ইজতেমায় আসছেন মুসল্লিরা, শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ান

অবশেষে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর কহর দরিয়া খ্যাত তুরাগ নদের তীরে শুরায়ে নেজামের তত্ত্বাবধানে (জুবায়েরপন্থি) শুরু হচ্ছে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। দুই পর্বের প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে ৩ ফেব্রুয়ারি, চলবে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাবলিগ অনুসারী মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে দলে দলে আসতে শুরু করেছেন।
ইজতেমা সামনে রেখে মুসল্লিদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠছে তুরাগতীর। এরই মধ্যে শিল্পনগরী টঙ্গী সেজেছে নতুন সাজে। টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় বিরাজ করছে ধর্মীয় আমেজ।
মাওলানা সাদ অনুসারীদের (নিজামউদ্দিন মারকাজ) ইজতেমা শুরু হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় মিলনমেলা বিশ্ব তাবলিগ জামাতের এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
এরই মধ্যে ১৬০ একর জমির ওপর সুবিশাল প্যান্ডেল নির্মাণসহ সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫ স্তরের নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা।
৫৮তম বিশ্ব ইজতেমায় বৃহস্পতিবারের মধ্যেই দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ময়দানে এসে তাদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নেবেন। এবারের ইজতেমায় পুরা বাংলাদেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে এবং কে কোন ধাপে অংশগ্রহণ করবে তা ইতিমধ্যে জেলা ওয়ালাদের মুরব্বিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ নিচ্ছেন গাজীপুর, টংগী, ধামরাই, গাইবান্ধা, মিরপুর, কাকরাইল, নাটোর, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, দোহার, ডেমরা, কাকরাইল, নড়াইল, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নবাবগঞ্জ, নীলফামারি, দিনাজপুর, রংপুর, বগুরা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা, চুয়াডাংগা, কুষ্টিয়া, যশোর, মাগুরা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, শেরপুর, ফরিদপুর, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, চাদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, ঝিনাইদহ, চাপাইনবাবগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, রাজবাড়ী জেলা। এই ধাপে ঢাকার একাংশসহ মোট ৪১টি জেলা অংশ নিচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপে অংশ নেবেন যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, মোহাম্মাদপুর, মুন্সিগঞ্জ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর, টাংগাইল, পাবনা, নরসিংদী, সাভার, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজার, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ঝালকাঠি, বরগুনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, রাংগামাটি, নওগাঁ, বান্দরবন জেলা। এই ধাপে ঢাকার একাংশ সহ ২২টি জেলা অংশ নেবে।
ভাসমান সেতু নির্মাণ
তুরাগ নদীতে এ বছর ভাসমান সেতুন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি সেতু নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী এবং একটি বিআইডব্লিটিএ। এসব ব্রিজ দিয়ে সাময়িকভাবে মুসল্লিরা এপার থেকে ওপার যাতায়াত করতে পারবেন।
বিদেশি মুসল্লিদের জন্য আবাসনস্থল তৈরি
বিদেশি মেহমানদের ওজু, গোসল ও বাথরুমের জন্য উন্নতমানের পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের রান্নার জন্য সরবরাহ করা হবে প্রাকৃতিক গ্যাস। বিশেষ করে বিদেশি মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তাদের পুরো ছাউনিটি আলাদাভাবে তৈরি করা হয়।
চিকিৎসার ব্যবস্থা
ইজতেমা ময়দান ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার হাসপাতালে মুসল্লীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। রোগী পরিবহনের জন্য এম্বুলেন্স মোতায়ন থাকবে।
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১২টি উৎপাদন নলকূপে ১২ কিলোমিটার পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হবে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তুতি
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ২৫টি ফগার মেশিনে মশাক নিধনে কাজ করা হবে। ময়দানে নিয়মিত পানি ছিটানো, মশার ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেখানে সার্বক্ষণিক একাধিক টিম কাজ করবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ
জিএমপির কমিশনার ড. নাজমূল করীম খান বলেন, এবারের ইজতেমায় ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ১৬টি। ৫ সেক্টরে ভাগ করে নিরাপত্তা ছক করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ২০টি মোবাইল পার্টি, ২০টি চেকপোস্ট থাকবে। ড্রোন ও হেলিকপ্টার টহল থাকবে।
ইজতেমা কমিটির বক্তব্য
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মো. মাহফুজ হান্নান জানান, ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ প্রায় ৯৯ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। ইজতেমার আয়োজক তাবলিগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লি¬ষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৯জানুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন