৬ বছরেও বাস পায়নি জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা বহুদিন ধরেই অপ্রতুল। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও গত ৬ বছরে বাড়েনি নিজস্ব বাসের সংখ্যা। প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। বাসে ঠাঁই না পেয়ে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে, আবার কেউ ঝুঁকি নিয়ে দরজার পাশে ঝুলে যাতায়াত করেন। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে শারীরিক কষ্ট, তেমনি বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন সংকট দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানের দায়িত্বকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১১টি বাস ও ২টি মাইক্রোবাস ক্রয় করে। এরপর আরও তিনজন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তী ছয়টি অর্থবছরে আর কোনো নতুন বাস যুক্ত হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নির্ধারিত রুট রয়েছে মোট ১৬টি। এসব রুটে শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য মোট বাসের সংখ্যা ৫২টি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস ১৬টি, আর বিআরটিসি ভাড়াকৃত বাস রয়েছে ১১টি। তবে মোট ৫২টি বাসের মধ্যে বর্তমানে ৩টি অচল অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে অধিকাংশ বাসেই নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ও প্রাথমিক চিকিৎসা (ফার্স্ট এইড) কিট, যা যেকোনো দুর্ঘটনা বা জরুরি অবস্থায় বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা কয়েক হাজার হলেও যানবাহনের এই অপ্রতুলতা দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা তৈরি করে আসছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সকাল ও বিকালের ব্যস্ত সময়ে বাসে ওঠার জায়গায় দীর্ঘ সারি পড়ে যায়। একেকটি বাসে উপচে পড়া ভিড়, গরমে হাঁসফাঁস করা, সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে বা ঝুঁকি নিয়ে দরজায় ঝুলে যাতায়াত করা যেন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমরা একাধিকবার প্রশাসনের কাছে নতুন বাসের দাবি জানিয়েছি। সর্বশেষ চক্রাকার বাস চালু হয়েছে আমাদের ধারাবাহিক দাবির ফলেই। একটি হলবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন নিঃসন্দেহে অপরিহার্য। যেহেতু বর্তমান প্রশাসন অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, আমরা চাই তারা বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে দ্রুত নতুন বাস চালুর উদ্যোগ নেবে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে এই যৌক্তিক দাবির প্রতি সম্মান দেখানোই হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল মুরাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন যাতায়াতে দীর্ঘদিন ধরেই বাস সংকট বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে হলবিহীন একটি ক্যাম্পাসে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে যখন পরিবহন যথেষ্ট না থাকে। দুপুরের যে চক্রাকার বাসদুটো চলে, আমি দেখেছি সেখানে শিক্ষার্থীরা ঝুলে ঝুলে যাত্রা করে। অন্যান্য বাসগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি তারা যেন পরিবহন বৃদ্ধি করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরিবহন প্রশাসক আতিক বলেন, আমাদের দুইটা বাস সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাসগুলো নিম্নমানের হওয়ায় তা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। আরেকটা নষ্ট বাস ঠিক করালে হয়তো চালানো যেতে পারে। বাজেট থেকে গাড়ি কেনার কোনো আশ্বাস আমরা পাইনি। তবে নতুন গাড়ি যুক্ত করার ব্যাপারে আমরা কিছু জায়গায় কথা বলছি।

(ঢাকা টাইমস/১৭জুন/এসএ)