ইসরায়েলে আবার ইরানের ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ১২

দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে টানা দ্বিতীয়দিনের মতো ইরান ভয়াবহ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। রবিবারের (১৫ জুন) হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও বিবিসি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক।
মধ্য ইসরায়েলের হাইফা, তেল আবিব ও জেরুজালেমের বেশ কয়েকটি জায়গায় আগুন দেখা গেছে। কয়েকটি জায়গায় একের পর এক বিস্ফোরণও হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
ইসরায়েলের পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে দেশটির উত্তরাঞ্চলে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে চারজন নিহত হয়েছেন। জাতীয় জরুরি পরিষেবা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) এর আগে তিনজনের মৃত্যুর সংখ্যা জানিয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, "সরাসরি আঘাতে অস্ত্র পড়ে" ৪০ বছর বয়সী দুই নারী, ২০ বছর বয়সী এক নারী এবং ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী নিহত হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে অনেক বাসিন্দা আহত হয়েছেন, জরুরি উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের খুঁজতে ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
এমডিএ এবং ইসরায়েলি পুলিশের মতে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরবর্তী ঢেউয়ে, মধ্য ইসরায়েলের বাত ইয়াম শহরে তিনজন নিহত হয়েছেন। এমডিএ জানিয়েছে, একটি ভবনে আঘাত হানার সময় প্রায় ৬০ বছর বয়সী এক মহিলা নারী নিহত হয়েছেন এবং এর আশপাশের অনেক ভবনের ক্ষতি হয়েছে। এই হামলার পর মধ্য ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে ২০০ জনেরও বেশি লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাত ১১টার কিছু পরেই হামলার সতর্কতা হিসেবে হোম ফ্রন্ট কমান্ড মোবাইল ফোনে অ্যালার্ট পাঠাতে শুরু করে এবং বেশিরভাগ মানুষ তখন আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যায়।
তবে সাইরেন মূলত ইসরায়েলের উত্তর ও হাইফা এলাকায়ই বেজে ওঠে, যেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে পড়ে।
একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা একটি দুইতলা বাড়িতে সরাসরি আঘাত হানে, এতে ছয়জন প্রাণ হারান এবং আরও ১৩ জন আহত হন।
রাতে প্রথম হামলার কয়েক ঘণ্টা পর আবারও ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান। তাতে জ্বলছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শহর—তেল আবিব ও জেরুজালেম।
ইসরায়েলি রিপোর্টার হ্যাগি মাতার তার সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, “তেল আবিবে ভয়াবহ গোলাবর্ষণ হচ্ছে। একের পর এক বড় বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দিচ্ছে শহরকে।”
আলজাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিব থেকে লাইভ সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, আকাশে কয়েক ডজন মিসাইল ছুটে আসছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম কিছু মিসাইল ভূপাতিত করলেও অনেকগুলো আঘাত হানে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে।
এদিকে ইরানের হামলার প্রভাব সীমান্ত ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবেশী দেশ জর্ডানের রাজধানী আম্মানে পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের কিছু মিসাইল হয়ত সেখানে ভূপাতিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, হাইফা অঞ্চলে মিসাইল হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে। সেখানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে।
ইসরায়েলের জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থা এমডিএ নিশ্চিত করেছে, হাইফা শহরের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। গ্যালিলি অঞ্চলে একটি ভবনে হামলায় আহত হয়েছে ১৪ জন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের হামলা আগের তুলনায় অনেক বেশি ভয়াবহ। শহরজুড়ে এখনো সাইরেন বাজছে, মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। আতঙ্কে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী তেল আবিব ও জেরুজালেমের জীবনযাত্রা।
বর্তমানে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে নতুন করে বড় কোনো যুদ্ধের আশঙ্কায়।
(ঢাকাটাইমস/১৫ জুন/আরজেড)

মন্তব্য করুন