ফেনীতে কৃষকের মনে কষ্টের মেঘ
গত অর্থবছরে ফেনীতে আমনের আবাদ হয়েছিল ৬৬ হাজার ৭৫২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল দুই লাখ নয় হাজার ২০৭ মেট্রিক টন চাল। সেখানে চলতি অর্থবছরে আবাদ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৬৪ হেক্টর জমিতে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা কৃষি বিভাগ।
গত আগস্টের ভয়াবহ বন্যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে চলতি আমন ধানের মৌসুমে। অর্জিত হয়নি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও। জমি খালি পড়ে থাকায় দুশ্চিন্তায় প্রান্তিক কৃষক। এ সময়ে ঘরে তোলার কথা সোনালি ধান। তার বদলে তাদের মনে কষ্টের মেঘ।
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে চলতি আমন মৌসুমে মাত্র ১৭৩ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। গত আমন মৌসুমে (২০২৩ এর ১৫ জুন থেকে ১৫ অক্টোবর) আবাদ হয়েছিল এক হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছিল ছয় হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান। এর সিকিভাগ উৎপাদনও হবে না এবার। কারণ অনাবাদি রয়েছে এক হাজার ৮৭ হেক্টর জমি।
ফসলের মাঠের এমন চিত্র সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, দাগনভূঞাসহ জেলার সব উপজেলায়। ঘরে ধান তোলার কথা থাকলেও কৃষকের মনে হতাশা। ক্ষতি পোষাতে চাইছেন সরকারি সহায়তা।
ফেনীতে গত আগস্টের ভয়াবহ বন্যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে চলতি আমন ধানের মৌসুমে। অর্জিত হয়নি আবাদ লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও। জমি খালি পড়ে থাকায় দুশ্চিন্তায় প্রান্তিক কৃষক। বন্যায় ফেনীর কৃষিখাতে ৯০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। এ আমন মৌসুমে তা ফুটে উঠছে। অর্ধেকের বেশি জমি খালি পড়ে আছে।
পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক কবির আহম্মদ জানান, প্রতি বছর ২০০ শতক জমিতে আমন ধানের আবাদ করেন তিনি। বন্যার কারণে বেশির ভাগ জমিই খালি রয়েছে। ঘরের খোরাকি কীভাবে মেটাবে সেই চিন্তা তার মাথায়।
পরশুরাম উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মতিউর রহমান বলেন, ধান আবাদের যেটুকু কৃষকের জমি ছিল তার পুরোটাতে এখন বালু আর বালু। বন্যার প্রভাবে ফসলি জমি থেকে ঘরবসতি, পুকুর- সবখানে বালু। তাই অনেক কৃষক আমন আবাদ করতে পারেননি।
সানরাইজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক কামাল উদ্দিন জানান, এই সময়ে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আমনের ধানগাছ থাকার কথা, ধানের ডগায় শিশিরবিন্দু কুষকের চোখে চকচক করত, বছরের এ সময়ে ঘরে ফসল ওঠার কথা। সেখানে এখন কৃষকের মনে কষ্টের মেঘ। সারা বছরের খাদ্যের চিন্তায় তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।
এদিকে বন্যার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও তার প্রভাব এখনো দৃশ্যমান ফসলের মাঠে। আর্মিওয়ার্মসহ নামে-বেনামে পোকায় যেমন নষ্ট হচ্ছে ধান, তেমনি নষ্ট হচ্ছে সবজিসহ সব ধরনের ফুল-ফসল। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে, পোকা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।
সোনাগাজীর কৃষক এসহাক আহমেদ বলেন, বন্যার পর আরেক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পোকা। নাম না-জানা এসব পোকা খেয়ে ফেলছে ধান গাছের চারা।
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার প্রণব চন্দ্র মজুমদার বলেন, বন্যার কারণে মাঠের অনেক জমির ধান নষ্ট হয়েছে। আবাদি জমিগুলো খালি পড়ে রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ সার্বিক সহায়তা নিয়ে মাঠে রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, বীজ ও প্রণোদনাসহ সার্বিক সহায়তা নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আছে কৃষি বিভাগ।
(ঢাকাটাইমস/৪ডিসেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন