মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল
- বেশিরভাগ দোকানেই বিক্রি হচ্ছে পুরোনো দামে
- তীর কোম্পানির তেল বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে
ঈদের পরপরই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে চার টাকা বাড়িয়ে এবং খোলা তেল দুই টাকা কমিয়েছে সরকার। এছাড়া সুপার পাম তেলের দামও নির্ধারণ করেছে। যদিও দিন দুয়েক আগেই মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী ‘সুযোগ নেই’ বলেছিলেন। কিন্তু দিন দুয়েকের ব্যবধানেই বাড়ল দাম। তবে বিক্রেতাদের মতে খাবার হোটেল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় এখন তেলের চাহিদা কম। ফলে নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে দাম বাড়লেও রাজধানীর বাজারগুলোতে নেই প্রভাব। কারণ বেশিরভাগ দোকানেই তেলের মজুত রয়েছে । ফলে পুরোনো দামেই বিক্রি হচ্ছে বোতলজাত এবং খোলা তেল। তবে তেলের মজুত ফুরিয়ে গেলেই নতুন তেল কিনতে হবে। মজুত ফুরালেই বাড়তি দামে বিক্রি হবে সয়াবিন তেল।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে বোতলজাত প্রতি লিটার তেলের দাম ১৬৩ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াল সর্বোচ্চ ১৬৭ টাকা। এছাড়া ৫ লিটার বোতলজাত তেলের দাম ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াল ৮১৮ টাকা। তবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে কমে দাঁড়াল ১৪৭ টাকা। এছাড়াও পাম তেলের দাম আগে নির্ধারণ করা ছিল না। এখন সুপার পাম তেল প্রতি লিটারের (খোলা) দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানান, দাম বাড়ার নতুন এ সিদ্ধান্ত মিল গেট (পাইকারি বিক্রেতারা যে দামে কিনবেন) থেকে কার্যকর হবে। তবে বাজারে মজুত করা আগের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সমন্বিত ভোজ্যতেল আগের দামেই বিক্রি হবে।
শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মগবাজার চারুলতা মার্কেটসহ মুদির দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত তেলের দাম নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতি লিটারে ১৬৩ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াল সর্বোচ্চ ১৬৭ টাকা এবং ৫ লিটার বোতলজাত তেলের দাম ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে ৮১৮ টাকা হলেও এখনো বাজারে মজুত করা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। কারণ এখনো তীর কোম্পানি ছাড়া নতুন কোনো তেল আসেনি।
এদিকে দাম বাড়ার নতুন এ সিদ্ধান্ত মিল গেট (পাইকারি বিক্রেতারা যে দামে কিনবেন) শুক্রবার থেকে কার্যকর হলেও বাজারে মজুত করা আগের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সমন্বিত ভোজ্যতেল আগের দামেই বিক্রি হবে বলে জানিয়েছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
কারওয়ান বাজারের তুহিন জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. শাহাদাত ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘নতুন তেল এখনো উঠাইনি। আগের দামেই বিক্রি করছি। এক লিটার তেলের দাম ১৬৩ থাকলেও বিক্রি করি ১৬০ টাকায়।’
এদিকে কারওয়ান বাজার ঘুরে নতুন দামের বোতলজাত তেল পাওয়া গেছে মেসার্স মো. মিলু স্টোর নামক একটি দোকানে।
বাজারের দোতলায় মেসার্স মো. মিলু স্টোরের ফ্রেশ ও রুপচাঁদার তেলের ডিলার বিপ্লব চন্দ্র পাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ এখনো ফ্রেশ এবং রুপচাঁদার নতুন তেল আসেনি। তবে সকালে তীর কোম্পানির ২০ কেজির তেলের কার্টন এসেছে।’
তীর কোম্পানির বোতলজাত পাঁচ লিটার তেলের গায়ের মূল্য ৮১৮ টাকা লেখা দেখা গেছে। পূর্বের তীরের পাঁচ লিটারের একটি বোতলজাত তেলের গায়ের মূল্য ছিল ৮০০ টাকা।
তবে কারওয়ান বাজারে পাঁচ লিটারের নতুন বোতল পাওয়া গেলেও এখনো এক লিটারের নতুন কোনো বোতলজাত তেল পাওয়া যায়নি।
মেসার্স মো. মিলু স্টোরের বিপ্লব চন্দ্র পাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বেকারি আর হোটেলওয়ালারা তেল বেশি কেনেন। রবিবার স্কুল-কলেজ খুলবে। মানুষ ঢাকায় আসবে। তখন হয়তো বেচাকেনা বাড়তে পারে।’
এছাড়া মাসুদ জেনারেল স্টোরের পাইকারি বিক্রেতা মো. মাসুদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ঈদের পর কাস্টমার কম। তেলের দাম বাড়ছে শুনলাম। কিন্তু স্টকে তেল আছে। তাই সেগুলোই বিক্রি করতেছি। কাস্টমার বাড়লে নতুন তেল উঠানোর চিন্তা আছে।’
বোতলজাত তেলের দাম বাড়লেও খোলা তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। ফলে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ টাকা। কারওয়ান বাজারে খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪৭ থেকে ১৪৮ টাকায়। তবে খোলা তেলের দাম কমেছে কি না সে সম্পর্কে বিক্রেতারা জানেন না। কারওয়ান বাজারের সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা নিজামুদ্দিন দিপু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খোলা তেল বিক্রি করি ১৪৮ টাকায়। দাম কমেছে শুনিনি।’
মেসার্স মো. মিলু স্টোরের ফ্রেশ ও রুপচাঁদার তেলের ডিলার বিপ্লব চন্দ্র পাল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খোলা তেল এখনো উঠাইনি। কারণ খাবার হোটেলগুলোতে বেশি খোলা তেল বিক্রি হয়।’
এদিকে সুপার পাম তেলের দামও এবার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন সুপার পাম তেল প্রতি লিটারের (খোলা) দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজারের পাম তেল প্রতি লিটারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।
এদিকে মগবাজার চারুলতা মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত নতুন তেল এখনো আসেনি। ফলে মজুত করা আগের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য সমন্বিত ভোজ্যতেল আগের দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এই মার্কেটের কিশোরগঞ্জ স্টোরের দোকানি মো. রুকন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনো আগের তেল রয়ে গেছে অনেক। সেগুলা আগের দামেই বিক্রি করি। গায়ের রেট থেকেও একটু কম দামে বিক্রি করতে হয় কাস্টমার ধরে রাখার জন্য। নতুন তেল এখনো আনিনি।’
এছাড়া মগবাজারের মুদির দোকানগুলোতেও মজুত করা পুরোনো বোতলজাত তেলই বিক্রি হচ্ছে।
মগবাজারের মাদারীপুর মসলা স্টোরের দোকানি জানান, ‘আগের তেলগুলোই আছে এখনো। সেগুলোই বিক্রি করছি। এখনো গ্রাম থেকে কাস্টমার পৌঁছায়নি।’
এছাড়া এই এলাকার মেসার্স জনসেবা জেনারেল স্টোর এন্ড টেলিকমের দোকানিও ক্রেতাদের ঢাকায় ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন।
(ঢাকাটাইমস/২০এপ্রিল/টিএ/কেএ)