শপথ না পড়ালে বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন আরও বেগবান হবে: ইশরাক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে দ্রুত শপথ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। না হলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন আরও বেগবান হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শেষবারের মতো সরকারকে বলছি- আপনারা শপথ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করুন। না হলে আগামীকাল থেকে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন। মূলত নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতেই তিনি নগরভবনে প্রবেশ করে এ কথা বলেন তিনি।
১৪ মে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে সংগঠিত হয়ে আন্দোলনে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারী, ইশরাকের সমর্থকসহ বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মাঝে ৪৮ ঘণ্টার বিরতির পর আবার কর্মসূচি চলছে।
এ সময় ইশরাক হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে বৈধতা দেওয়া হয়েছে, যারা আপিল করেছিল সেই আপিলকে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল। সেই গেজেটকে বহাল রাখা হয়েছে। আজ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে এই আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে আমরা যে শুরু থেকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশে আইনের শাসনকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে আদালতে যে মামলা করেছিলাম পূর্ণাঙ্গ আস্থা আমরা রেখেছিলাম, সেটা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতাকর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
অন্তর্বর্তী সরকার শপথ না পড়িয়ে আদালত অবমাননার শামিল কাজ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটাও প্রমাণিত হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় উপদেষ্টা আমার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে এবং নির্বাচন কমিশন বিচার ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করে আমাকে মেয়র হিসেবে যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, আমাকে শপথ পড়ানোর যে দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্বটুকু পালনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তারা যদি অনতিবিলম্বে আমার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের প্রতি, তারা আদালত অবমাননায় শামিল হচ্ছেন। অবমাননা করার মতই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে ইশরাক বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শেষবারের মত আহ্বান জানাবো, আপনারা অবিলম্বে আমার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ নিন, অন্যথায় আগামীকাল (৩০ মে) থেকে ঢাকার নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করা হবে, আরও চুড়ান্তকর হবে। অন্যথায়, জাতীয় নির্বাচনের আগে যাতে একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হয়; যার অধীনে জনগণ ভোট দিতে পারবে, যেই ভোট দানের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার গঠন করবে সেই পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করবো।
তিনি বলেন, একজন মেয়রকে শপথ গ্রহণ করাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে আগামীতে ৩০০ এমপিকে শপথ গ্রহণ করাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে জনগণের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অতএব অন্তর্বর্তী সরকারকে শেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, নিজেদের সংশোধন করুন, আদালতের রায়কে মেনে নিন, জনগণের রায়কে মেনে নিন, কার্যকর পদক্ষেপ নিন।'
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন হয়। সেসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ।
অন্যদিকে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে ওইদিনই আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনে দুই সপ্তাহ ধরে কার্যত অচল হয়ে আছে নগর ভবন।
আইনি জটিলতার কথা বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখনো ইশরাককে শপথ পড়ানোর আয়োজন করেনি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেন ইশরাক।
(ঢাকাটাইমস/২৯মে/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন