গবেষণা জালিয়াতির তদন্ত অসম্পন্ন রেখেই সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি জবিতে!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে গবেষণা জালিয়াতির তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই তিন সহকারী অধ্যাপককে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ পদোন্নতির ঘটনায় সৃষ্টি হয়েছে বিতর্কের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গবেষণা জালিয়াতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত না করেই তিনজন সহকারী অধ্যাপক— মো. জসিম খান, মোছা. মর্জিনা খাতুন এবং মো. আব্দুস সালামকে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গবেষণা জালিয়াতির প্রামাণ্য দলিল বিশ্লেষণ করে একজন অধ্যাপক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানায় এবং ইউজিসি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দেয়।
তবে অভিযোগকারীর দাবি, তদন্তের পুরো সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। ফলে তদন্তে কী কী তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে বা কোনো প্রমাণ নেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মো. জসিম খানের ‘বাংলার বাউল দর্শন’ শীর্ষক প্রবন্ধের ৯৩ শতাংশ কনটেন্ট অন্যদের লেখা থেকে হুবহু নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি স্বীকারও করেছেন তিনি। প্রবন্ধটির বিভিন্ন অংশ কোথা থেকে নকল করা হয়েছে, তার পূর্ণ বিশ্লেষণ ও উৎস তালিকা ঢাকাটাইমস-এর হাতে রয়েছে।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম এই অভিযোগের ভিত্তিতে পদোন্নতি না দিয়ে ২০২৩ সালের ৮৯তম সিন্ডিকেট সভায় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের সময়ে রাজনৈতিক পরিচয়সম্পন্ন শিক্ষকরা তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করছে নিয়ম মেনেই তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট সভায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুমোদন ও আলাদা পরিপত্র জারি না করে সরাসরি পদোন্নতির চিঠি প্রদান করায় শিক্ষকদের একাংশ এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তদন্তাধীন অবস্থাতেই পদোন্নতি পাওয়া ড. মর্জিনা খাতুনের বিরুদ্ধে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও গবেষণা জালিয়াতির আলাদা তদন্ত চলছে।
অন্যদিকে, মো. আব্দুস সালামের একটি প্রবন্ধে ৩০ শতাংশের নিচে নকল পাওয়া গেছে জানিয়ে অভিযোগ খারিজ করা হলেও একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘নকলের পরিমাণ কম হলেও যদি সূত্র না থাকে, সেটি মূল্যহীন। গবেষণার মৌলিকতার প্রশ্নে ন্যূনতম স্বচ্ছতাও না থাকলে সেটি পদোন্নতির যোগ্য হতে পারে না।’
এ বিষয়ে সাবেক একজন ইউজিসি সদস্যের মন্তব্য, ‘সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাজারিজম চেকার সফটওয়্যার দিচ্ছে। যদি তা বাস্তবে ব্যবহার না হয়, তবে এসব বরাদ্দের কোনো মানেই থাকে না।’
এ ধরনের ঘটনার যথাযথ তদন্ত না হলে গবেষণা জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব নয়। স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার চর্চা ছাড়া উচ্চশিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রতাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ।
গবেষণায় জালিয়াতির অভিযোগ ওঠা তিন শিক্ষকের পদোন্নতি প্রসঙ্গে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে গত ৩০ মে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সব নির্দেশনা ও বিধি অনুসারে যা আছে সেটাই করা হবে। যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থেকে থাকে, তবে তা নির্ধারিত বিধিমালা অনুযায়ী বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৭জুন/এসএস/মোআ)

মন্তব্য করুন