সড়ক নিরাপত্তা: এখনই নতুন আইন জরুরি

বাংলাদেশের রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ প্রাণ হারায় সড়ক দুর্ঘটনায়। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ৩,৬৬২ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই শিশু, নারী ও পথচারী। বিশেষ করে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা উদ্বেগজনক—সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যুর প্রায় ৪০%ই মোটরসাইকেল আরোহীদের। এই মৃত্যুর পেছনে রয়েছে একেকটি পরিবার, ভেঙে যাওয়া একেকটি স্বপ্ন, আর অপূরণীয় শূন্যতা। এই রক্তাক্ত সংখ্যাগুলো আমাদের জাতির শোক আর অসম্পূর্ণতার কষ্টের গল্প বলে।
২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন থাকলেও তা রাস্তায় সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত গতি, মাদকাসক্ত ড্রাইভার ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন—এসব যেন রাস্তায় নিত্যদিনের দৃশ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, উন্নয়নশীল দেশে সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হলো আইন প্রয়োগের দুর্বলতা।
শুধু আইন থাকা যথেষ্ট নয়, দরকার কঠোর ও বাস্তবসম্মত আইন এবং এর কঠোর বাস্তবায়ন। শাস্তির ব্যবস্থা হতে হবে কঠোর, যেন কেউ আর নিজের দায়িত্ব এড়াতে না পারে। যানবাহনের ফিটনেস নিয়মিত পরীক্ষা এবং ডিজিটাল নজরদারি সিস্টেম চালু করতে হবে।
নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত স্পিড ক্যামেরা, পয়েন্টভিত্তিক লাইসেন্স সিস্টেম, বাধ্যতামূলক বীমা ও পথচারী সুরক্ষা বিধান। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট মালিক ও অপারেটরদের ড্রাইভার নির্বাচনে আইনগত দায়িত্ব দিতে হবে।
বিশ্বের উন্নত দেশে যেমন সুইডেনের ‘ভিশন জিরো’ নীতি দুর্ঘটনা মৃত্যুর হার অর্ধেকের বেশি কমিয়েছে, আমাদের দেশেও এমন কঠোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
সড়ক নিরাপত্তা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি আমাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার। আজকের এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে চাইলে আমাদের সকলে—সরকার, আইন প্রণেতা ও জনগণ একসাথে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে, হারানো জীবন আর ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আমাদের জাতির উন্নয়নের স্বপ্নকে রক্তাক্ত করে দেবে।
লেখক: রোড সেফটি প্রোগ্রাম, ব্র্যাক

মন্তব্য করুন