ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়: নজরুল ইসলাম খান

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, 'ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়। দেশের স্বার্থ রক্ষায় দলকে শক্তিশালী করতে হবে, দলকে মর্যাদাবান করতে হবে।'
তিনি বলেন, দেশের স্বার্থ রক্ষায় দলকে শক্তিশালী, মর্যাদাবান করতে পারলেই, আমরা ব্যক্তির কল্যাণে কাজ করতে পারব। ব্যক্তি অধিক গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, ব্যক্তিই দল গঠন করে এবং দলই রাষ্ট্রের কল্যাণ করতে পারে। সেই জন্য ব্যক্তিজীবনে যেটুকু করা প্রয়োজন, শুধু সেটুকু করা, যেটা করা অনুচিত, যেটা করা দল বা দেশের স্বার্থবিরুদ্ধ, সেটা না করা।'
মঙ্গলবার বিকেলে কাকরাইল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিলে তিনি এ সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন।
বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা ও দোয়া-মাহফিল আয়োজন করে ‘ব্যারিস্টার আবদুস সালাম স্মৃতি সংসদ।’ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
বিএনপির যে কোনো পর্যায়ের নেতার আচরণে জনগণ অসন্তুষ্ট হলে বিরুপ কিছু ঘটতে পারে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের দ্বারপ্রান্তে যেতে হবে। আমাদের যেকোনো পর্যায়ের, যেকোনো নেতার আচরণের কারণে যদি জনগণ অসন্তুষ্ট হয়, জনগণ ভীত হয়, সন্ত্রস্ত হয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত তো দল হবে, গোটা দল। আর গোটা দল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে শহিদ জিয়া অসম্মানিত হওয়া, বেগম খালেদা জিয়া অসম্মানিত হওয়া, তারেক রহমান অসম্মানিত হওয়া।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের একেবারে বিনীতভাবে অনুরোধ করব, নিজেরা তো এ কাজ (অসদাচরণ) করবেনই না, অন্য কেউ করলে সেটাকে বাধা দেবেন। আর না হলে অনভিপ্রেত সিসুয়েশন হতে পারে।' বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘যদি আমরা সালাম তালুকদারকে ভালোবাসি, তাহলে আমরা তার শিক্ষা গ্রহণ করব এবং আগামী দিনে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করব। শুধু একটা কথা মনে রাখবেন, আমার-আপনার যারা এখনো বেঁচে আছি, আমাদের দায় আছে তাদের প্রতি, যারা গুম হয়ে আছেন, যারা খুন হয়েছেন, যারা বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন।'
তিনি বলেন, ' শুধু এই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান না, গত ১৬ বছর ধরে এবং তারও আগে এবং তারও আগে মহান মুক্তিযুদ্ধে— এই সব শহিদের প্রতি আমাদের দায় আছে। কারণ, তারা শাহাদাৎ বরণ না করলে, ত্যাগ স্বীকার না করলে, আমরা আজ এখানে থাকতে পারতাম না। এই দায়বোধ থেকে আগামী দিনে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘পদের কারণে বলছি না, বয়সের কারণে বলছি। এখানে যারা তরুণ আছেন, আমারও তো এক সময় তরুণ ছিলাম। তরুণ না থেকে তো আর বৃদ্ধ হতে পারি নাই। ছিলাম তো। আমি জানি যে, আবেগ খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু, আবেগ যেন কখনো যুক্তিকে অতিক্রম করতে না পারে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিন আমাদের নেতা তারেক রহমান, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করব। প্রতিনিয়ত তারেক রহমান বক্তব্য রাখছেন। তার এই বক্তব্য থেকে আমরা কিছু শিখি নাকি? আমাদের কী করা উচিত, কী করা উচিত না। কীসে দেশের কল্যাণ হবে, কীসে দলের কল্যাণ হবে— বলছেন নিয়মিত। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বেগম খালেদা জিয়া আমাদেরকে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমাদের উচিত সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া, আমাদের উচিত সেগুলো অনুসরণ করা।’
তিনি বলেন, ‘খুব প্রভাবশালী পরিবারের মানুষ হওয়া সত্বেও অন্যায়ভাবে ৯৬ এর নির্বাচনে তাকে (সালাম তালুকদার) হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু তিনি মারামারি করতে যাননি। এর মধ্যেও আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। নাই আমাদের জন্য?
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও তিনি না আসায় সভাপতিত্ব করেন নজরুল ইসলাম খান।
সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, এস এম আব্দুল হালিম, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, নাজিমুদ্দীন আলম, সাঈদুর রহমান সোহরাব, নীলোফার চৌধুরী মণি, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
এছাড়া প্রয়াত ব্যারিস্টার আবদুস সালাম তালুকদারের সহধর্মিণী মিসেস মাহমুদা সালাম, কন্যা ব্যারিস্টার সালিমা তালুকদার আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন।
(ঢাকাটাইমস/১৯আগস্ট/জেবি)

মন্তব্য করুন