এবার মিলল ‘সাত বছরের মুক্তিযোদ্ধা’

সৈয়দ মাহ্ফুজ রহমান, পিরোজপুর
 | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:২৭

মুক্তিযুদ্ধের সময় আবু হানিফ ছিলেন সাত বছরের শিশু। বর্তমানে তিনি গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। বয়স জালিয়াতি করে সরকারি সব সুযোগ সুবিধাসহ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তুলছেন দীর্ঘদিন থেকে। শুধু মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিই নয়, ১৭ বছর বয়সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও হয়েছেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া গ্রামের এই বাসিন্দা । এ নিয়ে এলাকায় তোলাপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

এসএসসির সনদ অনুযায়ী আবু হানিফের জন্ম তারিখ ১৯৬৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি ১৯৮১ সালে বাগেরহাট জেলার শরনখোলা উপজেলার জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মানবিক শাখায় (তৃতীয় বিভাগ) এসএসসি পাস করেন। যার রোলঃ রায়েন্দা-৫৩৫, সনদ নং-০৬৪৪৮, নিবন্ধন নং-৪২৪৯১/১৯৭৭-৭৮।

এই সনদ দিয়ে ১৯৮১ সালের ১ জুলাই সহকারি শিক্ষক পদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে (রেজিস্টার) যোগদান করেন। চাকরিতে যোগদানের সময় তার বয়স (জন্ম তারিখ অনুযায়ী) ১৭ বছর ৪ মাস ২৫ দিন। এছাড়া ২০০৮ সালে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিপিএ ১.৭৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে আবু হানিফ উপজেলার উত্তর বালিপাড়া রেজিস্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

মুক্তিযুদ্ধের সময় একজন মুক্তিযোদ্ধার নূন্যতম ১৩ বছর বয়স থাকার নিয়ম থাকলেও বয়স জালিয়াতি করেন আবু হানিফ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স প্রমাণের জন্য কয়েক বছর আগে একাডেমিক সনদ (এএসসি পাশের) চাইলে আবু হানিফ প্রকৃত বয়স আড়াল করতে এসএসসি সনদের পরিবর্তে অষ্টম শ্রেণির সনদ জমা দেয় মন্ত্রণালয়ে। অষ্টম শ্রেণির সনদে ১৩ বছর পূর্ণ করে জমা দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক সনদ নেন। এই সনদ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার সন্তানরাও সরকারি চাকরি নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আবু হানিফের মুক্তিযোদ্ধা আইডি নং- ০১০৬০৫০০৬৪, গেজেট নং-২৪৬৮ এবং মুক্তিবার্তা নং-০৬০৫০৩০০২৪। আবু হানিফের মুক্তিযোদ্ধা ডাটাবেইজ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশার ডাটাবেইজের বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে গড়মিল পাওয়া গেছে। যদি সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস হয় তাহলে কী করে তিনি এই সনদে সহকারি শিক্ষক পদে চাকরি নিলেন বা পেলেন এমন প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকসহ সচেতন মহল।

বালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় আবু হানিফ শিশু ছিলেন। শিশু বয়সে কীভাবে তিনি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করলেন তা বোধগম্য নয়। এলাকায় তিনি প্রভাবশালী এবং প্রভাব বিস্তার করে চলেন বলে স্থানীয়রা তার ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, ঘটনা যদি সত্যি হয় তবে তার শিক্ষাকতা ও মুক্তিযোদ্ধা দুটোই ভুয়া। জালিয়াতির অভিযোগে আবু হানিফের বিচার হওয়া উচিৎ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ মজুমদার বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষকের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে কাগজপত্র যাচাই করে দেখব।’

ইন্দুরকানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বেলায়েত হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আবু হানিফের নাম রয়েছে। তবে তার জন্ম তারিখে বয়সের কোনো হেরফের আছে কি না আমার জানা নেই। যাচাই করে দেখিনি।’

পিরোজপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সমীর কুমার বাচ্চু ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধার বয়স নির্ধারণ করে দিয়েছে। ১৩ বছরের কম হলে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। এর কম যদি কারো বয়স হয় কিংবা কেউ যদি জালিয়াতি করে বয়স বাড়ায় সেটা প্রমাণ হলে তালিকা থেকে তিনি বাদ পড়বেন।’

ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘কোনো মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এরকম কোনো তথ্য গোপনের অভিযোগ পেলে কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিষয়ে আবু হানিফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।

(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/প্রতিনিধি/জেডএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :