সিঙ্গাপুরে সামিট চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত

বিতর্কিত সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ও জাফর উমেদ খান টিটোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। এসময় তাদের তিনজনকে রেস্টেুরেন্টে বসে খাবার খেতে দেখা গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি পোস্ট করেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন খান সায়ের সামি।
তাতে তিনি লিখেছেন— ‘একটি ধাঁধাঃ সিঙ্গাপুরের একটি রেস্তোরাঁয় সামিট গ্রুপের আজিজ খান ও জাফর উমেদ খান ওরফে টিটোর সাথে বসে একই টেবিলে ডিনার করছেন তৃতীয় একজন ব্যক্তি। বলতে হবে, তিনি কে? তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় কি?’
পতিত শেখ হাসিনার শাসনামলে যেসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। এর নেতৃত্বে ছিল সামিট গ্রুপ। বিদ্যুৎ মাফিয়া সামিট হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। একই সঙ্গে আইসিটি ও টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য রয়েছে সামিট গ্রুপের।
উল্লেখ, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত বিদ্যুৎখাতের একজন ব্যবসায়ী। তিনি ঠিকাদারও।
ঢাকাটাইমস সূত্র জানতে পেরেছে, ঢাকাতে সামিট গ্রুপের অফিসে রশিদুজ্জামান মিল্লাতের ছেলে সাঈদ বিন জামানের (সৌরভ) যাতায়াত রয়েছে।
এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশীগঞ্জ) আসন থেকে ২০০১ সালে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কোষাধ্যক্ষ এবং আমরা বিএনপি পরিবার সেলের উপদেষ্টা। জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন মিল্লাত। তার সঙ্গে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার ভাই লতিফ খানের সঙ্গে বৈঠক ইস্যুতে নানান আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী নিবাসী (পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট) হিসেবে সিঙ্গাপুরে বসবাস করে আসছিলেন। তবে তার নাগরিকত্ব ছিল বাংলাদেশের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। দেশটির আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের কোনো সুযোগ নেই। এজন্য আজিজ খানকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে নতুন সরকার গঠনের পর বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানের ভাই, গোপালগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ফারুক খান। এখান থেকেই শুরু হয় সামিটের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার যাত্রা। তারা দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বন্দর, ফোরজি নেটওয়ার্ক, আবাসন, কৃষি, খাদ্য, পর্যটন এবং অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের মাফিয়া হয়ে ওঠে।
এদিকে সামিট গ্রুপ এবং স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। একইসঙ্গে সামিট গ্রুপের ১৯১ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
গেল সাত বছর ধরেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় আছেন বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান। মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের করা এ তালিকায় তিনি প্রথম জায়গা করে নেন ২০১৮ সালে।
২০২২ সাল থেকে তিনি ফোর্বসের বৈশ্বিক বিলিয়নেয়ার তালিকায়ও রয়েছেন। এতদিন পর্যন্ত এ তালিকায় তার নাম এসেছে একমাত্র বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে। পাশাপাশি তাকে উল্লেখ করা হয়েছে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী নিবাসী হিসেবেও।
(ঢাকা টাইমস/১৭জুন/এসএস/এসএ)

মন্তব্য করুন