সাক্ষাৎকার

ব্যবসায়ীরা খুব কষ্টে আছে: রশিদুজ্জামান মিল্লাত

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৯| আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ১৩:০৪
অ- অ+

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। পেশায় একজন ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত প্রায় ১০ মাস দেশে কেমন চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য? বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে কী কী পদক্ষেপ নেবে? কেমন চোখে দেখবে ভিন্ন মতাদর্শের ব্যবসায়ীদের? ঢাকা টাইমসের কাছে সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক মনির হোসেন লিটন।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে এখন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য কেমন চলছে?

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন মন্দা চলছে। মধ্যম সারির ব্যবসায়ীদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাদের কোন ব্যবসা-বাণিজ্য নাই, কোন টেন্ডার হচ্ছে না। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগ না থাকার কারণে এদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য হচ্ছে না। এসব কারণে ব্যবসায়ীরা এখন খুব কষ্টের মধ্যে আছে।

প্রশ্ন: অন্তর্বর্তী সরকার গত ১০ মাসে আর্থিক খাতে কতটা শৃঙ্খলা ফেরাতে পেরেছে?

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা চেষ্টা করছেন, এটা বোঝা যায়। ব্যাংকিংসহ বেশ কিছু খাতে কিছু সংস্কার করা হয়েছে। কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অভাবে অন্তর্বর্তী সরকার সেসব বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এজন্যই দ্রুত রাজনৈতিক সরকার দরকার।

প্রশ্ন: গত বছর ৫ আগস্টের পর শুধু রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে ব্যবসায়ীর কলকারখানায় হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। অনেকের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। এবিষয়টি বিএনপি কিভাবে দেখে? তাদের ব্যবসা সচল রাখতে বিএনপি আশ্বস্ত করার কোন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা।

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: পতিত সরকারের আমলে অনেকে ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি ও ব্যাংকের অর্থ লুটপাট করেছে। বিদেশে সেসব অর্থ পাচার করে দিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর পর এক ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই পরিস্থিতিতে অনেকগুলো শিল্পকারখানায় হামলা হয়েছে, ভাঙচুর হয়েছে। তবে বিএনপি কখনো এমন হামলা-ভাঙচুর সমর্থন করে না। কারো ব্যবসা কিংবা কলকারখানা বন্ধ হোক বিএনপি সেটি চায় না। বিএনপি মনে করে যারা ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে টাকা লুটপাট করেছে তাদের বিচার হোক। কিন্তু কলকারখানা সচল থাকুক।

প্রশ্ন: বিগত বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুৎ খাতের নাজুক অবস্থার কারণে অনেক সমালোচনা হয়েছে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে এই খাতের উন্নয়নে বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কি?

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিটি জেলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিলো। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে অর্থ লুটপাটের জন্য বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ দিয়েছিলো। আমাদের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থায় ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সামর্থ্য নেই। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ২৫ থেকে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ দিয়েছিলো। সঞ্চালন সামর্থ্যের বাড়তি ১৩ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা না গেলেও এর মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। এটি ছিলো আসলে টাকা লুটপাট করার সুযোগ করে দেয়া।

বিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে চাহিদা ও সঞ্চালন ব্যবস্থার সামর্থ্য বিবেচনা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সচল রাখবে। কলকারখানা যাতে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ না থাকে সেটি নিশ্চিত করবে।

প্রশ্ন: ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি, হাট-ঘাটে দখলবাজির অভিযোগ উঠেছিলো। এমন অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপি ব্যবস্থাও নিয়েছে। এর কেমন সুফল পাওয়া গেছে?

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: কোথাও এধরণের চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আগামীতেও এমন অভিযোগের প্রমাণ পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বিএনপি যেহেতু একটি বড় দল এবং আগামীতে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি, তাই এই দলের মানহানি করতে অনেকে অনেক কিছু বাড়িয়েও বলছে। আওয়ামী লীগ পতনের পর চাঁদাবাজি-দখলবাজিতে জামায়াতে ইসলামী-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদেরও নাম এসেছে। কিন্তু বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে প্রতিপক্ষ।

প্রশ্ন: দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গণে একটা কথা চালু হয়েছে যে, ব্যবসায়ীরা রাজনীতি দখল করে নিচ্ছে। হঠাৎ করেই কোন দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করছে, সংসদ সদস্য হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের ত্যাগী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির ভাবনা ও আপনার মতামত কি?

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করে প্রত্যেক রাজনীতিবিদেরই নিজস্ব আয়ের উৎস থাকা উচিত। একজন রাজনীতিবিদের ব্যবসা-বাণিজ্য করা অপরাধ নয়, বরং রাজনীতির জন্যই এটা ভালো। কারণ রাজনীতিবিদের কোন পেশা বা নিজস্ব আয়ের উৎস না থাকলে সে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

তবে কোন ব্যবসায়ী হুট করে দলে যোগ দিয়েই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে যাবেন, এটিও হওয়া উচিত নয়। দলে যোগ দিয়ে ধাপে ধাপে তাকে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিএনপির গঠনতন্ত্র বিষয়টি আরো সুষ্পষ্ট করেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেউ সদস্য হওয়ার তিন বছর পার না হলে মনোনয়ন চাইতে পারেন না।

প্রশ্ন: আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপির প্রস্তুতি কেমন বা কোন্ পর্যায়ে আছে? সবগুলো সংসদীয় আসনের জন্য নেপথ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে কি?

রশিদুজ্জামান মিল্লাত: বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এর জন্য আলাদাভাবে প্রস্তুতি নেয়ার কিছু নেই। বিএনপি এবং এর প্রত্যেকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সংগঠিত রয়েছে। নির্বাচন কমিশন যদি আগামীকাল ভোট আয়োজন করে, তাহলেও বিএনপির কোন সমস্যা হবে না। বিএনপি একটি বড় দল, প্রতিটি আসনে নির্বাচন করার মত তিন-চারজন বা এর চেয়ে বেশি যোগ্য প্রার্থী আছেন। তাই বিএনপিতে নির্বাচনী প্রস্তুতির কখনো কোন ঘাটতি থাকে না।

ঢাকা টাইমসকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

(ঢাকাটাইমস/২৪ জুন/এমএইচএল)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
সড়ক দুর্ঘটনায় আহত প্রবীণ চিকিৎসকের জীবন বাঁচালেন পুলিশ কর্মকর্তা
আইজিপির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনারের সাক্ষাৎ
আবারও সুনামগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ২০ জনকে পুশইন 
ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা