অবশেষে ভাঙা হলো মানিকগঞ্জ শহরের খালের বাঁধ
মাছ চাষের জন্য পানি আটকে রাখা মানিকগঞ্জ শহরের সেই খালের বাঁধ অবশেষে ভেঙে দিয়েছে সদর থানা পুলিশ। এতে শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত মরা খালে পৌরসভার উদ্যোগে মাছ চাষ প্রকল্প ভেস্তে গেল। এই প্রকল্পে শুধু বাঁধের জন্য বরাদ্দ সাড়ে সাত লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হলো পৌরসভার। আর অন্যান্য ক্ষতি তো আছেই।
গত ৪ জানুয়ারি ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম নিউজ পোর্টালে ‘মানিকগঞ্জে খাল নিয়ে পৌরসভার উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে জনস্বার্থে পুলিশ আজ রবিবার বাঁধটি ভেঙে দিয়ে পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি অপসারণ করে।
বাঁধটি ভেঙে দেওয়ায় স্থানীয়রা পুলিশকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন পৌরসভার উদ্যোগে মাছ চাষ প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত কী হয় সেটা পুলিশ প্রশাসনের দেখার উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ বলছে, শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খালে পঁচা পানি আটকে রাখায় চারপাশ পঁচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেকেই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিক্তিতে তারা বাঁধটি ভেঙে দিয়ে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি অপসারণ করেছেন।
রবিবার দুপরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর থানার উপ-পরিদর্শক মাসুদ ও মুরাদ ১০ থেকে ১২ জন পুলিশ ও তিনজন শ্রমিক নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার শিকদারের বাসার সামনে অবস্থিত বাঁধ এলাকায় যান। এরপর ভাড়া করে আনা শ্রমিকরা আধা ঘণ্টা সময়ের মধ্যে তারা পুরো বাঁধ কেটে দেন। বাঁধের দুই পাশের পশ্চিম পাশ কেটে দেওয়ায় খালে আটকে রাখা পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি বের হয়ে যায়।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জিয়াউল হাসান পাখি,তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই খালে কি মাছ চাষ করা যায়? পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি আটকে রাখায় বাড়িতে থাকা যায় না। তিনি বলেন,খালের পঁচা পানির দুর্গন্ধে বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। পুলিশ বাঁধ ভেঙে দিচ্ছে আমরা খুশি। একই কথা বলেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নোয়াব আলী ও সেউতার বাসিন্দা জিয়া উদ্দিন আহম্মেদ কবীর।’
তবে বাঁধ এলাকার বাসিন্দা শহিদ তিতুমীর একাডেমী স্কুলের সহকারী শিক্ষক আলমগীর হোসেন ঢাকাটাইমকে বলেন, ‘পৌরসভার মেয়র খালটি বর্জ্যমুক্ত ও বারোমাস পানি সংরক্ষণে রাখতে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটা শেষ পর্যন্ত কী হয় পুলিশ প্রশাসনের দেখার প্রয়োজন ছিল। পুলিশ বাঁধ ভেঙে দেওয়ায় পৌরসভার উদ্দেশ্যে ভেস্তে গেল।’ স্কুল শিক্ষক আলমগীর হোসেনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজাদ হোসেন খানও।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র গাজী কামরুল হুদা সেলিম ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ময়লা আর্বজনায় ভরা এই খালটি মূলত বর্জ্যমুক্ত ও বারোমাস পরিষ্কার পানি রাখতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হওয়ার আগেই পুলিশ বাঁধটি ভেঙে দিল। তিনি বলেন,আমার উদ্যোগের আংশিক সফল করতে পুলিশ সুপার মাহফুজুরর রহমানের কাছে সাতদিন সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি স্থানীয়দের সমস্যার কথা বলে আমাকে কোনো সময় না দিয়ে তার লোক দিয়ে বাঁধটি ভেঙে দেন। তিনি দাবি করেন, বাঁধটি ভেঙে দেওয়ায় তার পৌরসভার সাত থেকে আট লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন,‘খালের মধ্যে পঁচা পানি আটকে রাখায় চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে স্থানীয়দের অভিযোগের ভিক্তিতে বাঁধ ভেঙে দিয়ে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত পানি অপসারণ করা হয়েছে।’
পৌরসভার মেয়র তার উদ্যোগের আংশিক সফল করতে আপনার কাছে সাতদিনের সময় চেয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘খালের পঁচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সাতদিনে জনস্বাস্থের যে ক্ষতি হবে তার দায়িত্ব কি মেয়র সাহেব নেবেন?’
২০১৬ সালের শেষের দিকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ টাউন লেবেল কো-অর্ডিনেশন কমিটির সঙ্গে সভা করে খালটি পরিষ্কার,পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব করার লক্ষ্যে খালটি পরিষ্কার করে মাছ চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে পৌরসভার নিজ অর্থায়নে খালের দুই প্রান্তে (সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার শিকদারের বাসা থেকে বাজার ব্রিজ পর্যন্ত) এক হাজার দইশ মিটার অস্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়। এরপর এই বাঁধের মাঝ খানের বিভিন্ন স্থানে গভীর নলকূপ বসানো হয়।
ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/প্রতিনিধি/জেডএ)
মন্তব্য করুন