স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই: সালাউদ্দিন আহমেদ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ জুন ২০২৫, ২১:২৮
অ- অ+

স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ করতে হলে দেশে ‘স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নের বিএনপির অবস্থান কি তা তুলে ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে এখানেই কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না।

নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে এবং সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার। এটাকে আমরা আইনের ভাষায় বলি একটা সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরির যেটা মূল কথা যে, হারমোনিয়াস কোআপরেশন ইন বিটুইন অল দ্যা অর্গানস অব দ্যা স্টেট শুড বি স্টাবলিসড। তাহলে পরে কোনো অর্গান কোনো অর্গানের ওপরে ওভার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, একটা আরেকটা ব্যালেন্সিং পাওয়ার হিসেবে পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে।

‘জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন প্রসঙ্গে’

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আপনারা এখানে সংস্কার নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু হতাশা কেউ ব্যক্ত করেন নাই। আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ আলোচনা চলছে। তার চাইতে বেশি হয়ত খানা-পিনা চলছে।

সময় অনেক লাগছে। তবে আমি বিশ্বাস করি আমরা একটা জায়গায় ঐক্যতে আসতে পারব। আমরা ঐক্যতে আসার জন্য আমাদের দলের পক্ষ থেকে কি কি বিবেচনায় নিয়ে তা আপনারা লক্ষ্য করেছেন। আমরা বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে বসতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেয়া হলো, এখানে ফ্যাসিবাদের উপত্তি বন্ধ করে দেয়া হলো।

তিনি বলেন, তারপর কি করা হবে? রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই গণতন্ত্র রক্ষাকবজ হিসেবে শক্তিশালীর ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হবে। তার জন্য কি করতে হবে? এক নম্বর বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা (বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) যদি আমরা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটা গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হবে। দুই নম্বর, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তিন নম্বর নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়।

২০১২ সালের ১ জুন বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মাহমুদুর রহমানের নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য যাত্রা শুরু করে।

‘কোনো বিভাগের অধিকার খর্ব নয়’

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে সংস্কার এনেছি… সবাই ঐক্যমত্য হয়েছে। এখন আমরা একটা প্রস্তাব আরও দিয়েছি যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সদস্যদের মধ্যে গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দেবে সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ আমরা ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করলাম। সেটা কী আমাদের বড় ধরণের অর্জন নয়।

আমরা যদি প্রতিক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে সীমাবদ্ধ করি আইনিভাবে-সাংবিধানিকভাবে তাহলে কিন্তু নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না, সরকার পরিচালনা করা যাবে না। আর যদি যে যার জায়গায় নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইনসভা তার তার সীমাবদ্ধের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য থাকে সেই ব্যবস্থাটা আমরা গ্রহণ করি। তাহলে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে। আমরা সেই সংস্কার চাই যে, সংস্কারের মধ্যে কোনো বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা সেই সংস্কার চাই, যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মিত হবে, সেই সংস্কার আমরা চাই যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার হবে, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে এবং যার ফলোশ্রুতিতে আমরা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারব। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সেই সমাজ ব্যবস্থা আমরা কামনা করি।

‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আনতে হবে’

সালাহউদ্দিন বলেন, এখন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রচেষ্টার মধ্যে যে, নির্বাহী বিভাগকে যত বেশি নিয়ন্ত্রিত করা যায়। সেটা নির্বাহী বিভাগকে অতীতে একজন স্বৈরাচার হয়েছিল সেজন্য নির্বাহী বিভাগকে আমরা বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। একজন সংসদীয় পদ্ধতিতে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো সেজন্য আমরা আইনসভাকে বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না।

আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং একটা হারমোনিয়াস কোপারেশন, একটা মধুর সম্পর্ক, একটা পাহারাদার সৃষ্টি করা, সেইফ গার্ড সৃষ্টি করার জন্য সকল অর্গানগুলোকে সেইভাবে শক্তিশালী করা। সকল গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীর ভিত্তির উপরে দাঁড় করানো যাতে করে তারা নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তাহলে আর কোনোদিন এদেশে স্বৈরাচারের উপত্তি হবে না। আমরা ক্রমান্বয়ে সেদিকে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে কিন্তু রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে। এবং সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার আমরা আইনের ভাষায় যেটা বলি সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরির যেটা মূল কথা যে, হারমোনিয়াস কোআপরেশন ইন বিটুইন অল দ্যা অর্গানস অব দ্যা স্টেট শুড বি স্টাবলিসড। তাহলে পরে কোনো অর্গান কোনো অর্গানের ওপরে ওভার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, একটা আরেকটা ব্যালেন্সিং পাওয়ার হিসেবে পাহারাদার হিসেবে কাজ করে সেই কথাগুলো আমরা অবিরত বলে যাচ্ছি।

‘চোখ-কান খোলা রাখুন’

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান বলেন, আমি শুধু আপনাদের সবাইকে বলব, চোখ-কান খোলা রাখবেন খরগোসের মতো কানগুলো যাতে সব সময় সতর্ক থাকে। চোখ খোলা থাকবে কেনো? দেখেন সত্যি সত্যি কি হচ্ছে?

(জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে) মূল নীতি যে বির্তক হবে সেখানে একটা প্রবণতাই হবে ধর্মকে বিশ্বাস করা, ধর্ম মানেন কিনা, ধর্মের কথা থাকবে কিনা, সংবিধানে এটা যুক্ত হবে কিনা? আমরা অনেকগুলো বছর পার করেছি, ধর্মে বিশ্বাস করেছি কিন্তু সংবিধানে লিখেনি। কেনো লিখেনি আমার অন্তরে যেটা আছে সেটা আমার। আমি মুসলমান আমি এই ধর্মে বিশ্বাস করি, আমি তার কথা বলছি। কিন্তু এই রাষ্ট্রে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান তারাও তো আছে। তারা তো আমার এই বক্তব্যের সাথে একমত নয়।

আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

(ঢাকা টাইমস/২৬জুন/জেবি/এসএ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেন একটা মাফিয়া সংগঠন!
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর দিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন শফিকুল আলম
এসআই সুকান্তকে কারাগারে প্রেরণ 
চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর, আসছে ৩ দিনের ছুটি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা