মানিকগঞ্জে সরকারি স্কুলের জায়গা দখল করে মার্কেট
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দখল করে দোকান বানানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। তারা আরও জায়গা দখল করে দোকান তোলার কাজ শুরু করেছে।
উপজেলার গালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও তাদের পাত্তা দিচ্ছে না দখলদাররা। মাঠটি দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ধামশ্বর ইউনিয়নের নিরালী এলাকার ওই স্কুল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বিদ্যালয়সংলগ্ন মাঠের বেশ কিছু জায়গায় আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নতুন করে মাঠের আরও বেশ কিছু জায়গা দখল করে আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯৩৯ সালে সেখানে এর প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ সালে স্থানীয় দানশীল ব্যক্তি নছের উদ্দিন বিদ্যালয়টিসহ এর দক্ষিণ পাশে মাঠ মিলে ৯০ শতক জায়গা দান করেন। এর পর থেকে মাঠটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের শিশু-কিশোর, তরুণদের খেলাধুলার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। মাঠের পাশেই নিরালি বাজার। এ ছাড়া প্রতি সোমবার ওই মাঠে বসে হাট। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করেন এই হাটে।
জমিদাতা মৃত নছের উদ্দিনের কোনো সন্তান ছিল না। তবে দুই বছর আগে তার ওয়ারিশরা (সম্পর্কে নাতি) সেন্টু মিয়া, ঝন্টু মিয়া ও ভাতিজা মজিবর রহমান বিদ্যালয়সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে আন্ধিবাড়ি মৌজায় মাঠের ১০ শতক জমি দখল করে সেখানে আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেন। মজিবর রহমান ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি।
ওই দোকানঘরের সামনে দিয়ে মাঠের জায়গায় নির্মাাণ করা হয়েছে পাকা রাস্তা। এতে মাঠটি সংকুচিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি নিরালি মৌজায় ওই মাঠের ১৪ শতক জমিতে মাটি ফেলে ভরাট করেন স্থানীয় জাহাঙ্গীর হোসেন ও তার ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি ফায়জুল ইসলাম ওরফে নাজমুল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের জায়গা দখল হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেখানে দৌলতপুর থানার কয়েকজন পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
স্থানীয় শাইলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা চিকিৎসক আবু সুফিয়ান ও মাঠের পাশের স্টেশনারি দোকানদার মো. নাজিমুদ্দিন বলেন, কেবল এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, আশপাশের চার-পাঁচটি গ্রামের কিশোর ও তরুণরা এই মাঠে প্রতিদিন খেলাধুলা করে। এ ছাড়া প্রায় চার যুগের বেশি সময় ধরে এই মাঠে হাট বসে। এই মাঠ দখলমুক্ত করতে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, বিদ্যালয়সহ মাঠের জায়গা মোট ৯০ শতক। এই জায়গা বিদ্যালয়ের নামে রেকর্ডিয় সম্পত্তি। তবে বর্তমানে ৩৩ শতক জমি বিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। জমিদাতার ওয়ারিশরা মাঠের ১০ শতক জায়গা আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া মাঠের আরও ১৪ শতক জায়গায় মাটি ফেলে ভরাট করেছেন। সেখানেও আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, দিন দিন মাঠটি দখল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বাধা দিলেও কাজ হয়নি। বিদ্যালয়ের মাঠ দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের কাছে তিনি লিখিতভাবে অনুরোধ করবেন বলে জানান।
তবে জাহাঙ্গীর ও নাজমুল জানান, পৈতৃক সূত্রে নিরালি মৌজার ওই ১৪ শতক জমির মালিক তারা। এ কারণে মাটি ফেলে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করা হবে। তারা আরও বলেন, ‘আন্ধিবাড়ি মৌজায় মাঠের ১০ শতক জমি দখল করে মজিবর অবৈধভাবে আধাপাকা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। তাহলে আমরা কেন আমাদের পৈতৃক জায়গায় দখল নিতে পারব না।’
ঝন্টু মিয়া, সেন্টু মিয়া ও মজিবর রহমানদের দাবি, তাদের দখল নেয়া ১০ শতক জায়গা নছের উদ্দিন দান করেননি। ওয়ারিশসূত্রে ওই জায়গার মালিক তারা। এ কারণে ওই জায়গায় তারা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক বলেন, প্রায় ৬০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাঠটি স্থানীয় শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সবচেয়ে নিয়ামক। তাদের খেলাধুলার স্বার্থে মাঠটি দখলমুক্ত হোক তিনিও তা চান।
জেলা প্রশাসক রাশিদা ফেরদৌস বলেন, ব্যক্তির সম্পত্তি হলেও কোথাও কোনো খেলার মাঠ দখল করা যাবে না। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিশুদের শারীরিক ও মননশীলতার বিকাশে মাঠ অবমুক্ত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। খেলার মাঠটি দখলমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
(ঢাকাটাইমস/১২ফেব্রুয়ারি/মোআ)
মন্তব্য করুন