প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ: স্বপ্ন না বাস্তবতা?

সারা বাংলাদেশেই এখন ছাত্র সংসদ নিয়ে নতুন করে আলোচনা ও আমেজ তৈরি হয়েছে। ছাত্র সংসদ গুলো বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব বিস্তার করে। দেশের বড় বড় রাজনীতিবিদ ও দেশ গড়ার কারিগর, নেতৃত্বের জায়গার মানুষগুলো ছাত্র সংসদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে।
দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এটি ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও নেতৃত্ব বিকাশের একটি প্ল্যাটফর্ম হলেও, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইতিহাসে কোনোদিনই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের উদ্যোগ দেখা যায়নি, এবং ভবিষ্যতেও এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ, অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার চেয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই পরিচালিত হয়।
এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য নেতৃত্ব বা মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র তৈরি করার পরিবর্তে, ডিপার্টমেন্টভিত্তিক ক্লাব ও সংগঠনগুলোকে কেবল নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ক্লাবগুলোর প্রেসিডেন্ট-ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত শিক্ষকরা হয়ে যান—যাতে শিক্ষার্থীদের ভেতরে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশ না ঘটে। মূল উদ্দেশ্য থাকে শিক্ষার্থীদের ‘কনট্রোল’-এর মধ্যে রাখা, যেন তারা কোনোদিন নিজেদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
যদি কোনোদিন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্র সংসদের দাবি তোলে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি ইউজিসি-র অধীনস্থ পুরো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একজোট হয়ে তার বিরোধিতা করবে। তারা হয়তো "সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অথোরিটির চাঁদাবাজ ঐক্যমত কমিশন (সবেবিঅচাঐক)" গঠন করবে—যেখানে উদ্দেশ্য থাকবে শিক্ষার্থীদের আওয়াজ দমন করা। কারণ ছাত্র সংসদ হলে ব্যবসার স্বার্থে লুটপাট বন্ধ হয়ে যাবে, টিউশন ফি বাড়ানোর খেলা থেমে যাবে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার কঠিন হয়ে যাবে।
সবচেয়ে বড় কথা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভেতরে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিবর্তনের স্বপ্নও ম্লান। আজ থেকে দশ বছর আগে যেমন "এতিম মাম্মি-ড্যাডির আদরের বাচ্চা" বলে তাচ্ছিল্য করা হতো, আজও সেই স্টেরিওটাইপ অটুট। অথচ বাস্তবতা হলো—এই প্রজন্মের ভেতরেও বিপুল সম্ভাবনা ও নেতৃত্বের ক্ষমতা আছে। কিন্তু করপোরেটাইজড শিক্ষাব্যবস্থা সেটাকে দমন করে রাখছে, যেন তারা কেবল সার্টিফিকেটধারী চাকরিপ্রার্থী হয়ে থাকে, সমাজ-রাষ্ট্রের পরিবর্তনের শক্তি হয়ে উঠতে না পারে।
অতএব, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ কেবল একটি স্বপ্নই থেকে যাবে—যা বাস্তবে রূপ নিলে অনেকের ব্যবসা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির সাম্রাজ্য ভেঙে পড়বে।
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এলায়েন্স অব বাংলাদেশ (পুসাব)

মন্তব্য করুন