনায় সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
আইডিএফ বলেছে, এর মাধ্যমে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখা, ইসরায়েলিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সীমান্তে ইসরায়েলিদের ফেরার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের সম্ভাব্য স্থল হামলা নিয়ে প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছে হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটি বলেছে, ২০০৬ সাল থেকেই তারা ইসরায়েলের স্থল হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশনে ভাষণে হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা হাসান নাসরুল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি ইসরায়েলি সেনারা লেবাননে প্রবেশের চেষ্টা চালায় তাহলে তারা এতে ব্যর্থ হবে।’
প্রসঙ্গত, হিজবুল্লাহর সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সোমবার লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় ইতোমধ্যে নারী-শিশুসহ পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার ৮০০ জন। বুধবারও লেবাননে আবারও যুদ্ধবিমান থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জবাবে প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান কার্যালয়ে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ।
তেল আবিবে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, লেবাননের ভূখণ্ড থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রে সীমান্ত ক্রসিং শনাক্ত করা হয়েছে। পরে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ক্ষেপণাস্ত্রে বাধা দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র নাদাভ শোশানি বলেন, লেবাননের একটি গ্রাম থেকে হিজবুল্লাহ যখন ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করেছিল, তখন এর লক্ষ্য কী ছিল তা তিনি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ফলে তেল আবিবের দিকে, তেল আবিবের বেসামরিক এলাকার দিকে একটি ভারী ক্ষেপণাস্ত্রের বহর গিয়েছে। তবে মোসাদের সদরদপ্তর ওই এলাকায় নেই। তেল আবিব এবং মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলার বিষয়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানো হয়েছে। তবে এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রতি সংহতি জানিয়ে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রায় প্রতিদিন রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। সীমান্ত থেকে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ)।
অন্যদিকে গত মাসে বৈরুতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকরকে হত্যা করে ইসরায়েল। এরপর থেকেই ইসরায়েলে ওপর প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহর মধ্যে উত্তেজনা একটি বড় ধরনের সংঘাতে রুপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
সূত্র: আনাদোলু, টাইমস অব ইসরায়েল, আলজাজিরা
(ঢাকাটাইমস/২৫সেপ্টেম্বর/এমআর)

মন্তব্য করুন